Alapon

করোনা ভাইরাস কি আদৌ প্রতিরোধ করা সম্ভব...?


চীনের প্রখ্যাত হাসপাতাল জিন তোংজুয়াদু এবং সাংহাই মেডিক্যাল এসোসিয়েশানের মত নামজাদা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে করোনা ভাইরাস দিয়ে মারাত্মকভাবে সংক্রমিত রোগীদের হাইডোজ ভিটামিন সির মাধ্যমে তারা সারিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। জিন তোংজুয়াদু জানিয়েছে এটি এখন মেইনস্ট্রিম ট্রিটমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হবার জন্য তারা রেকমেন্ড করছে। এই খবর এক সপ্তাহ আগে প্রকাশিত হয়েছে ন্যাচারাল হেলথ কেয়ার এক্সপার্ট ডক্টর র‍্যাথের র‍্যাথ হেলথ ফাউন্ডেশনের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে। র‍্যাথ হেলথ ফাউন্ডেশানের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নিজে এ সংক্রান্ত আর্টিকেলটি লিখেছেন। কমেন্টবক্সে আর্টিকেল লিংকটি আমি শেয়ার করবো।

ভিটামিন সি কিভাবে কাজ করে??

সহজ ভাষায় বললে আমাদের দেহে থাকা ফ্যাগোসাইট এবং টি-সেল লিম্ফোসাইট যারা দেহের ডিফেন্স লাইনের একেবারে শেষ দিককার সৈনিক, যারা মূলত জরুরী অবস্থায় শরীরে প্রবেশ করা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে, তাদের দ্বারা শোষিত হয় এবং তাদের ফ্যাগোসাইটোসিস করার জন্য প্রয়োজনীয় এসিডিক এবিলিটিকে বাড়িয়ে দেয় যার ফলে তারা শত্রুকোষের প্রাচীরকে আরো বেশি শক্তি নিয়ে আঘাত হানতে পারে। যেহেতু এটা পাবলিক পোস্ট, আমি ডিটেইল আলোচনা এভয়েড করছি।

কিন্তু গুগল সার্চ করলে প্রথমেই আপনার কাছে এক ঝাক পোস্ট ছুটে আসবে যে কেন ভিটামিন সি করোনার বরুদ্ধে কাজ করবে না, কেন এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ এক্ষেত্রে কাজ করবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। গুগল আপনি কি চান তাই যে সবসময় আপনার সামনে আনে ব্যাপারটা এমন নয়, অনেক সময় গুগল আপনার সামনে তাও এনে দেয় যা গুগল চায় আপনি দেখেন। গুগলে সার্চ করলে আপনি কিটো ডায়েটের বিরুদ্ধেও অনেক কিছু পাবেন, কিন্তু কিটো করে বাংলাদেশে বহু মানুষ এমন ফল পাচ্ছেন যা তারা আগে ভাবতেও পারেন নি।
বৈশ্বিক ওষুধ বাণিজ্য ও এর ফলে সৃষ্ট বিপর্যয় নিয়ে যারা জানেন এমন যে কেউ বলবেন, গুগল কোন ফেরেশতা না। বাই দ্যা ওয়ে, গুগলের বদনাম করা আমার উদ্দেশ্য না, আমার উদ্দেশ্য কিভাবে করোনার প্রতিরোধে ভিটামিন সি কাজ করবে সেটা জানানো এবং সেটা কিভাবে খেতে হবে তা জানানো।

এখন, করোনার সাথে লড়তে ভিটামিন সি কি পরিমানে প্রয়োজন??

