Alapon

ফর্সা মেয়ে বিয়ে করতে চাওয়াও কি বর্ণ বৈষম্য...?


অ্যামেরিকার বর্ণপ্রথা নিয়ে যখন চারদিকে কথা হচ্ছিলো তখন এদেশে কথা উঠেছে বিয়ের সময় সাদা কিংবা কালো চামড়ার বৈষম্য নিয়ে। যারা বিয়ের সময় কেবল সাদা চামড়াকে প্রায়োরিটি দিচ্ছেন তাদেরকে একটা গ্রুপ সমালোচনা করে বলছেন তাদের এই কাজটি বর্ণবৈষম্য পর্যায়ে। আর অন্য গ্রুপ বলছেন বিয়ের সময় সাদা চামড়া চাওয়া এটা কেবল তাদের পছন্দের স্বাধীনতা, তাদের প্রেফারেন্স। তারা এটাকে বৈষম্য মানতে নারাজ।

গবেষক ইতিশা নাগার তার গবেষণায় দেখান প্রতি বছর ১৪০ মিলিয়ন ডলার কসমেটিকস পণ্য বিক্রি হয় ভারত& বাংলাদেশে। আর সেই পরিমাণটি প্রতি বছর ১০-১৫% করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সেই কসমেটিকস পণ্যের প্রধান মোটিভ থাকে 'fair is lovely and dark is ugly'।

যারা সাদাকে তাদের Preference মনে করে পছন্দের স্বাধীনতা বলে যুক্তি দিচ্ছেন তাদের সেই Preference কে গবেষকরা Colour preference is a Systemic racism বলে ডিফাইন করছেন। আবার যারা সাদাকে Preference মনে করছেন বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদেরকে Speight প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলছেন, সাদা সুন্দর আর কালো অসুন্দর সেই ডেফিনিশন তারা কোথা থেকে পেয়েছেন কিংবা তাদেরকে কে শিখিয়েছে? তিনি তার একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন এই সাদা কে সুন্দর আর কালোকে অসুন্দর ভাবার চিন্তাটা ব্রিটিশরাই এই দক্ষিণ এশিয়ায় দিয়ে গেছে। তিনি বলেন "Internalization of superiority of fair/white skin has been related to the combined influences of colonialism, caste system, and globalization. Many South-Asian countries like India, Pakistan, Sri Lanka, Bangladesh, and so on were ruled by the British for around 200 years; “white” race was the ruler and the “dark” native were the ruled. This led to internalization of superiority and power of the “white” skin and inferiority and powerlessness of the “dark skin”.

Shankar& Giri এই সাদার প্রায়োরিটির কলোনিয়াল চিন্তাভাবনা সম্পর্কে বলেন, "This is not surprising as fair skin has a colonial connotation of power and superiority."

Parameswaran & Cardoza তারা দু'জন Racism এবং Colourism কে সমার্থক মনে করেন। তারা মনে করেন এই দুটোর মধ্যে রয়েছে এক ধরনের সুক্ষ্ম সম্পর্ক। বিয়ের ক্ষেত্রে colour preference এক ধরনের রেসিজম। এই রেসিজমের বীজ বপন হয়েছে কলোনিয়াল শাসনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। কলোনিয়াল শাসন ব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে সাদা কিংবা ধবধবে সাদার প্রায়োরিটি।

আর James& Trina এই Colourism নিয়ে সুন্দর একটি কথা বলেন, 'Discrimination based on skin color, also known as colorism or shadeism, is a form of prejudice or discrimination usually from members of the same race in which people are treated differently based on the social implications from cultural meanings attached to skin color."

অনেকের রেসিজমের চিন্তাভাবনাকে Ware& Leland ক্রিটিসাইজ করে রেসিজমের নতুন ধারণা দেন এভাবে
"When people think of racism it is usually against people outside of their ethnicity. Colorism is discrimination against people because they have a darker complexion. The idea of racism and colorism are similar. Someone with a lighter complexion is considered to be more beautiful or valuable than someone with dark skin."

কালো মেয়েদের সামাজিকভাবে ছোট থেকেই হীনমন্যতায় রাখা হয়। এই মানসিক টর্চার ফ্যামিলি থেকে শুরু হয়ে পাড়াপড়শি পর্যন্ত চলে। ধরেন, এক পরিবারে ২ বোন। বড়োটা একটু কালো আর ছোটোটা সাদা। মা সিমপ্যাথি দেখাতে গিয়ে অনেক সময় পাড়াপড়শিদের কাছে মেয়ের সামনেই বলেন, বড়োটার জন্য খুব টেনশন। বড়োটার কোনোমতে বিয়ে দিতে পারলে ছোটোটার জন্য টেনশন করতে হবে না।

আপনার কাছে অবাক করা হলেও চলতে-ফিরতে বহু জায়গায় এমন ঘটনা দেখেছি & শুনেছি। এই ন্যাচারাল কালোকে মনে করা হয় জন্মগত পাপ, ধরা হয় পারিবারিক এক ধরনের অভিশাপ। তখন কালো মেয়েদের ভালো পাত্র পাবার জন্য এডভাইস করা হয় বিভিন্ন ধরণের কসমেটিকস। তারা সকাল-বিকাল নিয়ম করে সেই কালো অভিশাপ থেকে বের হতে গাল, হাত প্রতিদিন ঘষামাজা আর পালিশ করতে থাকে। Sylvia তার গবেষণায় বলেন, ''They are likely to portray a dark-skinned woman as an underconfident and insecure person who is unable to secure success in life until someone suggests the use of a fairness cream."

