Alapon

আসুন, কৃতজ্ঞ হওয়ার চর্চা করি...


বেশ কয়েক বছর আগের কথা। আমার মামা তখন মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এর আরএমও। তখন হঠাৎ একদিন পরিচিত এক ভাই ম্যাসেঞ্জারে বললেন, ‘তোমার মামার আজ খবর আছে!’ ম্যাসেজটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে কল করলাম। সে অনেকটা হাসতে হাসতে বলল, ‘তোমার মামার মনে হয় আর ডাক্তারি করা হবে না। বাকি জীবন জেলেই কাটাতে হবে।’

প্রশ্ন করলাম, ‘কেন? মামা কী করেছে?’

সে বলল, ‘তোমার মামা একজন রোগীকে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলেছে। সাংবাদিকরা তোমার মামার আজ খবর করে দিবে। কাল পত্রিকায় তোমার মামার ছবি দেখিও!’

তারপর আম্মার কাছে পুরো ঘটনা শুনলাম।

ইলেক্ট্রিক শক খেয়ে একজন সিরিয়াস রোগী হাসপাতালে আসে। তখন ডিউটিরত ডাক্তার চেকআপ করে দেখে, রোগী মারা গেছে। তারপর ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে তাদের বিদায় করে দেয়।

ভ্যানে করে লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ নাকি লাশ নড়ে ওঠে। তখন রোগীর আত্মিয়-স্বজন মনে করে, সে এখনো বেঁচে আছে। তারপর তারা তাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। অন্যদিকে, রোগীর আত্মীয়-স্বজন হাসপাতালে ঝামেলা করতে শুরু করে। যেখানেই ঝামেলা সেখানেই সাংবাদিকের উপস্থিতি।

সাংবাদিক সাহেবরা হাসপাতালে এসে প্রথমেই মামাকে ধরল। কারণ, মামা আরএমও। সাংবাদিকরা বলল, ‘আমাদের খুশি করে দেন। না হলে আপনাকে জড়িয়ে কাল সংবাদ হবে, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু।’

তারা হুমকি দিয়ে হাসপাতালের বাহিরে অপেক্ষা করতে থাকে। অন্যদিকে মামা অপেক্ষা করতে থাকেন, রংপুর হাসপাতাল থেকে কী রিপোর্ট আসে। পরবর্তীতে রংপুর হাসপাতারের ডাক্তাররা বললেন, ‘রোগী অনেক আগেই মারা গেছে।’

এবার মূল বিষয়ে আসি। যে ব্যক্তি আমাকে সংবাদ দিয়েছেন, তার কথা শুনে মনে হয়েছিল, মামা এ রকম একটা বিপদে পড়ায় সে মহা খুশি। অথচ সে মামার কাছে ফ্রি চিকিৎসা করায়। এমনকি তাদের পুরো পরিবার চাচা, চাচী, ভাতিজা, ভাতিজি, পেটরা-পুটরা সব মামার চেম্বারে দৌড়ায়। কিন্তু চিকিৎসা শেষে মামা তাদের থেকে টাকা নিয়েছেন এমনটা সম্ভবত কখনো হয়নি। অথচ সেই ব্যক্তি কিনা মামার বিপদে মহাখুশি।

এই ঘটনা কেন বললাম?

প্রত্যেকেই একটু স্মৃতির পাতা হাতড়ে দেখুন তো, ডাক্তারদের সাথে আপনার স্মৃতি যতটুকু আছে তার মধ্যে তিক্ততা কতটুকু আর মধুরতা কতটুকু! আমার ধারণা তিক্ততার পরিমাণ খুব বেশি হবে না। কিন্তু আমরা শুধু তিক্ত কথাগুলোই মনে রেখেছি, কিন্তু তারা আমাদের জন্য কী করেছে, আর করছে তা মনে রাখছি না।

অর্থাৎ আমরা জাতি হিসেবে অকৃতজ্ঞ! আজও দেখছি কতক ভাই ফেসবুকে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে বলে যাচ্ছেন। হ্যা স্বীকার করছি, ডাক্তারদের মধ্যে সবাই ফেরেশতা নয়। তাদের মধ্যেও খারাপ আছে। কিন্তু তাই বলে সকল ডাক্তার খারাপ হয়ে যায় না।

প্রিয়ভাই! আপনি আমিতো করোনার ভয়ে বাড়িতে গিয়ে বসে আছি। কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে ডাক্তাররা। তাদের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ঠ পিপিই না থাকার পরও তারা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখন অন্তত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। মনে রাখবেন, যে আল্লাহর বান্দার প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারে না, সে মহান আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হতে পারে না।

পঠিত : ৫৮৪ বার

মন্তব্য: ০