Alapon

বীর সেনানী সাইফুল আজমকে ইসলামের শত্রুরাও কোনোদিন ভুলতে পারবে না!


১৯৬৫ সাল। আচমকা ভারতের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। পাঞ্জাব সীমান্তে ভারত ভারি অস্ত্রসহ বহু সেনা মোতায়েন করেছে। কিন্তু তেমন একটা সুবিধা করতে পারছে না। বরং আক্রমনাত্মক হামলার চেয়ে রক্ষনাত্মক হামলাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। কারণ, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই সীমান্তে অল আউট অ্যাটাক করেছে।

এমতাবস্থায় ভারতীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধের ট্যাকটিক্সে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। তারা চিন্তা করল, পাকিস্তান সীমান্তের সবচেয়ে দুর্বল অংশ দিয়ে প্রবেশ করে ম্যাচাকার চালিয়ে দখল নিতে হবে। সেক্ষেত্রে উত্তম স্থান হতে পারে পূর্ব পাকিস্তান যা আজকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সাথে সাথে ভারতীয় সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে গোলা নিক্ষেপ শুরু করল আর পাঞ্জাব সীমান্তে রক্ষনাত্মক যুদ্ধ চালিয়ে পাঞ্জাবী সৈন্যদের ব্যস্ত রাখার কৌশল অবলম্বন করতে লাগল। তবে এক্ষেত্রে ভারতীয় সৈন্যরা ট্যাকটিক্সে ভুল করে বসল। কারণ, যুদ্ধের শুরু থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেঙ্গল রেজিমেন্ট যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। শুধু বেঙ্গল রেজিমেন্টই না, এই অংশের সাধারণ জনতাও বুকে ঈমানের দাবি নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ল। এমন শক্ত প্রতিরোধে ভারতীয় বাহিনী হতভম্ব হয়ে গেল।

ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এগিয়ে আসল ভারতীয় বিমানবাহিনী। ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলো পূর্ব পাকিস্তানের আকাশ সীমায় প্রবেশ করে হামলা চালানোর আগেই আকাশে দেখা গেল সবুজ কালারের বোমারু বিমান। তখন আর কারও বুঝতে কষ্ট হল না যে, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিমান আকাশ পথ নিরাপদ রাখতে তৎপর রয়েছে।

ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলো পাকিস্তানের সীমানায় প্রবেশ করার সাথে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পাইলট সাইফুল আজম তার বোমারু বিমান নিয়ে ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলোকে তাড়া করতে শুরু করে। ইতিহাসে সম্ভবত একবারই এমন ঘটনা ঘটেছে যে, বোমারু বিমান জঙ্গি বিমানকে তাড়া করেছে। এমতাবস্থায় ভারতীয় জঙ্গি বিমানের গোলার আঘাতে সাইফুল আজমের বোমারু বিমানে আগুন ধরে যায়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সাইফুল আজমের জরুরী অবতরণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে সাইফুল আজম সেই বিধ্বস্থ বিমান নিয়েই ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলোকে তাড়া করেন এবং একটি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করতে সক্ষম হন। শুধু তা-ই নয়, তারপর তিনি নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে আসেন!

কী ভাবছেন, এরপর সাইফুল আজম বিশ্রামে চলে গেছেন?

মোটেও না! এরপরও সাইফুল আজম বিমান উড়িয়েছেন। ইতিহাস বলে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে সাইফুল আজম ১২ বার ভারতের আকাশ সীমায় প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছেন। যার কারণে তিনি পাকিস্তানের ৩য় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা "সিতারা-ই-জুরা” পদক লাভ করেন। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান তাঁকে এই ব্যাজ পরিয়ে দেন।

তবে সাইফুল আজম বিখ্যাত হয়ে আছেন, ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করার কারণে। এখন পর্যন্ত সম্ভবত সাইফুল আজমই একমাত্র মুসলিম পাইলট, যিনি একাই তিনটি ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করেছিলেন।

যার কারণে এই বীর যোদ্ধার মৃত্যুতে ফিলিস্তিন এবং মুসলমানদের শান্তি বিনষ্টকারী দেশ স্বয়ং ইসরাইলের পত্রিকাগুলোতেও শিরোনাম করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং পাকিন্তানের মিডিয়ায় তাঁর মৃত্যুর খবর ও কৃতিত্ত্বের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু এই বীর সেনানীর জন্ম যে দেশে সেই দেশের পত্রিকাগুলো তাঁর মৃত্যুকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি তাঁর মৃত্যুর খবর লিড নিউজও করেনি।

তাঁর মৃত্যুর খবর কেন বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে গুরুত্ব পায়নি, তার কারণ বুঝতেই ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে সাইফুল আজমের ভূমিকা বিস্তারিত উল্লেখ করলাম।

যারা বলেন, বাংলাদেশ পূর্ণ স্বাধীন দেশ- তাদের জন্য এই ঘটনাটি একটি শিক্ষা! আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলোও একটি বিশেষ দেশের বিপক্ষে যায়- এমন সংবাদ প্রকাশ করার সাহস করে না! সেই দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব আদৌও অবশিষ্ঠ আছে কিনা আমার যথেষ্ঠ সন্দেহ হয়!

তবে বীর সেনানী সাইফুল আজম ইতিহাসের বুকে অমর হয়ে থাকবেন। আমরা বাঙালিরা আমাদের এই বীর সন্তানকে না চিনলেও মুসলিম বিশ্ব তাঁকে চেনে। এমনকি তাঁর শত্রুরাও তাকে কোনোদিন ভুলতে পারবে না।

পঠিত : ৩৪১ বার

মন্তব্য: ০