Alapon

কিছু কথা, কিছু ব্যাথা এবং আমাদের বাস্তব অবস্থা...


ঘুম থেকে উঠে এমন অমানবিক ও বর্বর আচরণ এর খবর দেখবো তা ভাবিনি।
আমাদের দেশের মানুষের অমানবিকতার গল্পটি শুনি আগে।

নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত একজন মেডিকেল অফিসার ও তার পরিবারের ১৮ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত।
মানুষকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে সেই চিকিৎসক আক্রান্ত এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যরা।
তাদের মনের অবস্থাটা অনুধাবন করেন একটু।
অজানা শংকা চোখে মুখে।
মানুষ গুলো ঘুমাতে পারছেন কি?

এর মধ্যে এলাকাবাসী তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন।
বাড়িতে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করছেন।
অথচ সেই চিকিৎসক পরিবার সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা।

তাদের দরকার একটু সহমর্মিতা।
কিন্ত তারা কি আচরণ প্রত্যক্ষ করছেন।

আফসোস।
বড়ই আফসোস।

এর আগে আমরা অনেক দেখেছি,কোভিড আক্রান্ত বা কোভিড চিকিৎসায় জড়িতদের ভাড়া বাড়ি থেকে উচ্ছেদ এর চেষ্টা।
বাড়ির মালিকদের অমানবিক আচরণ।

একজন অমানবিক মানুষ যখন অন্যের কাছ থেকে মানবিকতা প্রত্যাশা করেন, তখন খুব অবাক হইনা আমি।
তারপর ও দেশের চিকিৎসকরা মানবিকই থাকবেন এটা আমি দৃঢ় ভাবে বলতে পারি।
তবে এসব আচরণ মনের গহীনে যেই ক্ষত তৈরি করে, তা থেকে যাবে অনেককাল।

Foundation for doctor's Safety, rights and responsibilities, FDSR এর তথ্য মতে দেশে কোভিড ১৯ আক্রান্ত চিকিৎসক এর সংখ্যা ৪৬৭ জন।

আমাদের একজন সহকারী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে ইন্তেকাল করেছেন যিনি গরীরের ডাক্তার, দয়ালু ডাক্তার হিসাবে লাখো মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন।

চিকিৎসকরা অরক্ষিত।
তাদের পিপিই নাই।
তাদের N95 মাস্ক নাই।
ফেস শিল্ড নাই।।

দৈনিক সমকাল এর সূত্র মতে, সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরেজ ডিপো, CMSD সারাদেশে ১১ লাখ পিপিই বিতরণ এর কথা বলেছে।
সারাদেশে সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসক, নার্সসহ মোট ৮৫ হাজার স্বাস্থ্য কর্মী।
CMSD এর হিসাব মতে প্রত্যেকে ১৩ সেট করে পিপিই পাবার কথা
কিন্ত এই পরিমান পিপিই তো কেউ পায়নি।
এগুলো তবে গেলো কোথায়?

মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন আপনাদের কাছে?
N 95 মাস্ক নিয়ে দুইনম্বরির খবর আপনারা জেনেছেন।

পিপিই লাগবেনা বলেছিলেন মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়।
উনাদের প্রস্তুতির গালগল্প শুনেছি আমরা।
উনারা করোনার চেয়েও শক্তিশালী বলে শুনেছি আমরা।

করোনা ভাইরাস খুব দ্রুতই এই দেশ ও পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে এমন ভাবার কারণ নেই।
যারা Singapore University of technology and design, SUTD এর অনুমান নির্ভর গবেষণায় আস্থা রাখতে চাচ্ছেন, তারা অবুঝ।
এই করোনা ১৯ মে এর মধ্যে ৯৭% এবং ৩০ মে এর মধ্যে ৯৯% শতাংশ বিদায় নিবে এটা ভুল।

বিগত প্যান্ডেমিক গুলো আমাদের বলে ১২-৩৬ মাস থাকে এমন মহামারী।
সে হিসেবে ২০২২ এর মে অব্দি এই ভাইরাস পৃথিবীতে থাকবে।
আর ভ্যাক্সিন পেতেও দেড় থেকে দুই বছর লাগবে।

বরং বলা যায় বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ।
টেস্ট ব্যাপক আকারে করলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও আক্রান্তের সংখ্যা বুঝা যেত।
এবং মে মাসে বাংলাদেশে করোনার চূড়ান্ত ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা স্পষ্ট হবে এতে সন্দেহ নেই।

এর মধ্যে গনস্বাস্থ্যের কিট নিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা ও বিশ্লেষণের চেয়ে রাজনীতি বেশি হচ্ছে।
দেশের প্রয়োজনে এই কিট কিভাবে দ্রুত কাজে লাগানো যায় তার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ রাখছি।।

ইতিমধ্যে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে।
তাদের মাধ্যমে সারাদেশে সেই ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
রেস্তোরাঁ খুলে দেবার কথা শুনছি।
সব দেখে সব শুনে একজন সচেতন চিকিৎসক হিসেবে আঁতকে উঠি।
পরিনতি সুখের হবার নয়।

ইতিমধ্যে দেশে Humanitarian crisis দেখা যাচ্ছে যা চরম আকার নিবে।
দেশের ইকোনমি ভেঙ্গে পড়বে।
হেলথ সিস্টেম ইতিমধ্যেই ওভারলোডেড।
চিকিৎসকরা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।
দেশের গরীব, খেটে খাওয়া, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো যাদের ইনকাম ৬ ডলার এর নিচে তাদের অবস্থা ভাবলেই দিশেহারা হই।।

অভাব বাড়লে ক্ষুধা বাড়বে।
ক্ষুধা বাড়লে অপরাধ বাড়বে।

আপনাদের চিকিৎসা দিতে না চাইলেও গালি দেন
চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হলে বাড়ি থেকে, এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে চান।
ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেন।

দেশের চিকিৎসকরা যাবে কোথায়??

দেশের সব চিকিৎসকদের অন্তরে গেঁথে নেওয়া উচিত।

তুমি যখন পশু
আমি তখন কসাই
তুমি যখন মানুষ
আমি তখন মানবিক চিকিৎসক।।

আপনাকে আবারো বলছি নিজ জায়গায় সচেতন হউন।
এই ক্রান্তিলগ্নে মানবিক হউন।
সচেতন থাকুন।
হাত ধুতে থাকুন।
হাইজিন মেনে চলুন।
Social distancing মেনে চলুন।

বাকিটা আল্লাহ এর উপর ছেড়ে দিন।
তিনিই আমাদের রক্ষা করতে পারেন একমাত্র।

@জোবায়ের

পঠিত : ৬১৫ বার

মন্তব্য: ০