Alapon

মুসলিমরা কাজ করে না...


আমরা ট্রেন ও বিমান ব্যবহার করি কিন্তু তা আমাদের উৎপাদিত নয়। এগুলো পশ্চিমারা তৈরি করে, অতঃপর আমাদের নিকট রপ্তানি করে। বস্তুত, আমরা নিজেদের এবং বাসা বাড়ির জন্য বিলাসবহুল সরঞ্জামিাদি ক্রয় করেতে পারি। আমাদের লোকজন বিলাসবহুল রোলস রয়েস, মার্সিডিজ গাড়ি কিনতে পারে। আমরা সেগুলো কিনতে পারি, কিন্তু তা উৎপাদন করতে পারি না। আমরা একটি প্রাইভেট কারের নাট বল্টুও উৎপাদন করতে পারি না। অন্যরা আমাদের জন্য তৈরি করে, আমরা তা ব্যবহার করি।

পুরো আরব বিশ্বের আয় একটি ইউরোপীয় দেশের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি; এমনকি তেল উৎপাদনকারী আরব দেশগুলোর সম্মিলিত আয় মিলেও। শিল্পসমৃদ্ধ ইউরোপের সবচেয়ে দুর্বল দেশ স্পেনের আয়ও আরব দেশগুলোর সম্মিলিত আয়ের তুলনায় বেশি। জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি তো অনেক দূরের আকাশ।

কেন?
কারণ, আমরা কাজ করি না। করলেও তা প্রফেশনালি করি না। আরব বিশ্বের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ওপর একটা জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা যায়, প্রতিটি কর্মচারী দৈনিক ২৭ মিনিট কাজ করে। বাকি সময় তারা কফি পান করে, পত্রিকা পড়ে, এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে সময় অতিবাহিত করেন। কিয়দংশ লোক কাজ করেন, বাকিরা কাজ করে না।

১৯৭০এর মধ্যবর্তী সময়ে জার্মানিতে গিয়েছিলাম। হোটেল থেকে একজন ভাই আমাকে সম্মেলনে নিয়ে যান। তখন সকাল সাতটা। তাকে জিজ্ঞিস করি, রাস্তায় লোকজন নেই কেন। রাস্তাগুলো আমাদের দেশের মতো জনাকীর্ণ নয় কেন? সে বলে, মানুষজন কাজে গেছে।

সন্ধ্যা সাতটার পর সে আমাকে হোটেলে নিয়ে আসে। সে সময়ও রাস্তাঘাটে ছিল সুনসান নীরবতা। তাকে অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করি, কী ব্যাপার এখনও দেখি রাস্তা খালি? সে জানায়, লোকজন কাজ থেকে বাসায় ফিরে গেছে। তারা ক্লান্ত, এখন বিশ্রাম নিচ্ছে। তারা রাতের খাবার প্রস্তুত করছে, খবর দেখছে এবং ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ, পরদিন সকালে তাদেরকে আবার কঠোর পরিশ্রমের জন্য জাগতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে, ফিরতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে এবং দুপুরের খাবার গ্রহণ করে। আর বাকি সময় তারা অনবরত কাজ করে।
আমরা এমন জাতি, যারা কাজ করি না। কী করে আমরা উন্নত হব, যদি কাজ না করি। যখন কাজ করি, তাও প্রফেশনালি করি না। আমরা বলতে থাকি- চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, যাই করি না কেন, তা যেন প্রফেশনালি করি।যেকোনো কাজ প্রফেশনালি করা দ্বীনি দায়িত্ব।

রাসূল সা. বলেন,
إن الله كتب الإحسان على كل شيء، فإذا قتلتم فأحسنوا القِتلة، وإذا ذبحتم فأحسنوا الذِّبحة،
অর্থ, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুতে পারদর্শী হতে নির্দেশ দিয়েছেন। যখন তোমরা হত্যা করবে তা সর্বোত্তম উপায়ে করো, যখন যবেহ করবে তা সর্বোৎকৃষ্ট পন্থায় করো।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর সুনিপুণতা ও প্রফেশনালিজম আরোপ করেছেন। সর্বক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম রক্ষা করা উচিৎ। এমনকি হত্যা করার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আমাদেরকে সর্বোত্তমভাবে করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা কোনোটাতেই দক্ষ নই। না সামরিক খাতে, না শিল্প খাতে।

আমরা সবকিছুই বিদেশ থেকে আমদানি করি। এ হলো আমাদের জাতির চরিত্র। আমরা এখনও পর্যন্ত একটি গাড়ির ইঞ্জিনও তৈরি করতে পারছি না। আমরা কেবল যন্ত্রাংশগুলো জোড়া লাগাই। আমাদের উৎপাদন কারখানা নেই। ভারত পর্যন্ত গাড়ি উৎপাদন করে, এমনকি প্লেন বানায়।

আমরা এখনও একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছি। যেমন, কলুর বলদ একটা লাঠির চারপাশে ঘুরপাক খায়। সে সেখানেই শেষ করে যেখান থেকে শুরু করেছিল। চিন্তা করুন, কীভাবে জায়নিস্টরা আমাদের থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। অথচ তারা সংখ্যায় কত নগণ্য! তারা সম্মৃদ্ধ হয়েছে জ্ঞান, প্রযুক্তি, শক্তি এবং কঠোর কাজের মাধ্যমে।

আমাদের চোখের সামনেই পড়ে আছে বিস্তীর্ণ মরুভূমি। আমরা এটাকে কোনো উৎপাদন কাজে ব্যবহার করি না। জায়নিস্টরা যখন আমাদের থেকে মরুভূমি ছিনিয়ে নিয়ে যায় তখন তারা তাকে সবুজ মরুদ্যানে পরিণত করে। চিন্তা করুন, তারা কেনই বা উন্নত হবে না! ঠিক এই কারণেই তারা বিকশিত হয়েছে আর আমরা পিছিয়ে পড়েছি।

মূল- ড. ইউসুফ আল কারযাভী
অনুবাদ- মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ

পঠিত : ৩৮৩ বার

মন্তব্য: ০