Alapon

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা যেভাবে চলছে...


মানেন বা না মানেন, সবাই সবকিছু জানেন। এখনো যদি না জেনে থাকেন তাহলে জেনে নেন, যদি জেনে থাকেন তাহলে রিভাইস দেন।

১. IEDCR ছাড়া আর কোথাও করোনা ভাইরাস সনাক্তের পরীক্ষা হচ্ছে না। আপনার যদি উপসর্গ থাকেও, তবুও আপনি বিদেশ থেকে আসেন নাই এরূপ ইত্যাদি কারণে আপনার নমুনা পরীক্ষা করার নিশ্চয়তা একেবারেই নাই। হটলাইনে ফোন দিলে পাওয়া যাচ্ছে না অনেক সময়, সশরীরে উপস্থিত হলেও লাভ হবে না কারণ নমুনাটা বাসায় যেয়ে সংগ্রহ করার কথা।

২. কুর্মিটোলা সহ অন্য যেসব হাস্পাতালে কোভিড১৯ রোগীর চিকিতসা দেয়ার কথা সেখানে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়া রোগী নেয়া হচ্ছে না।

৩. সরকারি বা বেসরকারি যেই হাস্পাতালেই উপসর্গ নিয়ে যাবেন না কেন, আপনাকে বলা হবে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করতে IEDCR থেকে। সেখানে গেলে কী হবে ১ নম্বর পয়েন্টে দেখে নেন।

৪. এই পর্যন্ত পড়ে যদি মনে হয় আপনি নিরাপদে আছেন কারণ আপনার এখনো জ্বর আসে নাই, তাহলে একটু মনে করায় দেই। করোনা ভাইরাস ১৮ ফিট পর্যন্ত ছড়ায়, ৩৭ দিন পর্যন্ত কারো শ্বাসনালিতে সুপ্ত থাকতে পারে। তার মানে আপনার আশেপাশে কেউ যদি সুস্থ কিন্ত ভাইরাস বাহক হয়ে থাকে, সে ১৮ ফিট দূর দিয়ে কাশি দিলেও আপনি সংক্রমিত হতে পারেন (যদি এখনো না হয়ে থাকেন আরকি)। আর শুধু কাশাকাশি না, যেকোন বস্তু ছোয়ার মাধ্যমে এমনকি বাতাসেও এই ভাইরাস থেকে যেতে পারে।

৫. শপিং ব্যাগ কেটে বানানো বাংলা মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক কিংবা কাপড়ের মাস্ক কোনটা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য যথেষ্ট নয়। গরমে ভাইরাস মরে না। 70°C এর এক ডিগ্রি নীচেও মরবে না। আজকের ঢাকার তাপমাত্রা 31°, সুতরাং দিবাস্বপ্ন দেখা বাদ দেন।

৬. রোগী দেখার ব্যাপারে এবং উপসর্গ সম্পন্ন রোগী দেখে পাঠায় দেয়ার ব্যাপারে যা কিছু সিদ্ধান্ত সেটার জন্য ডাক্তারদের দোষ দিয়ে লাভ নাই, দেশের যেটা সার্বিকভাবে সিদ্ধান্ত সেটাই সবাই মেনে চলছে। ফেসবুকে অলরেডি একজন ডাক্তারের বাবা কীভাবে নিউমোনিয়ার চিকিতসার জন্য কোন হাস্পাতালে ভর্তি হতে না পেরে মারা গেছেন সেই বর্ণনা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই আজাইরা কাজে ডাক্তারের দোষ দিয়ে কোন সুবিধা করতে পারবেন না।

৭. সবাই তো অনেক জ্ঞানী। অনেক বড় বড় কথা বলতেছে। নিজের জায়গা থেকে সতর্ক কতটুকু? নিজের কাজের জায়গা নিয়ে সতর্ক কতটুকু?

৮. ইরানে করোনা ছড়াচ্ছে কারণ ওরা সাচ্চা মুসলিম না। আর চাইনীজ কোরিয়ান ইউরোপিয়ান রা কাফের তাই মরে যাচ্ছে। তা আপনি স্যানিটাইজার আর টিস্যুপেপারের সাথে সরিষার তেল কিনে স্টক আউট করতেছেন তো? না মানে নাকে তেল দিয়ে শুয়ে থাকেন। আপনার তো কিছু হবে না কারণ আপনি মেয়েদের পেজে গিয়ে "বুরকা পড়ো না কেন" লিখে যেই পরিমাণ সাচ্চা মুসলিমের দায়িত্ব পালন করে আসছেন এতদিন, আপনার ছোয়া পাইলে তো ভাইরাসও মুসলিম হয়ে যাবে।

৯. ঠিকই ভাবতেছেন, বাংলাদেশে কেউ করোনা ভাইরাসের জন্য মরবে না। ভাইরাস সনাক্তকরণে পরীক্ষা করতে যেই নির্লিপ্ততা তাতে করে মনে করেন আগামী কয়েকদিন ওলাবিবির বাতাসে দেখেবেন সবাই ধুকে ধুকে মরতেছে। যদিও উপসর্গ সব কোভিডের মত থাকবে কিন্তু আর যাই হোক করোনা ভাইরাসে কেউ মরবে না, সে তো বাংলাদেশে এসে বাঙালী দেশপ্রেমিক ও সাচ্চা মুসলিম হয়ে গেছে।

১০. ডাক্তাররা মাশাল্লাহ আজব এক জাতি। ছোটবেলায় একটা কৌতুক শুনেছিলাম দোযখে নাকি অনেক গুলা কুয়া তে গরম পানিতে পাপীদের সিদ্ধ করতেছে। এখন সব কুয়ার সামনেই একটা করে পাহারাদার৷ কিন্তু একটা কুয়ার সামনে পাহারাদার ঘুমাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো ঘুমাচ্ছিস কেন? পাপীরা যদি পালায় যায়? তখন সে বললো, আরে এটা তো বাংলাদেশি পাপী দের কুয়া। এরা একজন পালাতে চাইলে আরেকজন পা টেনে ধরে বলে আমারে ফালাইয়া তুই পালাচ্ছিস কোথায়?

বিদেশী ডাক্তাররা যেসব স্যুটম্যুট পড়সে ওরা হইল গবেটের দল। আসল প্রোটেকশন তো আমাদের দেশের ডাক্তাররা পাচ্ছে। এই টিস্যু পেপারের মত ক্যাপ আর মাস্ক পড়লেই মনে করেন ভাইরাস পালাইয়া চীনে ফেরত যাবে। আমাদের হেলথ সিস্টেমকে ওরা ফলো করলে আজ এরকম মরে সাফ হইত না।

পঠিত : ৩৭৯ বার

মন্তব্য: ০