Alapon

মসজিদের উন্নয়নের নামে চলছে চাঁদাবাজি!

আড়াই বছর আগে এই শহরে পা দিয়েছি। নতুন নতুন সবকিছুই বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখতাম। এখনো দেখি। আড়াই বছর আগে একটি মাসজিদের নির্মানের জন্য অল্পকিছু টাকা দিয়েছিলাম। বাস ষ্টপজে দাঁড়ালে কয়েকজন হুজুর রশিদ নিয়ে উঠে পড়লেন। বললেন, ‘সাততলা মাসজিদ নির্মাণ চলতেছে। নির্মাণ কাজে দান করে আপনিও শরীক হতে পারেন।’


আমার পাশে ছিল বড় ভাইয়া। টাকা দেবার সময় বড় ভাইয়া বলল, ‘এইগুলারে টাকা দাও কেন! এইগুলা রীতিমত ব্যবসা। সবেমাত্র তো আসছো কিছুদিন থাকো তারপর বুঝতে পারবা।”


আজ আড়াই বছর পর সেই একই ভয়েস আবারো কানে পৌঁছল। হুজুর একই বাণী তরজমা করে শোনালেন। সাততলা মাসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। হুজুরকে কাছে ডেকে বললাম, ‘আড়াই বছর ধরে নির্মাণ কাজ চলছে, এখনো শেষ হয় না। আর আপনার এই সাততলা মাসজিদে নামায পড়বে কে? রমাদান মাস ছাড়া তো যোহরের সালাতে ৭ কাতারও মানুষ হয় না।’ এইকথা শুনে সে আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকাতে লাগল। তার চোখের ভাষায় বুঝলাম, সে আমাকে জাহান্নামের কীট বলে সম্বোধন করছে। হয়তো মনে মনে বলছে, ‘জাহান্নামে যাবি। নাফরমান আগুনে পুড়বি। আল্লাহর ঘরের সাথে বেয়াদবি।’


বাসার পাশের মাসজিদে কিছুদিন আগে ওয়াজ মাহফিল হল। কৃতিছাত্রদের পাগড়ি বিতরন উপলক্ষ্যে এই ওয়াজ মাহফিল। সে উপলক্ষ্যে রাস্তায় মাইক লাগিয়ে মোয়াজ্জিন সাহেব এবং খাদেম সাহেবরা ভিক্ষা শুরু করলেন। মাইকে বাজতে লাগল, ‘দান করলে বৃদ্ধি পায়। এক টাকা দান করলে রোজ হাসরে ৭০ টাকা পাইবেন।’ অথচ ঐ মাসজিদের সদর দরজায় ঝুলিয়ে রাখা নোটিশ বোর্ডে দেখলাম, এই মাসে ৫ লক্ষের অধিক টাকা উদ্বৃত্ত হিসাবে ব্যাংক একাউন্টে জমা রাখা হয়েছে।


বাসার কেয়ারটেকার বিরাট আশা নিয়ে বলল, ‘ওয়াজ মাহফিলে কিছু টাকা দেন। আমগো বাসায় আইসা চাইয়া গেছে।’ আমি বললাম, ‘পারুম নাহ। এইসব কামে এক টাকাও দিতে পারুম না। অন্য কোন ভালো কাজ নিয়ে আসেন সেটার টাকা ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।’ এইকথা শুনে কেয়াটেকার মহাদয় আমার দিকে বাকা চোখে তাকাতে লাগলেন। হয়তো মনে মনে বলতেও পারে, ‘হালায় একটা মুরতাদ! মুরতাদ না হইলে ওয়াজ মাহফিল নিয়া এই কথা কেউ কইতে পারে!’


হাহাহা...! হুম বলতে পারে। সচেতন মুসলিম মাত্রই এসব নিয়ে কথা বলবে এবং সংশোধন করার চেষ্টা করবে। আজকাল হুজুর দেখলেই কেন জানি মনে হয়, এই বোধহয় ভিক্ষা চাওয়া শুরু করবে। আরে ভাই! এইসব ভিক্ষা করে সাততলা মাসজিদ বানাইতে আপনারে কে বলেছে? এইসব ভিক্ষা করে ওয়াজ মাহফিল করতে কোন ইসলামে শিখাইছে?


খটকা লাগতেছে তাই না? ভাবতেছেন, ফারাবী আবার শাহবাগী হয়ে গেল কিনা! না ভাই। এসব বলতে শাহবাগী হতে হয় না। আল্লাহপাক কেয়ামতের ময়দানে আপনাকে বলবে না, “কোন মাসজিদে কত টাকা দান করেছিলি! কোন ওয়াজ মাহফিলে কত টাকা দিয়েছিস। কোন হুজুরকে দাওয়াত করে খাইয়েছিস। কোন মাসজিদে এসি লাগিয়ে দিয়েছিস।” এইসব কোন প্রশ্নই সেইদিন করা হবে না।


আল্লাহ আপনাকে বলবেন, ‘আমি বিপদগ্রস্থ ছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে সাহায্য করো নি।’ তখন আপনি বলবেন, ‘আল্লাহ আপনার আবার কিসের বিপদ?’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘আমার বান্দার বিপদ মানেই আমার বিপদ। আমার বান্দা তার বিপদে তোমার কাছে সাহায্য চেয়েছিল কিন্তু তুমি দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছ। সেদিন যদি ওকে সাহায্য করতে, তবে তা আমাকেই সাহায্য করা হতো।” (বুখারী)


আমাদের এই সমাজে হাজারো মানুষ সমস্যাগ্রস্থ। এই রমাদানে কত যে মানুষ না খেয়ে রোজা রাখে তার হিসাব কে রাখবে। কত মানুষ এক খন্ড পরিষ্কার কাপড়ের অভাবে ঠিকমত নামায পড়তে পারছে না; তার খবর কোন হুজুরে রাখবে! কিন্তু কোন মাসজিদে এসি আছে আর কোন মাসজিদে এসি নাই; এইসংবাদ আমরা সবাই খুব ভালো করেই জানি।

পঠিত : ১১০৫ বার

মন্তব্য: ০