Alapon

পনেরো আগস্ট সম্পন্নকারী আর্মি অফিসাররা কি ছিলো; বিপ্লবী না খুনী?


সম্প্রতি শেহা একটা কথা বলেছে। সে বলেছে, তার বাবা শেমুর হত্যাকারীরা হলো পাকিস্তানী সরকার ও শিল্পপতিদের যৌথ অনুগ্রহে পাওয়া তাদের ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারের বাসায় গিয়ে একসময় তার মায়ের হাতের রান্না খেতো এমন লোকজন।

শেহা কালেভাদ্রে সত্য কথা বলে, প্রায় বিরল একটা ঘটনা তার জীবনে। এই কথাটা হলো তার মাঝে একটা।

প্রশ্ন হলো, শেমুর এতো স্নেহধন্য ঘনিষ্ঠ লোকজন, যারা তার নেতৃত্বে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তারাই কেন তাকে পুরো গোষ্ঠীসহ পকাৎ করে দিলো? তারা কি দেশের জনগণকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলা? না কি নিজেরা ক্ষমতার পিঠার ভাগ না খেতে পাওয়ার ক্ষোভ থেকে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছিলো?

তারা কি বিপ্লবী ছিলো? না কি ক্লাসিক কুত্তায় কুত্তায় কামড়াকামড়িকান্ডে অংশ নেয়া একদল কুত্তা ছিলো?

ঐ সময়কার প্রেক্ষাপট, বিভিন্ন মানুষের ভূমিকা এবং ঘটনাপ্রবাহ দেখলে পরিস্কার বুঝা যায় পনেরো আগস্টের হত্যাকান্ড আসলে জনগণের কোন বিপ্লব ছিলা না। বাংলাদেশের গান্ডু জনগণ সেই নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমল থেকেই মাঠের বাইরে থেকে হাততালি দিয়ে যাওয়া তৃতীয় পক্ষ। কোন একটিভ রোল নেয়ার যোগ্যতা তারা অর্জন করতে পারেনাই, যারা মাঠের খেলোয়াড় ছিলো তারাও বাঙালি হিসেবে কোনকালেই অন্যদের কথা চিন্তা করার জরুরত অনুভব করেনাই।

এই ঘটনায় অংশ নেয়া আর্মি অফিসাররা মাত্রই যুদ্ধ শেষ করেছে। ভারতের আনুকূল্যে তারা দ্রুত স্বাধীনও হয়ে গেছে। এখন সুফল ভোগ করার সময়। কিন্তু স্বাধীন দেশে তারা এতিম হয়ে গেছে। মুক্তিবাহিনী ও মুজিববাহিনী থেকে তৈরি হওয়া রক্ষীবাহিনী সব মাখন খাচ্ছে। আওয়ামী নেতাকর্মীরা সব স্বাধীনতার সুফল পাচ্ছে। এমতাবস্থায় আর্মি অফিসাররা নিজেদেরকে এই তুমুল ভোজের আসরে বঞ্চিত মনে করতে শুরু করলো।

এর সাথে যোগ হলো ডালিমের মতো লোকদের ব্যক্তিগত ক্ষোভ। সাড়ে তিন বছরে মুজিববাদীরা লক্ষ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমহানি করেছে সমস্যা নাই। কিন্তু তার নিজের বউকে যখন শেমুর চামচা গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলেপুলেরা লাগিয়ে দিলো তখন সে বিপ্লবের জন্য দন্ডায়মান হয়ে গেলো।

স্বৈরাচারী জমিদার মুজিব তার পাইক পেয়াদাদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে পারলেই তাকে এই পরিণতি বরণ করতে হতো না।

পনেরো আগস্টের আর্মি অফিসাররা জনগণের মুক্তির জন্য বিপ্লব করেনাই। বরং তারা নিজেদের ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনার ক্ষোভ থেকে কুত্তায় কুত্তায় কামড়াকামড়ি করতে গিয়ে হত্যাকান্ড সম্পন্ন করেছিলো। শুধু টার্গেটকে হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নাই, ঊনসত্তর থেকে শুরু করা বিহারী, অবাঙ্গালী এবং বেসামরিক নাগরিকদেরকে খুন ও গণহত্যা চালানোর মানবতাবিরোধী কাজ ও যুদ্ধাপরাধ করার অভ্যাসের ফলে ঐ রাতে তারা বাচ্চা ও নারী সহ সবাইকে চান্দে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। শিশু ও নিউট্রাল নারী বৃদ্ধ এদেরকে হত্যা করে কাপুরুষ এবং পশুরা।

