Alapon

করোনা ভাইরাস নিয়ে কেবলই গলাবাজির ভয়ানক পরিণতি...


করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সবখানেই জল্পনা-কল্পনা এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। আমি বিশ্লেষণে যাবো না; আমার সে যোগ্যতাও নেই। তবে করোনা ভাইরাসকে কেবল চাপাবাজি দিয়ে মোকাবেলা করতে চাইলে, কী ভয়ানক অবস্থা হতে পারে সেই নমুনা তুলে ধরছি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় ২০ জানুয়ারী। এরপর পরবর্তি ৫০ দিনে অর্থাৎ ১০ মার্চ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১ হাজারে। ৫০ দিনে আক্রান্ত ১ হাজার, আমাদের দেশের হিসাবে এই সংখ্যা তেমন আহামরি কিছু না।

কিন্তু পরের ১ সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৫ হাজারে। এরপর মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাড়ায় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৫৯ জন। আর এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে নিহত হয়েছে ৩১৭৩ জন।

২০ জানুয়ারী প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’

এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসের সংখ্যা নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য ছিল, ‘আমাদের দেশে মাত্র ১১ জন আক্রান্ত এবং তাঁরাও সেরে উঠছেন।’

১৫ দিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা হয়তো করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন করবেন। আমি বলছি, যুক্তরাষ্ট্রে বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আছে।’

দুই দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে। এটা আশ্চর্য, কিন্তু সত্যিই একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।’

১০ দিন পর ৬ মার্চ ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, ‘কেউ চাইলেই পরীক্ষা করাতে পারে। সব ব্যবস্থাই আছে। পরীক্ষা করা সত্যিই দারুণ একটা ব্যাপার।’

ট্রাম্প যখন সবকিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রনে আছে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন ধীরে ধীরে সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা সনাক্ত করার পর ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় দেড় মাস সময় পেয়েছিল। কিন্তু এই দেড় মাস ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের মতই গলাবাজি করে গেছেন। যার কারণে, করোনা ভাইরাস এখন যুক্তরাষ্ট্রকে বাঁশ দিচ্ছে!

যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত চিকিৎসনা ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটরের সংখ্যাও কয়েক হাজার। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। গোটা বাংলাদেশ জুড়ে আইসিইউ এর সংখ্যা ৬০০ টি। তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই অকার্যকর। আর সারাদেশ জুড়ে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ৫০০টি। এর মাঝে কয়টি সচল আছে, তা একমাত্র আল্লাহপাক ছাড়া কেউ ভালো জানে না। আর ভেন্টিলেটর ছাড়া যে আইসিইউ-এ কোন ঘোড়ার ঘাস কাটবে, তা দায়িত্বপ্রাপ্তরাই বলতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়ার পরও ২ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। আর বাংলাদেশে কেবল চিকিৎসা ব্যবস্থার অবস্থাপনা এবং সরকারের দায়িত্বহীণ আচরণের কারণে কত সংখ্যক মানুষ মারা যেতে পারে— তা অনুমান করতে পারছেন কি?

গতকাল এক টকশোতে দেখলাম একজন চিকিৎসক বললেন, ‘যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সকাল শুরু হয় তাহাজ্জুদ দিয়ে, সেই দেশে করোনা তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, ইনশা আল্লাহ।’

ডাক্তার সাহেব, আপনার প্রধানমন্ত্রী ফজরের নামাজ বাদ দিয়ে তাহাজ্জুদ দিয়ে সকাল শুরু করুক আর যোহরের সময় বেতেরের নামাজ পড়ুক না কেন, করোনা ভাইরাস কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চেনে না, ডাক্তারও চেনে না। যখন খাওয়া শুরু করবে তখন আপনার তাহাজ্জুদি প্রধানমন্ত্রীকেও কিন্তু খেয়ে ফেলবে...

পঠিত : ৪৫৭ বার

মন্তব্য: ০