Alapon

দাড়ি কাটা বৈধ হলে মিউজিক কেন নয়?


ধর্মীয় বিষয়ে আমার জ্ঞান খুব সামান্য, তাই ধর্মীয় বিতর্কে যেতে চাই না। তবু বিতর্ক দেখে অভিজ্ঞতা থেকে কিছু লিখতে বাধ্য হলাম। আমি তখন দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার ছাত্র, শিবিরের সাথী। দারুন্নাজাতে অতিরিক্ত ধর্মীয় গোড়ামি ছিল, সেখানে শিবির করা খুবই কঠিন। সেখানে শিবির করার কারণে কেউ কেউ অধিক এগিয়ে আমাদের কাফের বলতেও দিধা করতো না। তবুও আমরা যারা শ্রোতের বিপক্ষে গিয়ে সংগঠন করতাম তাদের নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হতো। বিশেষ করে শিবির নেতাদের দাড়ি না রাখা আর জামায়াত নেতারা এত বড় আলেম হয়েও নারীর পাশে বসে কেন? এই দুই প্রশ্ন ছিল খুবই কমন। সেখানে থাকতে ভাবতাম আসলেই যারা দাড়ি রাখে না তারা গুনাহের কাজ করে। মহানগরী, কেন্দ্র যে দায়িত্বশীলই আসুকনা কেন এই দুই প্রশ্ন করতে ভূর হতো না। বলতাম, ভাই আমরা এত ভালো কাজ করি দাড়িটা রাখলে আর খালেদাকে ছাড়লে কি সমস্যা? তাহলেতো আমার প্রশ্নের উদ্ধে চলে যেতে পারি। তখন তারা বলতেন, একজন দাড়িওয়ালার ছেয়ে একজন দাড়ি ছাড়া লোক যদি ইসলামের দাওয়াত বেশি দিতে পারে তাহলে সেটা বেটার নয় কি? তাছাড়া দাড়ি বাধ্যতামূলক করলে আমরাতো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছেলেদের ইসলামে বেশি টানতে পারবো না। তারা আসতে চাইবে না। তাই আমরা দাড়ির চেয়ে ইমানদার বানানো, নামাজি বানানো এবং মাদকমুক্ত তারুণ্য গঠনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আর খালেদা জিয়ার সঙ্গে জোটটা একটি রাজনৈতিক কৌশল। এর পক্ষে তারা মদিনা সনদ ও হুদায়বিয়ার সন্ধির দলিল দিতেন।


তখন যদিও মনে হতো নেতারা দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু দারুননাজাত থেকে বের হয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিণায় এলাম তথন বুঝতে শুরু করলাম আসলেই দায়িত্বশীলরাই ঠিক বলেছেন। আমি শুধু মাদরাসার বাউন্ডারির মধ্যে থাকায় তখন দেশে যে মাদ্রাসার বাইরেও অনেক মানুষ আছে, তাদের মাঝেও ইসলামের দাওয়াত দেয়া উচিত এটা উপলব্দি হয়নি। আর এখন কর্মজীবনে এসে তো পুরোপুরি টের পাচ্ছি, এখন ইসলামের পক্ষে কাজ করার যতটুকু সুযোগ পাচ্ছি দাড়ি রেখে, মাদরাসার আঙ্গিনায় পড়ে থাকলে হয়তো কখনো এতটা পেতাম না।


মজার বিষয় হলো মাদ্রাসায় থাকতে যাদের কাছে শুনতাম নারীর পাশে বসা হারাম এখন দেখি তারাও বসছেন। আরো অনেক কিছুই শিথিল হতে দেখছি।
যাইহোক আমার আজকের আলোচনার মূল বিষয় মিউজিক। মিউজিক নিয়ে কয়েকদিন ধরে দেখছি বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। কয়েকজন ইসলামী সংগীত শিল্পী মিউজিক দিয়ে গান করছেন। যা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন। আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে গিয়ে দেখছি আসলে বর্তমান তরুণ সমাজের মাঝে ইসলাম পৌঁছানো কতটা কঠিন। তারা কিভাবে অপসংস্কৃতিতে ঝুঁকে পড়ছে। এমনো অনেক তরুণ আছে যারা বছরেও কখনো মসজিদে যায় না। এদেরতো ইসলামী সঙ্গীত শুনতে বলাতো অপাত্রে কন্যাদান ছাড়া কিছুই না। অথচ এসব তরুণ তথ্যপ্রযুক্তিতে এতটা ডুবে থাকে যে একটু কৌশল অবলম্বন করলে এদের মাঝেও সহজে দাওয়াত পৌঁছানো যায়। যদি নেতাদের আগের বক্তব্যকে টেনে বলি, দাওয়াতের স্বার্থে কিছুটা শিথিল করে যদি সাধারণ মানুষের মাঝে দাওয়াত পৌঁছানো যায় তাহলে তাতে সমস্যা কি? এটা কি ইসলামের জন্য এনার্জি নয়। আমার বুঝে আসছে না এটা এনার্জি না হয়ে এলার্জির করাণ হবে কেন?


তবু যদি বলেন, হারামকে যুক্তি দিয়ে বৈধতা দেয়া যায় না। যদিও নিজে বুঝি এটা ইসলামের স্বার্থেই রাজনৈতিক কৌশল তবু তর্কের খাতিরে বলতে হয়, বেগানা নারীর সঙ্গে দেখা দেয়াও হারাম। দাড়ি না রাখার বিষয়ে ইসলাম কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। আগে সেটা মানুন পরে হালাল হারামের বিতর্কে আসেন।


সবশেষে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বিতর্কের জন্য। তবে আমি এ বিতর্কে যেতে চাইনি। আমাদের বাড়াবাড়ির মাত্রাটা বেড়ে যাওয়া দেখে বাধ্য হয়েছি। শুধু এটা বুঝাতে লিখতে বাধ্য হয়েছি যে, ইসলাম কিন্তু বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়ারই পক্ষে, ইসলাম সবসময় সহজের পক্ষে। প্লিজ দ্বীনকে সহজ করুন, কঠিন করবেন না।


এই গান কি সমাজের একটি সমস্যা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করছে না? (ভিডিও দেখে মন্তব্য করুন)

পঠিত : ১৬৬৬ বার

মন্তব্য: ০