Alapon

করোনা ভাইরাস এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি...


সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে একান্তই আল্লাহর রহমত ছাড়া বাংলাদেশে করোনা আউটব্রেক না হওয়ার কোন কারন নাই। করোনা ভাইরাস বৃষ্টিতে আটকে যায় এমনকিছু এখন তক জানা যায় নাই, তবে সমগ্র উত্তর গোলার্ধে ভাইরাসটার তান্ডব চালানোর সময় আর্দ্র দেশগুলোকে বাদ দিয়েছে এমনটা বলা যাবে না। ইতালিতে ভূমধ্যসাগরীয় আবহাওয়া, শীতকালে বৃষ্টি হয়, তবু সেখানে করোনা থামে নি। তাই বাংলাদেশের বর্ষায় করোনা থেমে যাবে এই চিন্তা বাতুলতা। তারচেয়েও চিন্তার ব্যাপার, জুন আসতে আসতে এখনো পাক্কা তিনমাস। এই ভাইরাস যে গতিতে আগাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের মত বিশ্বের সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ একটা দেশকে আগাগোড়া আক্রান্ত করে ফেলতে এর তিন মাস লাগবে না।

করোনা ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বেশি ঝুকিতে আছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর (বেনাপোল), দিনাজপুর, পঞ্চগড়, চাদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, বরিশাল ও কক্সবাজার জেলা।
ঢাকায় যেকোন মুহুর্তে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়তে পারে, এখন পর্যন্ত দেশের কোন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয় নি। সম্ভবত সন্তানদের লাশের মিছিল বের না হওয়া তক দেশের অভিভাবকরা অপেক্ষা করতে চাচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো, বিশেষ করে সলিমুল্লাহ হল সহ আর্টস ফ্যাকাল্টির হলগুলো বেশি ঝুকিতে আছে। দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের গণরুমের ছেলেদের মৃত্যুঝুকি এখানে সর্বোচ্চ। এই রকমের মহামারী ঠেকানোর সক্ষমতা আমাদের দুরের কথা, বিশ্বের অনেক বড় রাষ্ট্রেরই নেই।

এই মুহুর্তে আমরা যা করতে পারি তা হল বসে বসে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া এবং মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত করে যেকোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা।
এবার একটু ভেবে দেখা যাক, সম্ভাব্য ওয়ার্স্ট কেইস সিনারিও কি হতে পারে।
পেশাগতভাবে করোনা ভাইরাসের প্রথম আঘাত আসবে বাংলাদেশের ডাক্তার ও নার্সদের ওপর। এরপরের তালিকায় থাকবে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। প্রথম ধাক্কাতেই দেশের বেশিরভাগ হাসপাতাল ডাক্তার ও নার্সশুন্য হয়ে যাবে, কারন সরকার ডাক্তার বা নার্সদের সেইফগার্ডিংয়ের জন্য এখনো কিছু করে নি। অনেক ডায়গনস্টিক সেন্টারও বন্ধ হয়ে যাবে ফলো করোনা টেস্টিং কিট আনা হলেও তা টেস্ট করানো যাবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
এধরনের পরিস্থিতিতে সবাই নিজের জীবন বাচানোর ফিকিরে থাকবে। ইতোমধ্যেই শুনেছি কিছু হাসপাতালে নাকি ছুটি চাওয়ার হিড়িক পড়েছে।

দেশের বেশিরভাগ মিল-ফ্যাক্টরি খোলা থাকবে এবং ভাত খাওয়ার তাড়নায় শ্রমিকরা কাজ করতে বের হবে। এদের মাধ্যমে আরো দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে।
একশ্রেনীর মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে চাইবে এবং এর মাধ্যমে গ্রামের বাড়িতে ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে। ফলে গ্রামে-গঞ্জে মহামারী আকারে এটা ছড়াতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

