মহামারি কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠির জন্য নয়; ধার্মিক- বিধার্মিক সবার জন্যই...
তারিখঃ ১১ এপ্রিল, ২০২০, ২০:৩৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুদিন আগেও করোনা ভাইরাস নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলো। চীনা ভাইরাস বলে। এমনকি বিরোধী দলের প্রতিবাদ ও সতর্কতাকে রাজনৈতিক বলে উড়িয়ে দিয়েছিলো। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত রুগী ও মৃত্যুর মিছিলের বর্তমান পরিস্থিতি সেই ট্রাম্পকে মাটিতে নামিয়ে দিয়েছে। তার চিরায়ত ধমকির বুলেট এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ধুয়ে দিলেও নতজানু ভঙ্গিমা পরিষ্কার।
ইতালি স্পেন ফ্রান্স যুক্তরাজ্যেও করোনা আক্রান্ত রুগী বাড়ছে সীমাহীন ভাবে। চলছে মৃত্যুর মিছিল। এই দেশগুলোর অপেরা হাউস স্টেডিয়াম বিনোদন পার্ক পানশালাসহ জমায়েত স্থলগুলো এখন শুনশান অথচ করোনা আক্রান্তের শুরুর দিকে তারাও এগুলো উন্মুক্ত রেখে ড্যাম কেয়ারে ছিলো। কদিন আগেও হরদম উম্মাদনা চলেছে এসব যায়গায়।
গতকালের খবর হলো আহলে সৌদের ১৫০ জনের মত করোনা আক্রান্ত। সৌদি রাজা ও যুবরাজ রাজধানী ছেড়ে দীপান্তরে নিরাপদ হয়েছেন। তার অনেক আগেই কাবা ও মদীনার মসজিদ সাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বিন সালমানের দাম্ভিকতা জুলুম ও নষ্টামি ছড়িয়ে দেবার মাত্রা নতুন করে বলার নেই। যে বিন সালমান আওদার মতো আলিমদের ফাঁসির আয়োজনে উন্মাদ ছিলো তারা আজ নিজেদের থেকে নিজেরা পালাচ্ছে।
প্রিয় বাংলাদেশে আসি এবার। দিয়াবাড়ীতে কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্প করার উদ্যোগ নেয়া হলো। প্রতিবাদে উত্তরার বাসিন্দারা বিক্ষোভে নেমেছিলো রাস্তায়।
কদিন আগে উত্তরার আরেক ঘটনা। হাসপাতালের উপর চড়াও হলো উত্তেজিত জনতা। অভিযোগ করোনা রোগীর চিকিৎসা দিলো কেন হাসপাতাল। করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে সে এলাকায় এই ভয়ে।
অথচ দেখুন আজকের খবর হলো ডেঞ্জারজোন ঢাকার সবচে বেশি করোনা রুগী সনাক্ত হয়েছে সেই উত্তরায়!
এবার আসুন বাংলাদেশ নিয়ে একটু ইতিবাচক আলাপ করি তারপর আসছি গার্মেন্টস নিয়ে। ইউরোপ ও আমেরিকার প্রাথমিক ড্যাম কেয়ার চলাচল থেকে আমরা বেশ এগিয়েছিলাম লোক সমাগম কমিয়ে ফেলায়। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমাদের হাতে ডাক্তার ও নার্স যা আছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হলেও একেবারে কম নয়। আমাদের প্রতিটি উপজেলায় হাসপাতাল রয়েছে। ইউপিতেও কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সরকারি অনেকগুলো মানসম্পন্ন হাসপাতালসহ ৭০টির মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে দেশে। তাদের সক্ষমতাও দারুণ। দেশে তৈরি হচ্ছে পিপিই, মাস্ক। তবে ব্যাপক সংকট আছে ভেন্টিলেটরের। আশার কথা ওয়ালটন উৎপাদনে যাচ্ছে তবে বাজারে আসতে এখনো দেড়মাস সময় লাগবে।
কিন্তু সমস্যাটা হয়ে গেছে সমন্বয়ে। ঠিকমতো সমন্বয় হলে সীমিত সামর্থ্যেও অনেক বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতো হয়তো। এর মাঝেই আমরা ডাক্তারসহ চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের ভিলেন বানিয়ে ফেলেছি। অথচ তাদের সুরক্ষা সামগ্রী দিতে পারছি না ঠিকমতো। তাদের মনোবল বাড়াতে উদ্যোগী হতে পারছি না। যদিও নজর কেড়েছে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্তারা, তারা যেন এক একজন কাণ্ডজ্ঞানহীন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আশাকরি পরবর্তী দিনগুলোতে সমন্বয় বাড়বে এবং সেটা দ্রুত হবে ইনশাআল্লাহ।
বড় ক্ষতিটা করে ফেলেছি ৪০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে, তাদের ছুটি দিয়ে হঠাৎ সাধারণ ছুটির মাঝেই আবার এনেছে মালিকেরা, আবার বন্ধ দিয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন শ্রমিকের করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর খবর এসেছে। শুধু শ্রমিক মরবে বিষয়টি আর তেমন নেই, গতকালই ফলাও করে খবর ছেপেছে গার্মেন্টস মালিক শিল্পপতিও করোনার মিছিলে মৃত্যুর কোলে আছড়ে পড়েছেন।
লক্ষণীয় বিষয় হলো ত্রাণ চুরির ঐতিহ্য তারা ধরে রেখেছেন এই সংকটেও। নেতাদের দাম্ভিকতা কমে এলেও আল্লাহর উপর আস্থার যায়গা দৃশ্যমান হয়নি। বরং তেলের উপরে এখন গড়াগড়ি খাচ্ছেন তারা। কয়েকজন আলিমকেও দেখলাম তেলের উপর গড়াগড়ি খেতে, এই করোনা কালেও। ইতিমধ্যে অফিসিয়াল আনঅফিশিয়াল কয়েকজন নেতার করোনাকে বরণ করে পরপারে পাড়ি দেয়ার খবর এসেছে।
বিষয়টা এমন নয় করোনা অমুককে ধরবে তুমুককে ধরবে না। বিজ্ঞানবাদীকে ধরবে ধর্মবাদীকে ছাড়বে। বরং, মহামারী যে কাউকে ধরতে পারে যে কাউকে ছাড়তে পারে৷ মহামারীর মৃত্যু কারো শাহাদাত, কারো জাহিলিয়াত হতে পারে। ইসলাম এ সময় সতর্কতার কথা বলে। মুসিবতকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে। তওবা ইস্তিগফার ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার নির্দেশনা দেয়। আসুন সেদিকে মনোনিবেশ করি।
@Atif
মন্তব্য: ০