Alapon

আল্লাহর রাসূলের জীবনী আমরা কেন পড়ব...?


রাসূল(সা.)-এর সীরাহ এবং এর বিধানাবলি অধ্যয়নের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ঐতিহাসিক ঘটনাবলি অবহিত হওয়া কিংবা আংশিক অথবা বিস্তারিতভাবে কাহিনীগুলো বর্ণনা করা নয়। এজন্য ফিকহুস সীরাহ অধ্যয়নকে সাধারণ ইতিহাস অধ্যয়নের মতো বিবেচনা করা আমাদের উচিত নয়। একইভাবে ফিকহুস সীরাহ অধ্যয়নের বিষয়টিকে কোন এক খলীফার জীবনী সম্পর্কে জানা কিংবা অতীত ইতিহাসের কোন যুগ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার মতো মনে করাও সমীচীন নয়।

বস্তুত ফিকহুস সীরাহ অধ্যয়নের উদ্দেশ্য হলো, এর মাধ্যমে একজন মুসলিম রাসুল(সা.)-এর জীবনে বাস্তবায়িত ইসলামের প্রকৃত রূপ সম্পর্কে নিরেট ধারণা লাভ করবে। আর এ ধারণা লাভ করতে পারবে অবশ্যই রাসূল(সা.)-এর জীবনের মৌলিক নীতিমালা, পদ্ধতিসম্ভার এবং প্রকৃত বিধানগুলো অন্তর থেকে অনুধাবনের পর।

অর্থাৎ সীরাহ নববীয়াহ অধ্যয়ন মূলতঃ একটি ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক বিষয়। এর উদ্দেশ্য হলো, ইসলামের প্রকৃত রূপকে এর সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদ(সা.)-এর জীবনীর মধ্য দিয়েই উদ্ভাসিত করে তোলা, মূর্ত করে তোলা।

এই উদ্দেশ্যটাকে আমরা যদি বিভিন্নভাগে বিভক্ত করে শ্রেণীবদ্ধ করতে চাই, তবে সম্ভবত নিম্নোক্ত লক্ষ্যগুলো বর্ণনায় সীমাবদ্ধ করতে পারি :

১। রাসূল(সা.)-এর জীবন এবং এর বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাঁর(সা.) নবুওতী ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনুধাবন করা। এই অনুধাবন এজন্য প্রয়োজন যে, এর মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে প্রতীয়মান হবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র স্বীয় ক্বওমের মধ্যেই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলেন না; বরং এর বাইরে তিনি ছিলেন রাসূল, যাকে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় ওয়াহী বা প্রত্যাদেশ এবং সৌভাগ্য দ্বারা শক্তিশালী করেছেন।

২। যেনো এর মাধ্যমে মানুষ তার সামনে উন্নত জীবনের প্রত্যেকটি দিক সম্পর্কে সর্বোচ্চ উদাহরণের দৃশ্য উপস্থিত পায়। ফলে এর মাধ্যমে সে নিজের ধারণ ও অনুসরণের জন্য সংবিধান রচনা করতে পারবে। কোন সন্দেহ নেই, মানুষ যখনই নিজের জীবনের কোন দিক সম্পর্কে কোন মহান নজীর তালাশ করেছে সে তা আল্লাহর রাসূল(সা.)-এর জীবনের মধ্যেই সুস্পষ্ট এবং পূর্নাঙ্গরূপে পেয়েছে। এজন্য আল্লাহ তা'আলা তাঁকে সমগ্র মানবতার জন্য অনুসরণীয় বানিয়েছেন, বলেছেন, 'নিশ্চয় তোমদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ'।-(সুরাহ আল আহযাব-২১)

৩। সীরাতে রাসূল (সা.) অধ্যয়নের আরেকটি লক্ষ্য হলো, এর মাধ্যমে মানুষ এমন সব বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবে যা তাকে কুর'আন অনুধাবন, এর রুহ এবং মাকসাদের স্বাদ আস্বাদনে সহায়তা করবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ(সা.)-এর জীবনে ঘটিত বিভিন্ন ঘটনা এবং এসব ঘটনায় রাসূল(সা.)-এর ভূমিকা কুর'আনের অসংখ্য আয়াতকে ব্যাখ্যা ও স্পষ্ট করে।

৪। সীরাতে রাসূল(সা.) অধ্যয়নের অন্যতম লক্ষ্য হলো, এর ফলে যেনো একজন মুসলিমের মধ্যে বিপুল ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতির সমাবেশ ঘটে। চাই তা আকীদা সংক্রান্ত হোক কিংবা আহকাম সম্পর্কিত হোক অথবা চরিত্র সম্পর্কিত। কারণ, রাসূল(সা.)-এর জীবন ইসলামের সমস্ত মৌলিক নীতিমালা ও আহকামের আলোকোজ্জ্বল মূর্ত ছবি।

৫। এই অধ্যয়নের ফলে ইসলামের একজন মুয়াল্লিম এবং দাঈ তার সামনে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের এক জীবন্ত আদর্শকে উপস্থিত পাবে। কারণ, নিশ্চিতভাবে মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন একজন কল্যাণকামী শিক্ষক, একজন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষক। তাঁর(সা.) দাওয়াতের বিভিন্ন স্তরে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সর্বোত্তম কল্যাণকর ও উপকারী পদ্ধতি অনুসন্ধানে তিনি কোন প্রচেষ্টাই অবশিষ্ট রখেন নি।

---ড. সাঈদ রামাদান আল বূতি(রাহ.)-এর বই থেকে অনূদিত।

পঠিত : ৪৩৫ বার

মন্তব্য: ০