যেহেতু চিকিৎসা ব্যবস্থাটা কাজ করবে না, সরকারকে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে অফিস-আদালত বন্ধ হবে এবং অনেক মালিকই বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করবে। ফলে অর্থনৈতিক দুর্যোগ শুরু হবে। স্বাভাবিক পরিবহন ব্যবস্থা কাজ করবে না, ফলে লাগামহীন পর্যায়ে চলে যেতে পারে দ্রব্যমূল্য। এখানেও জরুরী ক্ষমতা ব্যবহার করে খাদ্যদ্রব্যের দাম নাগালের মধ্যে আনা সম্ভব হবে যদি সরকার চায়। কিন্তু আমার ধারনা সেটা হবে না। তার বদলে একটা সিন্ডিকেট সমস্ত বাজার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। তাদের কাছ থেকে না কিনলে কোথাও কিছু পাওয়া যাবে না, এবং এরা স্বাভাবিক দামের কয়েকগুন বেশি দামে সব বিক্রি করবে। তবে সরকার যদি চায়, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এই পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এক মাস পর দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই নিজ পকেটের পয়সায় কিছু কেনার ক্ষমতা থাকবে না। তারপর কি হতে পারে তা আমি আর ভাবতে চাচ্ছি না।
এটা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের পসিবল ওয়ার্স্ট কেইস সিনারিও।
এমনও হতে পারে আসলে কিছুই হবে না।
কিন্তু তারচেয়ে ওপরে যা লিখলাম সেটা হবার সম্ভাবনা বেশি।

কথা হচ্ছে, আল্লাহকে ডাকার বাইরে নিজের জায়গা থেকে আর কি করা যেতে পারে??
পুষ্টিবিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য(Nutrition and Public Health) এর ছাত্র হিসেবে এবং একজন পেশাদার পুষ্টিবিদ হিসেবে আমার পরামর্শ হচ্ছে প্রত্যেককে নিজ দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সর্বোচ্চ পরিমান জোরদার করার দিকে নজর দিতে হবে। এজন্য আমাদের প্রয়োজন হবে প্রচুর ভিটামিন সি খাওয়া, সম্ভব হলে মেগাডোজে ভিটামিন সি নেয়া। এর পাশাপাশি ভিটামিন ডি, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম যদি পরিমানমত যুক্ত হয়, তাহলে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এমন পর্যায়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে যেখান থেকে আপনার শরীর করোনাকে ঠেকিয়ে দিলেও দিতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে এটা নিশ্চয়তা নয়, কিন্তু এরকম হওয়ার সম্ভাবনা আছে যে অত্যন্ত শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা থাকলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ একেবারেই কমে যায়।

এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত গাইডলাইন দিয়েছেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট Abu Bakr Siddique ভাই। যারা ইন ডিটেইল গাইডলাইনটি ফলো করতে চান তারা ভাইয়ের প্রোফাইলে গেলেই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের একটা পুষ্টি ককটেল পাবেন।

সবার সুবিধার জন্য আমি গাইডলাইনটি একটু কাটছাট করে দিচ্ছি। এতগুলি নিউট্রিয়েন্ট ম্যানেজ করাটা মুশকিলের ব্যাপার। তাই ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি থ্রি, জিঙ্ক ও ম্যাগনেসিয়াম এই চারটি নিউট্রিয়েন্ট যোগাড় করে যথাক্রমে দৈনিক ৩ গ্রাম(৬-৮ ডোজ), ৫০ মাইক্রোগ্রাম, ২০ মাইক্রোগ্রাম এবং ৪০০ মাইক্রোগ্রাম করে খেলে দু সপ্তাহের মধ্যেই দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠবে ইনশা আল্লাহ।

জিঙ্ক ট্যাবলেট খুব সহজেই বাজারে পাওয়া যায়, কিনে খাওয়া শুরু করতে পারেন তবে একটা মাত্র নিউট্রিয়েন্ট দিয়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধের দুর্গ তৈরি করা সম্ভব না।
ভিটামিন সি, ডি থ্রি এবং ম্যাগনেসিয়াম এই তিনটি নিউট্রিয়েন্ট আমি নিজের ও পরিবারের জন্য আনানোর ব্যবস্থা করছি। কাছের মানুষদের জন্যও দুই এক প্যাকেজ আনবো ভাবছি, তবে একটু ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশি আনা সম্ভব না।

যদি কেউ এই তিনটাও কিনতে না পারেন, অন্তত ভিটামিন সি পাউডার এবং ম্যাগনেসিয়াম হাই ডোজ ট্যাবলেট সংগ্রহ করুন এবং জিঙ্কের সাথে ব্যবহার করুন।
প্রত্যেকে যথাসম্ভব নিজের জায়গা থেকে চেষ্টা করেন রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা সর্বোচ্চ জোরদার করতে এবং সংক্রমন থেকে বাচতে সতর্ক থাকুন। আল্লাহকে স্মরনে রাখুন, এছাড়া এই মহাবিপদে আর কিছুই করার নেই।

@Sajal

পঠিত : ১১০০ বার

মন্তব্য: ০