Alapon

নিয়মিত বিরতিতে বস্তিগুলোতে আগুন লাগার কারণ কী...?


খেয়াল করে দেখেছেন কি, ঢাকা শহরে নিয়মিতভাবে একটা দিকে আগুন লাগে; বস্তি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বস্তিগুলোতে প্রায়শ আগুন লেগে থাকে। সেই আগুনে পুড়ে যায় শত শত ঘর আর হাজারো মানুষের স্বপ্ন।

বস্তিগুলোতে আগুন লাগার কারণ কী?

বস্তিগুলো কোনো কলকারখানা বা এমন কোনো স্থান নয় যেখানে ব্যাপক বৈদ্যুত্যিক কাজ হয়ে থাকে। যদিও আগুন লাগার পর দায়িত্বের অংশ হিসেবে আগুন লাগার উৎস ও কারণ খুঁজে বের করতে একটি কমিটি করা হয়। আর সেই কমিটি দু একদিন গায়ে বাতাস লাগিয়ে জনগনের টাকায় চা নাস্তা খেয়ে রিপোর্টে লেখে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। আর বৈদ্যুত্যিক শর্ট সার্কিট হলে তো আর সেখানে কারও হাত থাকতে পারে না। অতএব পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়ার আগেই এই মামলা ফাইলবন্দি হয়ে যায়। সেই সাথে হাজারো মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ ফিরে পাওয়ার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

বহুদিন আগে একটা বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম। সিনেমায় ভিলেনের ভূমিকায় ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। তিনি আবার বিশাল শিল্পপতি। হঠাৎ তার ইচ্ছে হল, ঢাকা শহরে একখানা বাগান বাড়ি বানাবে। কিন্তু বাগান বাড়ি বানানোর জন্য তো অনেক জায়গার প্রয়োজন; আবার দামও কম হতে হবে। কম দামে এতো বড় জায়গা কোথায় পাওয়া যায়?
অতঃপর হুমায়ূন ফরীদি সাহেব তার গুন্ডা পান্ডাদের দিয়ে রাতের আধারে তার এলাকার বস্তিতে আগুন দিলেন। আগুনে সব ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তারপর পুড়ে যাওয়া ঘর আর আসবাবপত্র পরিষ্কার করে সেই স্থান দখলে নিলেন হুমায়ূন ফরীদি। তারপর সেখানে তার বাগান বাড়ি হতে লাগল।

উপরের ঘটনাটা সিনেমার হলেও বাস্তবে তা-ই ঘটছে। এখন পর্যন্ত যেসব বস্তিতে আগুন লেগেছে সেসব বস্তিতে বাসিন্দারা আগের মত পুনঃনির্বাসিত হওয়ার ‍সুযোগ পায়নি। অর্থাৎ সরকার বা সরকারি দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় সেখানে রাতের আধারে অথবা দিনের আলোতেই সকলের অগোচরে আগুন দিয়ে জায়গা খালি করার ব্যবস্থা করা হয়। জায়গা খালি হয়ে গেলে তারপর সেখানে শিল্পপতিদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে থাকে। আর তার সাথে সাথে গরিবের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।



আজ মিরপুরের রূপনগর বস্তিতে আগুনে প্রায় দুইশত ঘর পুড়ে গেছে। টিভিতে পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোর সামনে তারা ঠায় দাড়িয়ে আছে আর ঝরঝর করে কাঁদছে। তারা কালবোকা হয়ে কয়লা হয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো দেখছে। মিডিয়াপাড়ায় তাদের নিয়ে দু-একদিন আলোচনা চলবে। আর এই আলোচনার খাতিরে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করবে। এরপর সব শেষ।

এক সময় হয়তো তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট পেশ করে ঠিকই কিন্তু ততদিনে এই রিপোর্টের আর কোনো দাম থাকে না। আর রিপোর্টেও কখনো প্রকৃত সত্যটা প্রকাশ পায় না। সেই রিপোর্টে চাপা পড়ে যায়, খেটে খাওয়া মানুষগুলোর রাহাজানি। কিন্তু তারপরও সবাই চুপ। আমি আপনি আমরা সবাই চুপ। কিন্তু চুপ থাকতে পারে না তারাই, যাদের স্বপ্ন পুড়ে যায়। যাদের জীবনের শেষ সম্বল পুড়ে যায়। ধিক এই পুঁজিবাদি সমাজকে! ধিক এই আধুনিক শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থাকে! যেখানে কেবল কেড়ে নেওয়া শেখানো হয়, সহমর্মিতা শেখানো হয় না।

পঠিত : ৫৮১ বার

মন্তব্য: ০