উত্তর দিয়েছে সাংহাই মেডিক্যাল এসোসিয়েশান, এছাড়াও ডক্টর র‍্যাথ অনেক অনেক দিন যাবত এটা নিয়ে কাজ করছেন। পার কেজি বডি ওয়েট ৫০-১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশান দিয়েছে তারা। সাংহাই মেডিক্যাল এসোসিয়েশান এমনকি ২০০ মিলিগ্রাম পার কেজি বডি ওয়েট ডোজও রিকমেন্ড করেছে। এগুলি ইন্ট্রাভেনাস ডোজ, ওরাল বা মুখে খেলে এত খাওয়া যাবে না, খাদ্যনালীতে জ্বালাপোড়া হবে। আর এই ডোজ প্রয়োজন অসুস্থদের জন্য, যারা অসুস্থ নন তাদের জন্য দরকার প্রিভেন্টিভ ডোজ, কিউরেটিভ ডোজ নয়।

এই প্রিভেন্টিভ ডোজ বাংলাদেশীদের জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পার কেজি বডি ওয়েট ধরলে দাড়ায় ৬০ কেজির একজন বাংলাদেশী দৈনিক ৩ গ্রাম, ৮০ কেজির একজন বাংলাদেশী দৈনিক ৪ গ্রাম করে ভিটামিন সি নেবেন।
কিন্তু এতখানি ভিটামিন সি একসাথে মুখে খাওয়া যাবে না। আপনাকে এটা নিতে হবে ভেঙ্গে ভেঙ্গে, এক বারে ৫০০ মিলিগ্রাম বা ০.৫ গ্রামের বেশি একসাথে নেবেন না। দিনে প্রতি তিন ঘন্টা পরপর একেকটা ০.৫ গ্রামের ডোজ নিতে হবে। দিনে ছয় থেকে আটটা সিভিট ডিএস খেলে আপনার ভিটামিন সি ডোজ কমপ্লিট।
এক্ষেত্রে আপনি প্রতি তিন ঘন্টা বাদ একটা করে সিভিট ডিএস ট্যাবলেট খেতে পারেন। ঝামেলা শেষ। এছাড়াও বাজারে ফার্স্ট ক্লাস ভিটামিন সি পাউডার কিনতে পাওয়া যায়, যেটা যোগাড় করার একটা পাথওয়ে পাওয়া গেছে।

এবার আসি,কেন আমি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল বাদ দিয়ে সিভিট আর ভিটামিন সি পাউডারের কথা বলছি??

আমাদের দেশে একটা ধারনা প্রচলিত আছে যে নিউট্রিশনিস্ট তথা পুষ্টিবিদ মানেই সব কিছুর চিকিৎসা শুধু খাবারের মাধ্যমেই করতে হবে, খাবারের বাইরে যাওয়া যাবে না, সেটা ডাক্তারদের জগত।
আরে ভাই আপনি খাবার কেন খান?? নিউট্রিয়েন্টের জন্য খান। এখন আপনার যদি এই পরিমান নিউট্রিয়েন্ট দরকার হয় যে আপনি তা স্বাভাবিক খাবার থেকে পাবেন না তাইলে নিউট্রিশনিস্ট কি করবে?? সে আপনাকে প্রতিবেলা এক জগ করে আমলকির রস, বা দিনে দুই ডজন কমলা খেতে বলবে?? বাজারে এত আমলকি বা কমলা কি আছে যা সবার চাহিদা মেটাতে পারবে?? আপনি কিভাবে খাবেন এগুলা??

একদিনে ৯০-১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন হয় স্বাভাবিক অবস্থায়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের মত পরিস্থিতিতে আমাদের দরকার হয় মেগাডোজের। এই মেগাডোজকে ৩ গ্রাম-৪গ্রাম বা সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম( এর বেশি কোনমতেই মুখে খাওয়া যাবে না, ইন্ট্রাভেনাস বা ইন্ট্রামাসকুলার ইঞ্জেকশান নিতে হবে) যদি পেতে হয়, তবে প্রতি তিন গ্রাম ভিটামিন সি পেতে আমাদের প্রয়োজন সলিড প্রায় ছয় কেজি লেবুর রস, বা সমপরিমান কমলার রস। বেটার সলিউশান আমলকি, সেক্ষেত্রে সলিড আমলকির রস লাগবে প্রায় ছয় শো গ্রাম। বাসায় ছয়জন থাকলে দিনে সাড়ে তিনকেজি আমলকির রস আপনার বাসায় লাগবে। পারবেন??

