Alapon

আমরা কি নারীদের সম্পত্তির হক আদায় করছি?



আমরা কখনো আঙুল নিজের দিকে উঁচু করতে পারি না। পৃথিবীতে মহামারী চলছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন আমাদের উপর আপতিত মুসিবত আমাদেরই হাতের কামাই, আমাদেরই অর্জন। অথচ যখন আমাদের উপর বিপদ আপতিত হয় তখন আমরা একে দোষ দেই, ওকে দোষ দেই। অমুক কাফের! অমুক বেঈমান! অমুক মুনাফিক! ইত্যাদি কথা বলি। কিন্তু কখনোই আঙুল নিজের দিকে তুলে দেখি না। আমি কি জুলুমবাজ? আমরা কি জাতিগতভাবে হক নষ্টকারী?

আসুন আমরা কিছু ইনফরমেশন জানি। আমাদের দেশে ৫০ শতাংশের বেশি নারী। ধরে নিলাম অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। যদি তাই হয় তাহলে মুসলিম উত্তিরাধিকার আইন অনুসারে এদেশের ৩৩ শতাংশ ভূমি থাকা উচিত নারীদের। এটা সবসময় ধ্রুব হবে না। কারণ সব পুরুষই তাদের বাবা থেকে সম্পদ পান বিষয়টা এমন নয়। অনেকেই কিনে থাকেন। তাই বলে অংকের বাস্তবতার এত বেশি পার্থক্য হওয়ার কথা নয়। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে পুরুষ বনাম নারীর সম্পদের অনুপাত ৯৬ : ৪। এটা কেন? কারণ আমরা আমাদের নারীদের সম্পদ দেই না।

এবার আরেকটি ইনফরমেশন জানুন। এদেশে ৮৭ শতাংশ মানুষ মুসলিম। সেই হিসেবে নারীদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ নারী তো উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু এখানেও বাস্তবতার সাথে ফারাক অনেক বেশি। এদেশের মাত্র ২৯% নারী তাদের পিতার সম্পত্তি পেয়ে থাকেন। বাকীরা পায় না। কেন পায় না? আরো দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এই ২৯ শতাংশের মধ্যে একটা বড় অংশ মামলা করে সম্পত্তি আদায় করেছেন।

আচ্ছা এবার পরিসংখ্যান আর অংকের হিসাব বাদ। আপনার নিজের দিকে তাকান।

যিনি আমার এই লেখা পড়ছেন তাকে বলছি, আপনার বাবা কি জীবিত? যদি জীবিত না হন তবে কি আপনার বাবার সম্পত্তি থেকে আপনার বোনদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন? যদি বুঝিয়ে না দেন তবে আপনি জুলুমবাজ। আপনি হারাম খাবার ভোগ করছেন। আপনি হক্কুল ইবাদ নষ্ট করছেন। আপনার গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আপনি এখনই যান আপনার বোনদের কাছে। সম্পদ বুঝিয়ে দিন। ক্ষমা চান, এটা মৃত্যুর পূর্বেই আপনাকে করতে হবে। করবো করতে গিয়ে করোনা, গাড়ি এক্সিডেন্ট কিংবা হার্ট এটাক করে হুট করে মরে গেলে আপনি পর্যাপ্ত শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকুন। আর হারাম ভক্ষনের কারণে আপনার কোনো ইবাদত, কোনো সাজদাহ কবুল হবে না। আপনি জাহান্নামের খাদ্যে পরিণত হচ্ছেন।

আর যদি আপনি বোনদের সম্পদ দিয়েও থাকেন তবে কীভাবে দিয়েছেন? সেখানে কোনো ফাঁকি দিয়েছেন কিনা? যথাযথভাবে পরিমাপ করে ভাগ করে দিয়েছেন কিনা? কম মূল্যের জমি দিয়ে আপনি উচ্চমূল্যেরগুলো নিয়েছেন কিনা? ভাগ করে দেওয়ার সময় আল্লাহকে ভয় করে দিয়েছেন তো? যদি হয় তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ্‌। আর যদি না হয় তবে মানে রাখুন আপনিও কিন্তু জাহান্নামের কীটই হচ্ছেন। এক ইঞ্চিও যদি অবৈধভাবে নিয়ে থাকেন তবে বিশাল শাস্তি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

আর যদি আপনার বাবা জীবিত থাকেন তবে তাঁর কাছে যান। গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন আপনার ফুফিরা যথাযথভাবে সম্পত্তি বুঝে নিয়েছেন কিনা? যদি ফুফিরা সম্পত্তি না পেয়ে থাকেন তবে বাবাকে জাহান্নামের ভয় দেখান। ফুফিদের বুঝিয়ে দিন। আপনার বাবাকে বলুন, তার পাপের ভাগ কিয়ামতের দিন আপনারা কেউ নিবেন না। অনেক সময় অনেকে হাইকোর্ট দেখায় বলে সব ভাই দিলে আমি দিব। কেউ না দিলে আমি কী করবো। এমন কথায় কান দেবেন না। হিসেবে আপনার বাবার অংশ থেকে যা পাবে তাই বুঝিয়ে দিন। সেটা যদি ব্যবহারযোগ্য জমির পরিমাণে না আসে তবে টাকার অংকে ফুফিদের সাথে মিমাংসা করুন। মনে রাখবেন আপনার জাহান্নাম থেকে বাঁচার পেরেশানীই আপনার কাজকে সহজ করে দিবে।

হে বোনেরা, আপনার সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গিটিকে যদি জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে চান, তাহলে আপনার হাজবেন্ডকে আজই তার বোনদের সমস্ত সম্পত্তির হিসেব বুঝিয়ে দিতে বলুন। এর জন্য নিয়মিত প্রেসার দিন। তাকে বুঝান।

যেহেতু দায়িত্ব পুরুষদের তাই পুরুষদের উদ্দেশ্য করেই এই পোস্ট। তবে পুরুষদের জালিম হিসেবে ভূমিকা রাখতে অনুপ্রেরণা দেন আরেক নারী। কত শতাংশ পরিবারে এমন হয় আমি জানি না। কারণ এই নিয়ে কোন গবেষণা আমার কাছে নেই। তবে আমার দেখা পারিবারিক সমস্যাগুলোর মধ্যে একটা বড় অংশ সংঘটিত হয় নারীদের প্ররোচনায় পুরুষদের মাধ্যমে। সাধারণত যা ঘটে তা হলো যখন একটি মেয়েকে একটি ছেলে বিয়ে করে তখন নানান ছুতোয় ছেলেটির মা-বোনেরা তার স্ত্রীর উপর জুলুম করতে প্ররোচনা দেয়।

কিন্তু কালক্রমে ধীরে ধীরে ঐ স্ত্রীটি এই সংসারের কর্ত্রী হয়ে যান। তখন তিনি তার হাজবেন্ডকে দিয়ে হাজবেন্ডের বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। এই দুষ্টচক্র বাংলাদেশে চলছে।

আল্লাহ আমাদের জালিম হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আমাদের মুসলিম তথা আত্মসমর্পনকারী হিসেবে কবুল করুন। যদিও প্রায় নব্বই শতাংশের মুসলিমের দেশে প্রায় নব্বই শতাংশই আমরা অমুসলিম। আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দান করুন।

পঠিত : ৫২৫ বার

মন্তব্য: ০