Alapon

অমুসলিমদের পণ্যবর্জন করি, বিজয় অর্জন করি।


ইহুদি, আমেরিকা, পশ্চিমাবিশ্ব এবং পুঁজিপতিরা মানুষের উপর এক ধরণের প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে৷ তাদের চোখ ধাঁধিয়ে রেখেছে৷ বয়কট মানুষকে এই প্রভাব থেকে বের করে নিয়ে আসবে৷তাদের পণ্য, সম্পদ, ব্যক্তিত্ব, চিন্তা-চেতনা মানুষকে সম্মোহন করে রেখেছে৷ অনেকের চোখে একজন আমেরিকান নাকি সবচে দূরদর্শী, প্রতিভাবান, বুদ্ধিমান, কর্মদক্ষ, শান্তিপ্রিয় এবং সহনশীল৷ বয়কটের ধারাবাহিকতা মানুষকে ঘায়েল করা এই সম্মোহ দূর করবে৷ উম্মাহর এই উপলব্ধি হবে যে, তারা আমেরিকা বরং পশ্চিমাবিশ্বের সাহায্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পার৷ প্রকৃত ইচ্ছা থাকলে এমন হওয়টাই স্বাভাবিক৷

বয়কটের ফলে অর্জিত সাফল্য মুসলিম উম্মাহর দৃঢ় মনোবল যোগাবে৷ উম্মাহর শক্তিতে প্রাণের সঞ্চরণ ঘটাবে৷ উন্মাহ যখন দেখবে, হাজার কর্মী, অগণিত সম্পদ, অসমান্য শক্তি থাকা সত্ত্বেও পুঁজিবাদের আকাশ ছোঁয়া দালান গুলোর দরজায় তালা ঝুলছে; যখন দেখবে, পুঁজিবাদীরা হাজার চেষ্টার পরও সচেতন, বুদ্ধিমান উম্মাহকে তাদের ইচ্ছা থেকে টলাতে পারছে না, তখন আমি একে সাফল্য না বলে পারছি না। উম্মাহ যখন দেখবে আমেরিকার সুপার মার্কেটগুলো বিরান হয়ে পড়ে রয়েছে; দেশীয় সুপার মার্কেট গুলোতে হাজার ভোক্তার ভিড়, তখন আমি একে সাফল্য না বলে পারছি না৷

উম্মাহ যখন দেখবে, পশ্চিমা কর্পোরেট গুলো হন্তদন্ত হয়ে সভা, সেমিনার করছে৷ অফারের পর অফার চলছে৷ মিডিয়ার মাধ্যমে গ্রাহককে আকর্ষণ করার চেষ্টা চলছে৷ কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না৷ এতো কিছুর পরও গ্রাহকরা সাড়া দিচ্ছে না৷ পণ্যের চাহিদা ঠিকই বিদ্যমান; কিন্তু শুধুমাত্র বয়কটের কারণে তা বিক্রি হচ্ছে না৷ তখন আমি একে সাফল্য না বলে পারছি না৷ মনে করো আমাদের জয় হয়ে গেছে৷ যখন পত্রিকার পাতায় খবর আসবে, মধ্যপ্রাচ্যের স্বাভাবিক আয়ের তুলনায় এবার আমেকিরান কর্পোরেটের ৩৫% আয় কমে গেছে৷ তাও আবার জাগরণীর প্রথম কয়েক সপ্তাহর মাঝেই৷ তখন আমি একে বিজয় না বলে পারছি না৷ এতো উম্মাহর নতুন জাগরণীর মাত্রা৷ এভাবে বয়কটের ফলাফল দেখে উম্মাহ এক ধরণের বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করবে৷ তারা সফলতা অনুভব করবে৷ এটার খুবই প্রয়োজন৷

বয়কট প্রক্রিয়া চলমান থাকলে ইসলামের শত্রুদের জন্য আশংকাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে৷ মুসলমানদের জন্য সৃষ্টি হবে গর্ব ও বিজয়ের পরিবেশ৷ অচিরেই শত্রুরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরাজয় অনুভব করতে থাকবে৷ যখন দেশে দেশে মুসলিম উম্মাহর মাঝে ঐক্যতা দেখতে পাবে, তখন তাদের ভেতরে ভয় ধরে যাবে৷ যখন তারা দেখবে, তাদের পণ্যের প্রতি মুখাপেক্ষিতা থাকা সত্ত্বেও বয়কটের প্রতি উম্মাহর অসাধারণ আগ্রহ বিদ্যমান, তখন তাদের ভেতরে হীনমন্যতার সৃষ্টি হবে৷ ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রতাপের সামনে নিজেদের দুর্বলতা শিকার করবে৷ এগুলো বিজয়ের আভাস৷ শত্রুর মানসিক পরাজয়ের চেয়ে বড় কোনো পরাজয় নেই৷

