Alapon

বাংলাদেশ কি করোনা ভাইরাস থেকে ঝুঁকি মুক্ত...?


ইতিহাসের পাতা খুঁজলে গোটা বিশ্বের মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন তথ্যচিত্র পাওয়া যায়। আর ইতিহাস রচিত হয়েছে কেন? যেন আমরা সেসব ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। ইতিহাসের পাতায় যেসব মহামারীকে আজও ভয়ানক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় তার একটি তুলনা নিজে উল্লেখ করা হল।

৪৩০ খ্রিস্টপূর্ব: স্মলপক্স রোগটি ভেরিওলা ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রামক এই রোগটি একজন মানুষের ত্বকের সাথে আরেকজনের স্পর্শে ছড়ায়। এমনকি বাতাসের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায়। এই স্মলপক্সের কারণে খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ এ গ্রিসের এথেন্সে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়, যা ছিল ওই নগরের ২০ শতাংশ মানুষ।

৫৪১ খ্রিস্টাব্দ: পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের জাস্টিনিয়ানে ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুই শ বছর এই রোগ মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় ছড়ায়। ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর মহামারী বলা হয় একে। দুই শ বছরে এই রোগটিতে মারা যায় প্রায় ১০ কোটি মানুষ।

১৩৩৪ সাল: গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন হিসেবে স্বীকৃত ১৩৩৪ সালের প্লেগ আসলে ছড়ায় চীন থেকে। এরপর ইতালির ফ্লোরেন্স শহরেই ছয় মাসে প্লেগে মারা যায় ৯০ হাজার মানুষ। পুরো ইউরোপ জুড়ে মারা যায় আড়াই কোটি মানুষ।

১৩৪৬ সাল: এশিয়ায় ১৩৪৬ সালে প্লেগ মহামারী আকার ধারণ করে। ইতিহাসে তা দ্য ব্ল্যাক প্লেগ হিসেবে বিবেচিত। এই প্লেগ রোগ পরে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়লে ইউরোপের ৬০ শতাংশ মানুষ মারা যায়। চার বছরে এশিয়া ও ইউরোপে মারা যায় ৫ কোটি মানুষ।

১৫১৯ সাল: বর্তমান মেক্সিকোতে ১৫১৯ সালে স্মলপক্স ছড়িয়ে পড়লে দুই বছরে মারা যায় প্রায় ৮০ লাখ মানুষ।

১৬৩৩ সাল: ফ্রান্স, গ্রেট বৃটেন ও নেদারল্যান্ডসবাসীদের মাধ্যমে ১৬৩৩ সালে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে স্পলপক্স ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রায় ২ কোটি মানুষ মারা গেছে বলে দাবি করেন ইতিহাসবিদরা।

১৭৯৩ সাল: আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায় ১৭৯৩ সালে ইয়েলো ফিভার মহামারী আকার ধারণ করে। এতে নগরের ১০ ভাগের এক ভাগ, প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ মারা যায়।

১৮৬০ সাল: আধুনিক যুগে প্লেগ ছড়ায় ১৮৬০ সালে। এতে চীন, ভারত ও হংকংয়ে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। পরে ১৮৯০ এর দশকে প্লেগের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন হয়।

১৯১০ সাল: বিশ শতকের সবচেয়ে বড় প্লেগ মহামারী দেখা দেয় ১৯১০ সালে। চীনের মাঞ্চুরিয়ায় দুই বছরে মারা যায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।

১৯১৮ সাল: বিশ্বজুড়ে ১৯১৮ সালে গ্রেট ফ্লু মহামারী রূপ নেয়। এতে দুই বছরে সারা বিশ্বে মারা যায় ৩ কোটির বেশি মানুষ।

১৯৫২ সাল: আমেরিকায় ১৯৫২ সালে পোলিওতে আক্রান্ত হয় প্রায় ৬০ হাজার শিশু, এতে তিন হাজারের বেশি মারা যায়।

১৯৮৪ সাল: প্রথম এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয় ১৯৮৪ সালে। এই ভাইরাসের কারণে এইডস রোগে সে বছরই আমেরিকায় মারা যায় ৫,৫০০ জন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত। আর এ পর্যন্ত এইডসে মারা গেছে আড়াই কোটির বেশি।

২০০৯ সাল: বিশ্বজুড়ে ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু বা এইচ ওয়ান এন ওয়ান ফ্লুতে ১৮,৫০০ জন মারা গেছে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ লাখ ৭৫ হাজার বলেও ধারণা করা হয়।

২০১০ সাল: হাইতিতে ২০১০ সালে ভয়ংকর এক ভূমিকম্পের পর কলেরা মহামারী রূপ নিলে ১০ হাজার মানুষ মারা যায়।

২০১২ সাল: বিশ্বজুড়ে ২০১২ সালে ভাইরাসজনিত রোগ হামে মারা যায় ১ লাখ ২২ হাজার মানুষ। সে বছর পুরো বিশ্বে ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক রোগ টিউবারকিউলোসিসে মারা যায় ১.৩ মিলিয়ন মানুষ। এছাড়া প্রতি বছর টাইফয়েড জ্বরে মারা যাচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার মানুষ।

২০১৪ সাল: পশ্চিম আফ্রিকায় ২০১৪ সালে ইবোলা জ্বরে মারা যায় অন্তত ১১,৩০০ জন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন, ওয়ার্ল্ড অ্যাটলা

২০২০ সালে এসে গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাসে কাঁপছে। প্রথমে তা কেবল চীনের উহান প্রদেশে সীমাবদ্ধ থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি আমাদের পাশ্ববর্তি দেশ ভারতেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে এবং ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

করোনা ভাইরাস থেকে কি বাংলাদেশ নিরাপদ?

বাংলাদেশের সরকার বাহাদুরের হাবভাব এবং শারীরিক ভাষা দেখে মনে হচ্ছে, আমরা করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ। সম্ভবত সরকার বাহাদুর গায়েবি আওয়াজের মাধ্যমে এই তথ্য পেয়েছে। তা না হলে বিমানবন্দরে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণের লক্ষ্যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

আজ এক বড় ভাইয়ের সাথে কথা হল। যিনি মাত্র গতকালই বিদেশ থেকে ফিরেছেন। তিনি বললেন, বাহিরের দেশে বিমানবন্দরগুলোতে করোনা সনাক্তকরণে যে সতর্কতা দেখে আসলাম আমাদের দেশে তার বিন্দু মাত্রও প্রত্যক্ষ করিনি। খুব সম্ভবত করোনা সনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমাদের সরকার বাহাদুরের নেই। কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তেমন উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।

আমাদের সরকার বাহাদুর তো আবার ক্রেডিট নেওয়ার ক্ষেত্রে উস্তাদ! লোকজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরে পঁচে যাবে- কিন্তু দিনশেষে সরকার মিডিয়ার সামনে বলবে বাংলাদেশে একজনও করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। আর এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে।

ও ভাই সরকার বাহাদুর! আপনাদের এই চাপাবাজি করোনা ভাইরাসকে কাবু করতে পারবে না। দেখা যাবে সবার আগে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী আমলারাই করোনাতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। যেহেতু তাদের কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত উঠাবসা করতে হয়। তাই নিজেদের জন্য হলেও করোনা সনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

পঠিত : ৫৭৯ বার

মন্তব্য: ০