যদি না পারেন তাইলে ভিটামিন সি পাউডারের দিকে যান। প্রতি মিলিগ্রাম পাউডার হাফ লিটার বিশুদ্ধ পানিতে গুলে পান করতে হবে, দুই ভাগে ভাগ করে, প্রতি তিন ঘন্টা বাদে। (সম্ভব হলে ডিস্টিলড ওয়াটার ব্যবহার করবেন)

এছাড়া ভিটামিন ডি থ্রি ৫০ মাইক্রোগ্রাম বা ২০০০ আইইউ করে চলবে, বাজারে ভিটামিন ডি থ্রির প্রচুর ভাল মানের কিন্তু সস্তা ট্যাবলেট আছে। অনেকে একের ভেতর সব টাইপ যে মাল্টিভিটামিন কিনতে যান হাজার হাজার টাকা দিয়ে, যেগুলিতে কোনটারই মেগাডোজ থাকে না। এইসব বাদ দেন। এগুলা প্রায় সুস্থ মানুষের জিনিস, করোনাতে এসব দিয়ে কাজ হবে না।

এরপর জিঙ্ক, ২০ মিলিগ্রাম জিঙ্ক ট্যাবলেট প্রায় সব ফার্মেসিতে পাবেন। দিনে একটা ইনাফ।

ম্যাগনেসিয়ামের জন্য ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড বা বাইকার্বোনেট আকারে ক্যাপসুল পাওয়া যায়, কিন্তু সেরা হল ম্যাগনেসিয়াম সাইট্রেট। এটা সহজে পাওয়া যায় না, খরচাপাতি বেশি। খেতে হবে ৪০০ মিলিগ্রাম প্রতিদিন।

তাইলে সামারি হচ্ছেঃ

১) ভিটামিন সি ৩ গ্রাম রোজ। ৬টা সিভিট ডিএস তিন ঘন্টা পরপর।
শিশুদের জন্য ২ গ্রামের বেশি না দেয়াই ভাল। সেক্ষেত্রে চারটা সিভিট ডিএস। প্রেগন্যান্টদের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

২) ম্যাগনেসিয়াম ৪০০ মিলিগ্রাম রোজ। ২টা ম্যাগনেসিয়াম সাইট্রেট ২০০ এমজি ট্যাবলেট সকালে বিকেলে ১টা করে।

৩)জিঙ্ক ২০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট রোজ একটা।

৪)ভিটামিন ডি থ্রি ট্যাবলেট ২০০০ আইইউ রোজ ১টা।

এই চারটা জিনিসের কম্বাইন্ড একশন আপনার ইমিউন সিস্টেমকে অত্যন্ত শক্তিশালী করবে যার মাধ্যমে আপনি করোনা মহামারীর ভেতর সম্পুর্ন নিরাপদ না থাকলেও আপনার সংক্রমনের সম্ভাবনা অনেকাংশে সীমিত হয়ে আসবে। ভাইরাস দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার শরীরকে সবার আগে ধ্বংস করে দেয়।

পাশাপাশি আমাদের জন্য যথাসম্ভব বাড়িতে অবস্থান করা, ভিড় পরিহার করা, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করা ও বারবার হাত-মুখ ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, হাচি-কাশির ক্ষেত্রে দুরত্ব বজায় রাখার মত স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলা খুবই জরুরী।
সব কথার শেষ কথা, আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে অবশ্যই, কিন্তু সেজন্য নিজের বিবেক বুদ্ধি জলাঞ্জলি দেয়ার কথা আল্লাহ কোথাও বলেন নি। করোনা প্রতিরোধে নিজের বিবেক-বুদ্ধির সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন এবং তারপর আল্লাহকে ডাকুন।

@Sajal

পঠিত : ৯০৬ বার

মন্তব্য: ০