আল্লাহর রাসুল সা. সত্যই বলেছেন,
نُصِرتُ بالرعب مسيرةَ شهر
এক মাসের পথ বাকি থাকতে থাকতেই আমাকে প্রভাব দিয়ে সাহয্য করা হয়েছে৷ {বুখারি : ৩৩৫}

বয়কট হবে প্রবৃত্তির জন্য একটি প্রশিক্ষণমূলক কর্মকান্ড৷ প্রবৃত্তি তার স্বাভাবিক জীবন যাপন থেকে বঞ্চিত হবে৷ ঠিক রোযার মতো৷ তুমি রমজান মাসে খাদ্য, পানাহার থেকে নিজেকে বিরত রাখছো৷ অথচ তা আদৌ হারাম নয়৷ যখন তুমি তা পারছো, তাহলে নিশ্চয় হারাম থেকেও বেঁচে থাকতে পারবে৷ বলা যায় এটা এক ধরণের প্রশিক্ষণ৷ আমাদের ইচ্ছা থাকতে হবে দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন আনা৷ দৈনন্দিনের চাহিদার উপর নিয়ন্ত্রণ,প্রবৃত্তিকে বশে আনা, ব্যক্তিগত স্বার্থগুলোর উপর উম্মাহর যৌথ স্বার্থগুলোকে প্রাধান্য দেয়া শিখতে হবে৷

বলাবহুল্য, বয়কট আমাদের এই শিক্ষাগুলো দিবে৷ আল্লাহর কসম! আমরা যদি বয়কট করতে গিয়ে উক্ত শিক্ষাগুলো অর্জন করতে পারি, তাহলে বলতে হবে, এটা এমন এক অর্জন, পূর্বের অর্জন গুলো যার সামনে কিছুই না৷

এই উপকারিতাটা বলেই শেষ করছি৷ আমি একে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকার মনে করছি৷ ইসলাম ও মুসলমানদের সাহায্য করার অদম্য স্পৃহা, ফিলিস্তিন, ইরাক, কাশ্মীর, ভারতের মুসলিম ভাইদের সহায়তার একান্ত ইচ্ছা, ইসলামি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার অসামান্য আগ্রহ। এগুলো বাদ দিও আমরা আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা করবো৷ তাঁর কাছে সাহায্য চাইবো৷ তাঁর দয়া, অনুগ্রহ, সন্তুষ্টির আশায় তাঁর শাহি দরবারে দুহাত তুলে ধরবো৷ এসবের সংগে সংগে ইহুদি পণ্য ব্যবহার না করতে ফকিহরা যেসব ফতোয়া দিয়েছেন সেগুলোও মাথায় রাখতে হবে৷ তারা পণ্য ব্যবহার হারাম তো বলেছেনই; তারা এও বলেছেন, এসব কোম্পানিগুলোর প্রতীক প্রকাশ করাও হারাম৷ এদের একজন হলেন আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভি সাহেব৷

হে আমার ভাই! তোমার কি জানা আছে হয়তো বয়কটের প্রতিদান সেদিন আমাদের পুণ্যের থলে ভারি করে তুলবে, যেদিন কোনো ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবেনা; সেদিন উপকৃত হবে কেবল সে, যে আল্লাহ সামনে আসবে শুদ্ধ অন্তকরণ নিয়ে৷ এসব কারণে এবং আরো কিছু কারণে বয়কটকে আমি এমন এক অস্ত্র মনে করি, যাকে ধারণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি৷ আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, তিনি আমাদের একাজে সাহায্য করুন; একাজকে কবুল করুন; একে আমাদের প্রতিদানের পাল্লায় শামিল করুন৷

ড. রাগিব সারজানি

পঠিত : ৫১৮ বার

মন্তব্য: ০