সত্তর দশকে বিশ্বের নানা দেশে এসাসিনেশন, যুদ্ধ-বিগ্রহ, অভ্যুত্থান, বিমান ছিনতাই, বোমাবাজি এসবের একটা রোমান্টিক মহামারী চলতেছিলো। পনেরো আগস্টের আর্মি অফিসাররা মনে করেছিলো তারাও আন্তর্জাতিক হবে আর কি। কিন্তু সমস্যা হলো ক্ষমতার প্রতি লোভ পুরোদমে থাকলেও ক্ষমতার জন্য জনগণের সাথে ন্যুনতম যে সম্পর্ক থাকা দরকার তা তাদের ছিলো না। তারা নিজেদেরকে এলিট ভাইসরয় মনে করতো এবং পাবলিককে মনে করতো ব্লাডি বাস্টার্ড। অন্যদিকে এটাই ছিলো তাদের মনের গহীনে গোপন ভয়, দুর্বলতা। এই ভীতির কারণে তারা দেশ চালানোর ভার নিজেদের হাতে তুলে নিতে পারেনাই। বরং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরকেই শিখন্ডি হিসেবে দাঁড় করিয়ে তারা আড়াল থেকে মাখনখোর ক্ষমতাবান হতে চেয়েছিলো। এভাবে ফেইসবুক আইডি এবং পেইজ গ্রুপ ইত্যাদি চালানো যায় কিন্তু দেশ চালানো যায়নারে পাগলা।

বিপ্লবের জন্য সফলতা ছাড়া অন্য কোন ফলাফল গ্রহণযোগ্য না। তবে অন্তত পাসমার্ক পাওয়া যায় যদি সফল না হয়েও কোন পরিবর্তন আনতে পারে। সফল হওয়ার অর্থ হলো লক্ষ্য অর্জন করা। পনেরো আগস্ট রাতে যারা ট্যাংক নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলো তাদের লক্ষ্য কি ছিলো? শেমুকে শেষ করা? এই যদি হয় লক্ষ্য তাহলে এতো শর্টসাইটেড কাজকে বিপ্লব আখ্যা দেয়া সম্ভব না। জুলুম অত্যাচার থেকে দেশের মানুষের মুক্তি কি ছিলো তাদের লক্ষ্য? আপনি শিউর? একটু চিন্তা করে দেখেন তো।

পচাত্তর সালে যদি আমি জীবিত থাকতাম নিঃসন্দেহে ফেরাউনের পতন উপলক্ষে পুরো দেশের সবার সাথে মিলে মোবাঙালি হিসেবে আমিও মিস্টি খেতাম এবং ঐসব আর্মি অফিসারদেরকে সাময়িক পরিত্রাণত্রাতা হিসেবেই গ্রহণ করতাম। আমাদের আর কিইবা করার আছে? (একটু জাফর স্টাইল, বন্ধুরা কেমন দিলাম?)

কিন্তু পয়তাল্লিশ বছর পরে এসে ঐ যুগে পড়ে থাকা বোকামী। এখন বরং দেখতে হবে জনগণ হিসেবে আমার আলটিমেট এচিভমেন্ট কি? আমার অর্জন হলো যিরো। বাহাত্তর থেকে পচাত্তর সালে বাংলাদেশ যেমন ছিলো এবং যা ছিলো, বর্তমানেও হুবহু তাই আছে। ব্যাক টু ব্যাক ফটোকপি। তাহলে পচাত্তরের দরকারটা কি ছিলো?

এই অবস্থার মূল কারণ হলো এই দেশের উপরের তবকার শিক্ষিত ও সুবিধাপ্রাপ্ত লোকজন পুরোটা সময় জুড়ে কুত্তায় কুত্তায় কামড়াকামড়িই করে গেছে, জনগণের কথা বিন্দুমাত্র চিন্তা করেনাই। দরকারও মনে করেনাই।

ইন ফ্যাক্ট, এই দেশের মুক্তিযুদ্ধটাও একটা কুত্তায় কুত্তায় কামড়াকামড়ি। পাকিস্তানীরা সব খাইয়া ফেলতেছে, আমরা খাইতে পারতেছি না এই মূল কারণটাকে টুইস্ট করে সাম্যের কথা বলে আমাদের মতো মোবাঙালিকে রাস্তায় নামায়া দিছিলো শেমু ও তার চাটার দল। সেই সাম্য যে আসলে কতটা সাম্য আর কতটা ধান্দা তার উত্তর সবচেয়ে ভালো জানে সিরাজগঞ্জে খাবার না পেয়ে বরং বাবার মুখে ধমক খেয়ে আত্মহত্যা করা ক্ষুধার্ত শিশুকন্যার পিতা।

@Aman

পঠিত : ৩৪৮ বার

মন্তব্য: ০