Alapon

কবি আল মাহমুদের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি লজ্জাজনক এবং একই সাথে সম্মানজনক ঘটনা।

১৯৭৩ সালের কথা। তখন কবি আল মাহমুদ দেশের বিখ্যাত পত্রিকা ‘গণকন্ঠের’ সম্পাদক।


তখন চলছিল শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল। সেই সময়েও আজকের ন্যায় পাইকারীহারে গুম এবং ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটত। কিন্তু সেই হতাহতের ঘটনাগুলি কোন পত্রিকার পাতাতেই ঠাঁই পেতো না। শুধুমাত্র ‘গণকন্ঠ’ পত্রিকাতেই সেই মুজলুম মানুষদের সংবাদ ছাপানো হতো।


সেই সংবাদ ছাপানোর দ্বায়ে কবি আল মাহমুদের জীবন বিপন্যও হয়েছিল। আমি সেই ঘটনাতে যাবো না! আজ বলব, কবি আল মাহমুদের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি লজ্জাজনক এবং একই সাথে সম্মানজনক ঘটনা।



কবি আল মাহমুদ বিশেষ একটি সংবাদের খবর পেয়ে রাতের ট্টেনে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। ১ম শ্রেণীর একটি কামরা কবির জন্য রিজার্ভ করা ছিল। কবি কামরায় ঢুকেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। সারাদিন অফিস করার পর রাতে জার্নি! তাই কবি একটু বেশিই ক্লান্ত ছিলেন।


কতোক্ষন ঘুমিয়ে ছিলেন, কবির সঠিক স্মরণ নেই। কিন্তু হঠাৎই কামরায় দরজায় ধাতব পদার্থের প্রচন্ড আঘাতে কবির ঘুম ভেঙ্গে যায়। এরপর মুখ বাঁধা তিন যুবক হাতে পিস্তল নিয়ে কামরায় ঢুকে পড়ে। এরকময় অবস্থায় কবির যতোটা ভয় পাওয়ার কথা ছিল, ঠিক ততোটা ভয় পেলেন না। জড়তা কাটাতে বালিশের নিচে হাত দিলেন, সিগ্রেট ধরাবেন বলে! কিন্তু সেই তিন যুবকের একজন কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল, খবরদার! একটুও নড়াচড়া করবেন না।


এরপর সেই তিন যুবক জিজ্ঞেস করল, ‘তোর কাছে কত টাকা আছে?’ কবি জবাবে বললেন, ‘স্যুটকেসে ৯৩০ টাকা আছে আর পকেটে কিছু খুচরা টাকা আছে।’ এরপর তারা স্যুটকেস থেকে ৯৩০ টাকা এবং পকেট থেকে সমস্ত খুচরা টাকা নিয়ে নিলো। পকেটে থেকে মানিব্যাগটি বের করে একজন টাকা খুঁজতেছিল।


এর মাঝে তাদের মধ্যকার সর্দারগোছের যুবকটি বলল, তোর কোমরে কোন অস্ত্র পাতি নেই তো! এই প্রশ্ন শুনে কবি উঠে দাঁড়ালেন। কবির পরনে ছিল লুঙ্গি! সর্দার ছেলেটি লুঙ্গির বাঁধনটি খুলে দিলো। কবির পরনে তখনমাত্র সেন্ডো গ্যাঞ্জি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এসময় সেই সর্দার ছেলেটি তার পিস্তলের নল দিয়ে কবির পুরুষাঙ্গটি ছুয়ে দিলেন। কবি লজ্জায় কুকড়ে গিয়ে মাথাটা নিঁচু করলেন।


এরই মাঝে একজন কবির মানিব্যাগে কবির ভিজিটিং কার্ডটি খুঁজে পেল। ভিজিটিং কার্ডটিতে লেখা, ‘আল মাহমুদ, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক গণকন্ঠ’।কার্ডটি দেখার পর সর্দার ছেলেটি মাথাটা নিঁচু করে ফেলল। সে এইবার আপনি করে সম্বোধন করে বলল, ‘স্যার লুঙ্গিটা পরে নিন।


আপনার পত্রিকা আমি নিয়মিত পড়ি। আপনার সম্পাদকীয় আমরা নিয়মিতই পড়ি। আমরা ডাকাত নই। আমাদেরও একটা আদর্শ আছে। যদিও আপনার সব কথাকে আমরা সাপোর্ট করি না। কিন্তু আপনি নির্যাতিত মানুষের কথা বলেন! অসহায়ের কথা লিখেন! আমাদের ক্ষমা করে দিবেন!’ এই কথাগুলো বলে ছেলে তিনটি স্যুটকেসের উপর ৯৩০ টাকাসহ খুচরা পয়সাগুলো রেখে মুহুর্তেই গায়েব হলে গেল! (সূত্র- আল মাহমুদের গল্প)


মোরাল অব দ্যা ষ্টোরি: সত্য মানুষকে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়েও সম্মানিত করে থাকে। সত্য বলার চেষ্টা করুন, জীবনে সম্মান পাবেন। কিন্তু হলুদ সাংবাদিকতা করে হয়তো কোটি টাকা কামানো যাবে কিন্তু ভালোবাসা এবং সম্মান পাওয়া যাবে না।

পঠিত : ৫১০ বার

মন্তব্য: ০