একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর
তারিখঃ ১৭ মার্চ, ২০২০, ২২:০৯
আল্লাহ নাকি রিযিকদাতা, তাহলে মানুষ না খেয়ে মরে কেন? কেনইবা মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় চুরি করতে বাধ্য হয়?
প্রশ্নগুলো আমার এক ছাত্রের। প্রশ্ন একজনে উপস্থাপন করলেও একই জিজ্ঞাসা আরও ছয়জনের। আমি অবাক হইনি। কারন বাচ্চাদেরকে মায়ের উদরে শিক্ষাদানের কোনো ব্যবস্থা আল্লাহ করেননি। এ দায়ীত্ব আল্লাহ অর্পণ করেছেন পিতা/মাতা/অভিভাবক বা শিক্ষালয়ের উপর। তারা যদি এ দায়ীত্ব যথাযথ পালন না করেন তাহলে প্রশ্ন এমনটাই আসার কথা।
যাহোক, প্রশ্ন যেহেতু আমাকে করা হয়েছে, উত্তর আমাকে দিতে হবে এবং তা কুরআন থেকে। আল্লাহর কৃপায় জওয়াবের সুত্র আমি পেয়েও গেলাম।
সুরা হুদ এর ৬নং আয়াতে আল্লাহ দাবী করেছেন যে, ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই, যার রিযকের দায়ীত্ব আল্লাহর উপর নেই।
এ দাবী যে অকাট্য, তা আল্লাহর এ সৃষ্টিজগতে একটু তাকালেই বোঝা যায়। আকাশ ও যমিনে, বনে ও জংগলে মানুষ ছাড়া এই যে অগণিত প্রাণীকুল তারা কেউ চাষাবাদ করেনা। মানুষের মতো চাষাবাদের কোনো সরঞ্জামও তাদের নেই। কোনো ব্যবসা বানিজ্যর সিষ্টেম বা জ্ঞান বুদ্ধিও তাদেরকে দেয়া হয়নি। অথচ দেখা যায় সাঝের বেলা ঠিকই পেট পুরে খেয়ে দেয়ে সকলেই আপন আপন নীড়ে ফিরে যাচ্ছে।
কিন্তু মানুষের বেলায় এমন কেনো? কেনো মানুষ না খেয়ে মারা যায়? অথচ জগতের সবকিছু আল্লাহ মানুষের খিদমাতের উদ্দেশ্যে সৃজন করেছেন। মানুষকে অন্য মাখলুকের প্রয়োজনে নয় বরং অন্যান্য সকল মাখলুককে তিনি মানুষের প্রয়োজনে পয়দা করেছেন বলে কুরআন কারিমে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে (সুরা আল বাকারা ২৯, সুরা ইবরাহিম ৩২-৩৪)।
তাহলে গলদটি কোথায়?
বিষয়টি বুঝার জন্য একটি উদাহরণ দেয়া যাক:
মিষ্টার X এর ছয়জন পুত্র সন্তান। তিনি ব্যবসা করেন এবং ব্যবসা করে সফল। সন্তানেরা সকলেই বিবাহিত, তাদের কারোর কারোর ছেলেমেয়েও আছে। তার সকলে একই বাড়িতে বাবা মায়ের সাথে থাকে ও খায়। রান্নাবান্নার কাজটি বউয়েরা করে। শাশুড়ী অর্থাৎ মিষ্টার X এর স্ত্রীর হাতে রান্নাঘরের যাবতীয় উপকরণ সরবরাহের দায়ীত্ব। যখন যা লাগে তা সবই তিনি যথাসময়ে সরবরাহ করেন, কোনরুপ কার্পণ্য করেননা। কিন্তু খাবার বন্টনের দায়ীত্বটি দিয়েছেন বড় বউয়ের হাতে। বড় বউ পরিবারের সদস্যরা খেতে বসার আগেই গোপনে মাছ, গোশত, তরিতরকারীর একটা বড় অংশ নিজ স্বামী ও সন্তানদের দিয়ে দেয়। এর ফল যা হবার তা-ই এবাড়ীতে ঘটছে। দেখা যায়, প্রায়ই অন্যরা তাদের ন্যায্য হিস্যা পায়না। কখনও বলা হয়, আজ গোশত কম ছিল, আজ মাছের বেশ কিছু টুকরা বিড়ালে খেয়ে ফেলেছে, আজ কিছু টুকরা কেরোসিন তেলে পড়ে গেছে, আজ হিসাবে ভুল হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ অবস্থার জন্য শাশুড়ী কিন্তু মোটেই দায়ী নন। কারন তিনি হিসাব করে প্রয়োজন মতো চাল, ডাল, তরিতরকারী, মাছ গোশত দিয়ে যাচ্ছেন। এর জন্য দায়ী হচ্ছে বড় বউ।
এ জাতীয় বড় বউদের কারনে সমাজে কিছু লোক বেশী খায় বা নষ্ট করে আবার কিছু লোক না খেয়ে থাকে।
আরো একটি উদাহরণ দেয়া যাক:
এক গবেষণায় দেখা গেছে, সৌদী আরবে যে পেট্রোল আছে ঠিক একই মুল্যমানের গ্যাস ছিল বাংলাদেশে। সৌদী আরবের সৎ ও আল্লাহভীরু নেতৃত্ব তাদের পেট্রোলকে কাজে লাগিয়েছে, আল্লাহ প্রদত্ত সে সম্পদের সুফল জনগনকে পাইয়ে দিয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের অধিবাসীগন তাদের অসৎ ও দুর্ণীতিবাজ নেতৃত্বের কারনে সেই গ্যাস সম্পদের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শুধু কি এটি? মেচের কাঠি খরচ হবে, তাই সারাদিন গ্যাসের চুলাটি জ্বালিয়ে রাখে এদেশের প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। এ সৎকর্মটি চলছে এদেশে গ্যাস সংযোগের ঠিক শুরুর দিনটি থেকে।
সুতরাং কেউ না খেয়ে মারা গেলে এ দোষ আল্লাহর – এ কথা বলা সঠিক নয়। জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এজাতীয় চিন্তা চেতনাকে সমর্থন করেনা।
আল্লাহ তায়ালা তার মাখলুকের জন্য প্রয়োজনমতো খাবার উৎপন্ন করার একটি সয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করে রেখেছেন। উৎপাদিত সে দ্রব্য-সম্ভার ন্যায় ও ইনসাফের সাথে বিলি বন্টনের যে বিধি পদ্ধতি তিনি তার নাবী রাসুলদের মাধ্যমে মানব সমাজে পাঠিয়েছেন সে বিধি পদ্ধতি মানুষ প্রয়োগ করেনা বলেই কিছু মানুষ না খেয়ে মরে আবার কিছু মানুষ খাবারের অভাবে চুরি করে।
আল্লাহর দেয়া আইন বিধান ফলো করলে সমাজে যে কেউ না খেয়ে থাকেনা তার জলন্ত প্রমাণ আল খুলাফা আর-রাশেদীন। সুলাইমান ইবনু আবদিল মালিক এর সময়ে যেখানে অভাবীরা যাকাতের জন্য লাইন দিতো, সেখানে সুলাইমানের মৃত্যুর পর তিন মাসের মাথায়ই উমার ইবনু আবদিল আযিযের সময়ে যাকাত নেবার জন্য লোক পাওয়া যেতোনা।
মন্তব্য: ০