Alapon

বিখ্যাত সাহাবী আবু জর গিফারী রা.-এর প্রাজ্ঞতা ও শিক্ষা...


তখন হজরত ওসমান (রা.)-এর খিলাফতকাল চলছে। সেই সময় আবু জার (রা.) হজে গেলেন। রাসূলুল্লাহর বিখ্যাত সাহাবি তিনি, যার সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আসমানের নিচে এবং জমিনের ওপররে সর্বাধিক সত্যবাদী ব্যক্তিটি হলো আবু জার ।’ তাহলে বলুন, এমন মানুষটির সঙ্গে কে না ভাব জমাতে চায়; সঙ্গ পেতে চায়।

হজের কাজ এবং বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যস্ত হলেন আবু জার। প্রাণোচ্ছ্বাস পরিবেশে কুশলাদি বিনিময় এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল।

ঠিক সেই মুহূর্তে একজন এসে আবু জার (রা.)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করল। আবু জার তাকে নিরাশ করলেন না। এগিয়ে গেলেন তার দিকে। বললেন, ‘তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছ?’

‘জি চাচ্ছি। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘটে গেছে। সেটাই আপনাকে জানাতে চাচ্ছি।’ লোকটি উত্তর দিলো।

‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ মুখে মুখে আওড়ালেন আবু জার। তারপর বললেন, ‘আচ্ছা বলো কী এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা বলার জন্য তুমি এত উদগ্রীব?’

‘বিষয়টি হলো আমাদের আমিরুল মুমিনিনকে নিয়ে নিয়ে। তাকে মিনায় পুরো চার রাকাত নামাজ পড়েতে দেখেছি। অথচ কসরের বিধান অনুযায়ী নামাজ সংক্ষিপ্ত করার কথা ছিল। এটা কি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়?’ কথাগুলো একটানা বলে গেল লোকটি।

লোকটির কথা কোনো উত্তর না দিয়ে আনমনে বলতে থাকলেন, ‘আহ আমিনরুল মুমিনিন। আপনি এটা কী করলেন। কী করলেন আপনি। আপনার কাছ থেকে এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশা করিনি।’ তারপর সুউচ্চস্বরে বললেন, আমি নিজেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পেছনে নামাজ পড়েছি। তিনি কসরের বিধান অনুযায়ী নামাজ পড়িয়েছেন। তারপর প্রথম আমির আবুবকর সিদ্দিকের পেছনে একইভাবে নামাজ পড়েছি। তিনি গত হওয়ার পর হজরত ওমার ইবনে খাত্তাবের পেছনে সেভাবেই পড়েছি। আপনি তার ব্যতয় ঘটাতে পারেন না। না, আপনি কোনোভাবেই এটা করতে পারেন না।’ বেশ কঠোর ভাষায় নিন্দাসূলভ কণ্ঠে কথাগুলো বললেন আবু জার (রা.)।

এরপর সবাই চুপ।

কিছুক্ষণের মধ্যে পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজের সময় হলো। ইমামাতি করলেন আবু জার। কিন্তু তিনিও পুরো চার রাকাত নামাজই পড়ালেন। নামাজের মধ্যে তো আর কিছু বলা যায় না তাই সবাই অপেক্ষা করলেন নামাজ শেষের।

নামাজ শেষ হলো। মুসল্লিদের মধ্য থেকে গুণগুণ শব্দে আওয়ার আসা শুরু হলো। এরপর একজন সাহস করে বললেন, ‘রাসূলের সাহাবি, আপনি কিছুক্ষণ আগেই তো আমিরুল মুমিনিনের সমালোচনা করলেন। আর এখন আপনি নিজেই কসর না করে পুরো চার রাকাত পড়লেন? ব্যাপরটা কি খটকা লাগার মতো নয়?’

আবু জার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন না। মাথা তুলে চারপাশটা তাকালেন। তারপর বেশ কোমলস্বরে বললেন, ‘আমার প্রিয় ভাইসব। দেখুন মতভেদ খুবই খারাপ জিনিস। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার পর যারা আমির হবে তাদের অপমান করো না। যে ব্যক্তি তাদের অপমান করবে তারা তাদের কাঁধ থেকে ইসলামের রশি ছুড়ে ফেলে দেবে, নিজের তওবার রাস্তা বন্ধ করে দেবে।’

এতটুকু বলে থামলেন আবু জার (রা.)।

পঠিত : ১১১০ বার

মন্তব্য: ০