Alapon

ওরা শিক্ষক নয়! ওরা রাজনীতিবিদ।

আমাদের ঢাকা ভার্সিটির স্যারেরা আগের মতোই আছেন। ১৫/২০ আগে যেমনটি তাদের দেখেছিলাম, অবিকল সেই রকম।


আজ থেকে ১৫ বছর আগে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ভিসি ছিলেন আনোয়ার স্যার। তখন শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট ছিলেন সুলতানা শফি আপা। উনি আওয়ামীলীগের আমলে নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন চলছে বিএনপির আমল। ভিসি আনোয়ার স্যারও বিএনপির। কাজেই সুলতানা আপাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলো। এটা নিয়ে পানি ঘোলা হলো। এরপর যে কান্ড আনোয়ার স্যার ঘটালেন, সেটি ইতিহাসের অন্যতম কলংকজনক অধ্যায়। মেয়েদের হলে রাত্রিবেলায় একগাদা পুরুষ পুলিশ ঢোকানো হলো এবং তারা একটি নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করলেন। সেই পরিস্থিতির বর্ণণা দেয়ার রুচি আমার নেই।



এই নিয়ে যখন ছাত্র আন্দোলন দানা বাঁধলো, ভিসির পদত্যাগের ন্যায়সঙ্গত দাবী উঠলো, তখন ভিসি তারা পোষা ছাত্রবাহিনী এবং পুলিশকে ''লেলিয়ে'' দিলেন। আমার মনে আছে, আমরা তখন রোকেয়া হলের সামনে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করেছি। হলের বিদ্যুৎ , পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। চারিদিকে পুলিশের নিশ্চিদ্র ঘেরাটোপ। আমরা যাতে না খেয়ে, পানির অভাবে আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে বাসায় চলে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান চিপাচাপা দিয়ে কেউ কেউ রুটি কলা নিয়ে আসছেন। শত শত শিক্ষার্থীরা মিলে ওটাই ভাগ করে খাচ্ছি। অবশ্য পেট খালি থাকলে, পিঠ খালি ছিলো না। সুযোগ পেলেই পুলিশ আর সরকারি ছাত্র বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ছিলো আমাদের উপর।


আমার স্পষ্ট মনে আছে, সরকারি ছাত্রবাহিনী তখন মাইক্রোবাসে করে ঘুরতো। ভিসির বাসায় গিয়ে মিটিং করতো। তাদের জন্য এলাহী খাবারের ব্যবস্থা ছিলো।


তখনকার ভিসি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নেই। তিনি ''বিএনপির ভিসি ''। শিক্ষকের পোষাক ছেড়ে উনি পুরোপুরি রাজনীতির জার্সি গায়ে দিয়েছেন।


এর আগের আমলের কথা বলি।উনার ঠিক আগেই ভিসি ছিলেন আজাদ স্যার। বেশ কিছু আন্দোলনের ইস্যু নিয়ে আমরা উনার দরবারেও গিয়েছিলাম। উনার দপ্তর ঘেরাও করেছিলাম। সময় বুঝে উনিও শিক্ষকের পোষাক ছেড়ে আওয়ামীলীগের জার্সি গায়ে আমাদের মোকাবেলা করেছিলেন।


গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের টিচাররা বলেন, কত গরুগাধা পিটিয়ে মানুষ করলাম। গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত সেইসব সহজ সরল শিক্ষকদের আসলেই সেই যোগ্যতা আছে। তারা ''পিটিয়ে'' হোক আর ''পটিয়ে'' হোক কিছু সংখ্যক গরু গাধাকে মানুষ করতে পারতেন।


প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে আমরা মানুষ হতেই গিয়েছিলাম। উনারা আমাদের মানুষ করতে পারেননি। উনারা আমাদের শিক্ষক হতেও পারেননি। দলীয় জার্সি গায়ে উনারা দলীয় কর্মীই থেকে গেছেন।


সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে আমরা শ্রেফ ''শিক্ষক'' চেয়েছিলাম । পেয়েছিলাম আওয়ামী অথবা বিএনপি কর্মী।


এই আপসোস আমরা কোথায় রাখবো? 


(ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)


পঠিত : ৫০৮ বার

মন্তব্য: ০