Alapon

দুনিয়ামুখী মানুষদের এই দুনিয়াটাই সবার আগে ভুলে যায়!

এক ছোটভাই ইনবক্সে একটি ভিডিও লিংক দিল। ভিডিওটা ছিল প্রয়াত চিত্র তারকা মান্নার। ভিডিওটা দেখে হাসি পেল। নাহ! ভিডিওটির কনসেপ্ট দেখে হাসিনি। মান্নার কথা ভেবে হেসেছি।


নায়ক মান্নাকে আমরা মজা করে মাগনা ভাই বলে ডাকতাম। মাগনা ভাই বেঁচে থাকতে তার বিরাট বিরাট ছবি পত্রিকার পাতায় শোভা পেত। সাংবাদিকরা তার পিছনে পাগলা কুত্তার মত ছুটত। কত্তো গ্লামার, যশ খ্যাতি। কিন্তু তার মরনের সাথে এইসব যশ,খ্যাতি এবং গ্ল্যামার তার লাশের সাথে সাথে কবরস্থ হয়ে গেছে। এখন তার মৃত্যু দিবস ছাড়া মাগনা ভাই এর কথা কোথাও দেখাই যায় না।



বাংলা সিনেমার ইতিহাসের একজন শক্তিমান অভিনেতার নাম হুমায়ূন ফরীদি। হুমায়ূন ফরীদির অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়নি এমন পাবলিক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর খুঁজে পাওয়া গেলেও বুঝতে হবে এই পাবলিক অভিনয় বুঝে না! আর তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরীর ভান্ডারের কথা হয়তো অনেকেই জানে না। সেই লাইব্রেরীর বই দিয়ে শাহবাগে অবস্থিত পাবলিক লাইব্রেরীর মত আরো একটি লাইব্রেরী দেওয়া সম্ভব।


বেঁচে থাকা অবস্থায় এই গুনী অভিনেতার সাক্ষাৎকার নেবার জন্য সাংবাদিকদের দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। তার সাক্ষাৎকার নিতে পারলে সম্পাদক সাহেব স্বত্বির নিঃশ্বাস ফেলতেন। যাক! এই সপ্তাহের বিনোদন পাতাটা তাহলে বেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে। এই জ্ঞানী এবং গুনী অভিনেতা মারা যাবার সঙ্গে সঙ্গে আউট অব আলোচনায় চলে গেছেন। তাকে নিয়ে একটা ফিচার রিপোর্ট করার কথা ভুলেও সম্পাদক সাহেবের মনে পড়ে না। অথচ বেঁচে থাকতে তার কত্তো দাম।


ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস খ্যাত নায়ক পল ওয়াকারের কথা কি আপনাদের মনে পড়ে? বেচারার কত্তো যশ খ্যাতি। আন্তর্জাতিক তারকা খ্যাতি সম্পন্ন পল ওয়াকার ছিলেন শত নারীর স্বপ্নের পুরুষ। তার গাড়ির শখ নিয়ে ইন্ট্যারন্যাশনাল পত্রিকাগুলো কত্তো যে ফিচার রিপোর্ট করেছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। কিন্তু রোড এ্যাকসিডেন্টে মৃত্যু বরণ করার সাথে সাথে সব শেষ।


ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস এর নতুন পর্ব রিলিজ হয়েছে। সেখানে নেই পল ওয়াকার। সেইসাথে পল ওয়াকার আর কোথাও নেই। তার এতোদিনের যশ খ্যাতি এবং অর্জন এক মৃত্যুর সাথে সাথে সব মলিন হয়ে গেছে। এমন একটা অবস্থা দাঁড়িয়েছে, এইসব গুনী অভিনেতারা যে একসময় দুনিয়ার মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলেন তা আর বিশ্বাস হতে চায় না।


কিন্তু ভিন্নদিকে আমি ভাবি শহীদ ইমাম আনোয়ার আল আওলাকী হাফিঃ (রহঃ) এর কথা। এই মানুষটির না আছে কোন অভিনয় দক্ষতা। আর না আছে হলিউডের তারকা খ্যাতি। কিন্তু এই মানুষটি কয়েকবছর আগে শহীদ হবার পরও এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেছেন। কিছুদিন আগেই দেখলাম, আল জাজিরা টিভি তাঁকে নিয়ে ফিচার রিপোর্ট করছে।


বদিউজ্জামান সাইদ নুরসী রহঃ এর কথা কি আপনাদের মনে আছে? শহীদ হাসানুল বান্না রহঃ এবং সাইয়্যেদ কুতুবের কথা কি আপনাদের মনে পড়ে? আমি জানি মনে পড়ে। কারণ, জ্ঞানপিপাসু এমন একজন তরুনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা এইসকল মহান স্কলারদের বই পড়েন নি। এই লোকগুলোর কি ছিল? গ্ল্যামার ছিল? যশ খ্যাতি ছিল? চলচিত্রের তারকা খ্যাতি ছিল?


নাহ! তাঁদের এইসবের কোনটাই ছিল না। তাঁরা কেউই এইসবের পিছনে ছুটেন নি। তাঁরা ছুটেছেন ইসলামের পিছনে। তাঁরা ছুটেছেন জান্নাতের পিছনে। যার কারণে তাঁরা আজ কয়েক শতাব্দি পূর্বে মৃত্যু বরণ করেও গোটা বিশ্বের মানুষের মাঝে বেঁচে আছেন। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম তাঁদেরকে প্রতিদিনই কোন না কোন প্রেক্ষাপটে স্মরণ করছে। ভিন্নদিকে যারা দুনিয়ার যশ খ্যাতি এবং গ্ল্যামারের পিছনে ছুটেছে তাদেরকে এই দুনিয়ার মানুষই সবার আগে ভুলে গেছে।


পঠিত : ৫৫২ বার

মন্তব্য: ০