Alapon

ইসলামকে নিয়ে রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের টানাটানি...


রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি? এ ধরণের প্রশ্ন আছে অনেকের মনে। আবার চমকপ্রদ, ব্যতিক্রমী ও অপার্থিব উত্তরও পাওয়া যায়, যা শুনে শ্রোতা প্রায় বেহুঁশ হয়ে যায়, কিন্তু উত্তরদাতার হুঁশজ্ঞান টনটনে থাকে। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে এই টানাটানির একটা সমাধান পাওয়া যায় কিনা দেখি-

রাজতন্ত্র
রাজতন্ত্র মুসলমানদের আবিষ্কার নয়, রাজতান্ত্রিক পন্থায় প্রজাশাসন মুসলমানরা প্রবর্তন করেননি। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের আগেই দুনিয়াতে রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিল। শুধু তাই নয়, তখন অন্য কোন তন্ত্র ছিল বলে জানা যায় না। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা) সচেতনভাবে রাজতন্ত্র গ্রহণ করেননি। তাঁরা যদি রাজতন্ত্র গ্রহণ করতেন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পর আলি (রা) খলিফা হতেন বা ‘উমার (রা)-এর পর আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) খলিফা হতেন।

রাজতন্ত্রের পরিবর্তে সাহাবায়ে কেরাম যা প্রবর্তন করলেন সেটি ওই সময়ের বিচারে তো বটেই, বর্তমান সময়ের বিচারেও অনুপম ও বিস্ময়কর একটি ব্যবস্থা। একটু ভাবুন, পুরো দুনিয়ায় রাজতন্ত্র, খেলাফতে রাশেদার ত্রিশটি বছর কীভাবে অতিবাহিত হল! ‘উমার (রা) যখন আহত হয়ে খলিফা নির্ধারণের জন্য কমিটি করলেন, তখন বললেন, আমার পুত্র আবদুল্লাহ-এর মত গ্রহণ করা যাবে, কিন্তু তাকে খলিফা বানানো যাবে না। পুরো দুনিয়ার মাঝে ব্যতিক্রম ছিল আরবের ওই ভূখণ্ড।

যা হোক! ত্রিশ বছর পর যখন খেলাফতে রাশেদার অবসান হয়, খেলাফত নাম পরিবর্তন না হলেও যা চালু হয় সেটা রাজতন্ত্র। তখন বহু সাহাবী লোকান্তরিত হয়েছেন। খেলাফতের কেন্দ্র স্থানান্তরিত হয়েছে, পরিবর্তন দুঃসাধ্য বিবেচনায় তারা তা মেনে নিলেন। অপারগ অবস্থায় কোন একটি ব্যবস্থা মেনে নেয়া এবং স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে কোন একটি ব্যবস্থা চালু করা এক বিষয় নয়।

গণতন্ত্র

রাসুলুল্লাহ (সা) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে গণতন্ত্র ছিল না। এটি চালু করেছে পশ্চিমা দুনিয়ার খ্রিস্টানরা, তাই এটি হারাম- এমন অভিমত খুবই শ্যালো হয়ে যায়। কারণ, রাজতন্ত্রও কিন্তু মুসলমানরা চালু করেনি, কাফেররা চালু করেছিল। পাশ্চাত্যে চালু হওয়ার কারণে গণতন্ত্র হারাম হলে, রাজতন্ত্র হারাম না হওয়ার কোন কারণ নেই। গণতন্ত্র যেহেতু সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না, তাই এই ব্যবস্থার প্রতি তাদের মনোভাব কি হত, তা বলে দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বলা হয়, গণতন্ত্র হল অধিকাংশের শাসন, অধিকাংশ যদি খারাপ/মন্দ/হারাম কোন আইন পাশ করে, সেটি চালু হয়ে যাবে, তাই এটা কুফরি। অনুরূপ কুফরির সিদ্ধান্ত রাজতন্ত্রের ব্যাপারে আরো জোরালোভাবে উত্থাপন করা যায়। হারাম বিধান চালু করতে গণতন্ত্রে অধিকাংশের মতামতের দরকার হয়, আর রাজতন্ত্রে হারাম বিধান চালু করতে এক জনের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। তাহলে কোনটা ভাল হল?

আরেকটা বিষয়! শুয়ুখ যখন এ প্রশ্নের উত্তর দেন তখন ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেন না। যেমন যে ব্যক্তি এই প্রশ্ন করে, সে কিন্তু সেক্যুলার দৃষ্টিতে এই প্রশ্ন করে না। তার জানার আগ্রহ থাকে: শাসক নিয়োগ বা শাসক পরিবর্তন পদ্ধতি হিসেবে কোনটা ভাল: গণতন্ত্র না রাজতন্ত্র? এ প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই গণতন্ত্র ভাল বলতে হবে, খুলাফায়ে রাশেদীনের নির্বাচন পদ্ধতির সাথে বর্তমান সময়ের কোন পদ্ধতির যদি কিছুটা সাদৃশ্য থাকে, সেটা গণতন্ত্রের সাথে। আইন প্রণয়নের বিচারেও গণতন্ত্র ভাল। এখানে অন্তত অধিকাংশ মানুষের মতামত লাগে, রাজতন্ত্রে তো একজন মানুষের মত পুরো জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়।

গণতন্ত্রে বিদ্যমান পাঁচ বছরের সরকারব্যবস্থা রাজতন্ত্রের তুলনায় ভাল। কোন শাসক যদি স্বেচ্ছাচারী হয়, বা কোন সরকারের পারফরমেন্স যদি ভাল না হয়, পাঁচ বছর পর জনগণ তাকে সরিয়ে দিতে পারে (আদর্শিক নির্বাচনী ব্যবস্থার কথা বলছি, পৃথিবীর বহুদেশে এমন ব্যবস্থা চালু আছে।) কিন্তু রাজতন্ত্রে জালিম শাসকের যুলুম হতে নিস্তার লাভের জন্য জনগণকে তাঁর মৃত্যু কামনা করতে হয়।

শাসক ভাল হলে রাজতন্ত্রে মানুষ শান্তিতে থাকে। তাই ঢালাওভাবে বলার সুযোগ নেই, এটি হারাম, ঔটা হালাল। তবে তাত্ত্বিকভাবে বলা যায়:
ক. উৎকৃষ্ট গণতন্ত্র উৎকৃষ্ট রাজতন্ত্রের চেয়ে ভাল
খ. নিকৃষ্ট গণতন্ত্র নিকৃষ্ট রাজতন্ত্রের চেয়ে ভাল
গ. উৎকৃষ্ট রাজতন্ত্র নিকৃষ্ট গণতন্ত্রের চেয়ে ভাল

-জুবায়ের ইহসান হক

পঠিত : ৬৮৭ বার

মন্তব্য: ০