Alapon

বাংলাদেশিরা উত্তম প্রজাতির দাস!

আমাদের বাইকটাকে পুলিশ থামতে বলল। বাইকের পিছন সিট থেকে আমিও পুলিশের ইশারা দেখতে পেলাম। পুলিশবাবুদের সংকেত দেয়ার পর থেকে থামা পর্যন্ত বাইকটা একটু দুলতে লাগল। হয়তো ভয়ে বন্ধুর হাত পা কাপাকাপি শুরু করেছে। হয়তো ওর বাবার সেই হুঁশিয়ার বাণী মনে পড়ে গেছে।


ওর বাবা বলেছিল, ‘হুজুরের নাতীর সাথে ঘুরিস না। ওর সাথে ঘুরবি তো পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। আর তোরে যদি একবার ধরে তাহলে আমার মরা দাদাও ছাড়াইতে পারবে না। তখন মজা বুঝবি!’


হয়তো ঐ মজার কথা স্মরণ হতেই হাত পা কাঁপছিল! পুলিশ গাড়ি ধামিয়ে কাগজ পত্র চাইল। তারপর বলল, কোথায় যাবেন? কেন যাবেন? আপনাদের দু’জনের মধ্যকার সম্পর্ক কী? প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার সময়, আমরা বন্ধুটি বারবার ‘স্যার স্যার’ করতেছিল! পুলিশবাবুদের ত্রিসীমানা পার হয়ে ওরে বললাম, ‘পুলিশগুলোরে চাকরদের মত এমন স্যার স্যার বলে ডাকার কি দরকার ছিল?’ সেও অবাক হবার ভঙ্গি করে বলল, ‘হ্যা, তাই তো! আমি কেন পুলিশগুলোকে ‘স্যার’ বলে ডাকলাম?’



এই প্রশ্নের উত্তর পরে দিচ্ছি! আরো একটি ঘটনা বলি। সেনাবাহিনীর এক লেফটেন্যান্টের সঙ্গে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল! একবার তার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। তার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেপাহী বললাম, ‘ফারুক ভাইকে একটু বলেন আমি এসেছি’! বেচারা চোখ পাকিয়ে বলল, ‘স্যার কি আপনার আত্নিয় সম্পর্কের ভাই? না! ‘তাহলে স্যার বলুন!’ ঠিক সেসময় ফারুক ভাই পিছনে এসে দাঁড়ালেন। চোখ মুখ শক্ত করে সেপাহীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমাকে নিয়ে হাটা শুরু করলেন। আমার বাম হাতের পিঠে নিজের হাতের পিঠ স্পর্শ করে বললেন, ‘আমরা দাসত্বে চেতনা থেকে বের হতে পারি নি। আমরা নিজেকেসহ পুরো জাতিকে নিয়ে দাস হয়েই থাকতে চাই!’


ঠিক তাই! এই দাসত্বের প্রবোনতা থেকেই আমরা পুলিশদের ‘স্যার’স্যার’ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি। মন্ত্রী এমপিদের প্রভুর মত তোষামোদি করি। কিন্তু নিজের অধিকারটুকু আদায় করে নিতে জানি না। মন্ত্রীদের বলতে পারি না, ‘ব্যাটা দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রী হইছোস কিল্লাই! বাঁধ রক্ষা করতে পারোস না’! বাঁধ রক্ষা করতে না পারলে মন্ত্রীত্ব ছাড়। পর্যাপ্ত ত্রান দিতে না পারলে মন্ত্রনালয় থেকে দূর হও! তোরে সেবা করাইতে বসাইছি। সেবা করবি। রাষ্ট্রের টাকায় ভুড়ি তাজা করতে বসাই নাই!


কিন্তু আফসোস! বাংলাদেশীরা এমন অধিকার সচেতন কখনোই হতে পারবে না। পারবে না দাসত্বের শিকলটাকে চিরতরে ছিন্ন করতে। তাই তো পাশ্ববর্তি ছোট্টরাষ্ট্র নেপালের বর্ডারে ভারতীয় বিএসএফ গুলি চালাইতে না পারলেও, বাংলাদেশের বর্ডারে দৈনিক শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুড়ে! কারণ, এই জাতি ভীরুর জাতি। গুলি খাইয়া মরবো মাগার প্রভুর গোলামি ছাড়বো না!


পঠিত : ৫৪০ বার

মন্তব্য: ০