এই সাদা, কালোর স্তরবিন্যাস শুধু বিয়ের প্রায়োরিটির ক্ষেত্রে নয় আজ বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার চাকরির বাজারে বলেন অন্য সকল স্তরে সাদা চামড়ার প্রায়োরিটিটা অধিক আকার ধারণ করেছে তা অস্বীকার করার কিছু নেই। বিয়ের ক্ষেত্রেতো সাদা চামড়ার পছন্দ Preference বলে চালাতে পারেন কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে সেটাকে Preference বলে চালাতে পারবেন? এই বিয়ের জন্য কালার Preference যে অন্য সকল ক্ষেত্রে কালো চামড়ার মেয়েদের জন্য ইমফেক্ট ফেলছে না তা কি অস্বীকার করতে পারবেন? Hunter ২০০৭ সালে তার এক গবেষণায় দেখান Colourism কেমন করে একটা শ্রেণীকে সুযোগ দিচ্ছে কালো চামড়ার উপরে। তিনি বলেন, "Colorism or skin-color stratification is a process that privileges light-skinned people over dark in areas such as income, education, housing, and the marriage market."

আমরা Rondilla& Spickard এর ২০০৭ সালের আরেকটা গবেষণার দিকে তাকালে দেখতে পাই চামড়ার সাদার কারণে মেয়েরা কতটুকু সুযোগ পাচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে& বিয়ের মার্কেটে। এই সব ক্ষেত্রে শুধু জন্মগত কালো চামড়া হওয়ার কারণে অনেক মেয়ে তার স্কিল থাকা সত্বেও বঞ্চিত হচ্ছে। তারা বলেন, "In context of race, studies have found that light-skinned people are financially better off, more educated, live in better neighborhoods, and marry higher status people than darker-skinned people."

বিভিন্ন গবেষণার সার নির্যাস থেকে এই বিষয়টা প্রতীয়মান যে, এই Colour Preference বা Colourism এক ধরনের সিস্টেমিক রেসিজম। এই Preference নামক রেসিজমের ধারণা বিশেষ করে এই দক্ষিণ এশিয়ায় শুরু হয় কলোনিয়াল শাসনের মাধ্যমে। এই Preference সমাজের অন্য চ্যাপ্টারগুলোতে সিস্টেমিকভাবে প্রভাব সৃষ্টি করে। যার কারণে শুধু বিয়ের ক্ষেত্রে নয় চাকরি বলেন, শিক্ষা বলেন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বলেন সকল ক্ষেত্রে সিস্টেমিকভাবে কালো চামড়ার মেয়েরা স্কিল থাকা সত্বেও বঞ্চিত হচ্ছে। সোজা বাক্যে যদি বলতে হয় তাহলে বলতে হবে, বিয়ের ক্ষেত্রে এই Colulour Preference সুক্ষ্মভাবে এক ধরনের রেসিজম।

যখন আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয় এটা রেসিজম কি না? তখন এটা Preference বলে যুক্তি দেন, আমার সাদা পছন্দ, এটার ক্ষেত্রে আমি ছাড় দিতে পারবো না। তবে অনেকের কালো পছন্দ। আচ্ছা, কয়জন ছেলের উপর জরিপ চালিয়ে এই সোজা উত্তরটা দিলেন যে অনেকের কালো পছন্দ? আমি আপনাকে দেখাতে পারবো, ১০০ জন ছেলের বিয়ের জন্য ৮০% সাদা রং আর ১৯% শ্যামলা রং পছন্দ। বাকি ১% ছেলে কনফিউজড!

খুব সোজা একটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে?
সবাই সাদা চামড়াকে Preference মনে করে বিয়ে করলে সমাজে অসংখ্য জন্মগত কালো মেয়ে আছে যাদের বিয়ে হচ্ছে না আপনার কি একবারো মনে হয় এই আপনার Preference এর কাছে সে বঞ্চিত হচ্ছে? সে তার অধিকার হারাচ্ছে! আপনার কি মনে হয় না, আপনি যে Preference বলে আপনার অধিকারের বুলি আওড়াচ্ছেন সেখানে করাঘাত করে প্রতিদিন অসংখ্য কালো মেয়ের সামাজিক বঞ্চনার আর্তচিৎকার, মানুষের কাছে ছোট হবার যন্ত্রণা?

সে যে জন্মগত কালো হবার বঞ্চনায় জায়নামাজে দাঁড়িয়ে রাতের অন্ধকারে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে, "হে আল্লাহ, একটু সুন্দর করে বানালেতো পারতে। এতো কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না।" শতশত মেয়ের এরকম চিৎকারকে আপনি কেমন করে Preference বলে সামাজিক কাঠামোতে চালিয়ে দেন তা একবার প্রশ্ন করে দেখুনতো!

Reference:

1. Jones, Trina (2001). "Shades of Brown: The Law of Skin Color". Duke Law Journal. 49(1487). doi:10.2139/ssrn.233850.

2. Ware, Leland. "'Color Struck': Intragroup and Cross-racial Color Discrimination".

3. Sylvia, K. (2014). Hegemonic whiteness: A qualitative study of fairness advertisements in India. Texas State Undergraduate Research Journal, 2(1), 1-5.

4. Parameswaran, R. E., Cardoza, K. (2009a). Immortal comics, epidermal politics: Representations of gender and colorism in India. Journal of Children and Media, 3(1), 19-34.

5. Hunter, M. L. (2007). The persistent problem of colorism: Skin tone, status, and inequality. Sociology Compass, 1, 237-254.

6. Speight, S. L. (2007). Internalized racism: One more piece of the puzzle. The Counseling Psychologist, 35, 126-134.

7. Shankar, P. R., Giri, B. R., Palaian, S. (2006). Fairness creams in South Asia—A case of disease mongering?PLoS Medicine, 3(7), e315.

- রিয়াজ উদ্দিন

পঠিত : ৪৬০ বার

মন্তব্য: ০