Alapon

করোনা ভাইরাস কি আমাদের শুধু ক্ষতিই করেছে, উপকার করেনি?


করোনা ভাইরাসের প্রকপ এবং এর কারণে কী কী ক্ষতি হতে যাচ্ছে, সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে কীরূপ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে- সেসব বিষয়ের খবর জানতে প্রায় সকলেই টিভির সামনে আগ্রহ নিয়ে বসে। কেউ কেউ ফেসবুকের টাইম লাইনে উপরোক্ত বিষয়গুলোর তথ্য সম্পর্কে জানতে ত্রামাগত স্ক্রল করতে থাকে। উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আমিও বিগত বেশ কয়েকদিন উদ্বিগ্ন ছিলাম এবং সেসব বিষয় জানার জন্য আলজাজিরা, এনডিটিভি, বিবিসি নিয়মিত দেখছিলাম।

করোনা ভাইরাস নিয়ে যতোই নিউজ দেখছিলাম, ভিতরে ভিতরে উদ্বিগন্নতা বোধ করছিলাম। অবচেতন মনে নেতিবাচক চিন্তা জেঁকে বসতে শুরু করেছিল। কিন্তু আমি জানি, এই মহামারির সময়ে নেতিবাচক চিন্তার সাগরে ডুব দিলে নিজের মনোবল হারিয়ে ফেলব এবং এই দূর্যোগ মোকাবেলার সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলব। একারণেই ইতিবাচক দিকে মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

আসরের নামাজ পড়ে ভাবছিলাম, করোনা ভাইরাস কি আমাদের শুধু ক্ষতিই করেছে, উপকার কিছু করেনি?

উপকারের দিকটা প্রথমে নিজের দিক থেকেই ভাবতে শুরু করলাম। আজ প্রায় ৮ বছর পর আমি বাড়িতে রমজান পালন করছি। এর আগে বিভিন্ন সমস্যা, পড়াশোনা, ব্যাস্ততা এবং চাকরি করার কারণে বাড়িতে রমজান পালন করার সুযোগ হয়নি। ঢাকাতেই রমজান পালন করেছি। এমনকি বেশ কয়েকটি ঈদ ঢাকাতেই পালন করেছি। কিন্তু এবার রমজানের প্রায় ৫ দিন আগেই বাড়িতে চলে আসছি। আব্বা আম্মার সঙ্গে সেহরি ও ইফতার করছি। এটাতো করোনা ভাইরাসের কারণেই সম্ভব হয়েছে।

তারপর করোনা ভাইরাসের কারণে মসজিদে নিয়মিত নামাজ এবং তারাবি পড়ার সুযোগ নেই। যার কারণে আমরা বাড়িতেই চাচা, চাচাতো ভাইরা মিলে মোট ১৮ জন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একসাথে জামায়াত করে আদায় করছি। এভাবে সবাই একসাথে হওয়া হয় না, বহু বছর। তারপর এভাবে একসাথে জামায়াত করে নামাজও পড়া হয়নি কখনো। একসাথে জামায়াত করে নামাজ পড়ার কারণে, পরস্পরের প্রতি যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দ তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারিবারিক বিভিন্ন কারণে যে মনোমালিন্য ছিল, তা সমাধান হয়ে যাচ্ছে- কেবল একসাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার কারণেই। এটা সম্ভব হয়েছে করোনা ভাইরাসের কারণে।

এরপর রমজানের কথা বলি, তাহলে বলতে হয় বিগত বেশ কয়েক বছরের মধ্যে এটাই আমার জীবনে সেরা রমজান। গত কয়েক বছরে রমজানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। কারণ, সারাদিন অফিস করতে হয়েছে। আবার রমজান মাসজুড়ে চলে ইসলামি বইমেলা। সেখানে ইফতারের পর একবার অবশ্যই যেতে হতো। সেখান থেকে তারাবি নামাজ পড়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১ টা বেজে যেত। এরপর ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। রমজানগুলো এভাবেই চলে যাচ্ছিল। নফল ইবাদত করার তেমন সুযোগই পাচ্ছিলাম না। এবার রমজানে নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহ সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আর এটাও সম্ভব হয়েছে করোনা ভাইরাসের কারণে।

করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের জীবনের হানি হয়েছে সত্য। তবে, আমরা যে সামাজিক মানুষ তা কিন্তু করোনা ভাইরাসই অনুধাবন করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

পঠিত : ৫৩৮ বার

মন্তব্য: ০