Alapon

শিয়া-সুন্নীর দ্বন্দটা কি ধর্মীয় নাকি রাজনৈতিক...?


শিয়া এবং সুন্নীদের বিভক্তির শুরুটা মূলত রাজনৈতিক, হযরত আবু বকরের খেলাফতের বৈধতা নিয়ে। এই বিরোধটা ধর্মতত্ত্ব পর্যায়ে চলে যায় কারবালায় পুরো পরিবারসহ হোসাইন রা. শাহাদাতের পরে এবং এটা জোরালো হয় ও জিইয়ে থাকে বিভিন্ন খলিফা কর্তৃক আহলে বাইতের উপর নির্মম অত্যাচার, আলী রা. কে গালাগালি এবং আমাদের মূলধারার আলেমদের সে ব্যাপারে নিরবিতার জন্য।

আলী রা. ছিলেম দ্বিতীয় মুসলিম আর আর মুয়াবিয়া রা. মতো মক্কা বিজয়ের পরে ইসলাম গ্রহন করেছেন। ইসলামে এই দুই জনের মর্যাদার ব্যবধান আকাশ-পাতাল। কিন্ত সিফফিনের যুদ্ধ নিয়ে আলেমরা এমন ভাবে আলোচনা করেন যেন আলী রা. এবং মুয়াবিয়া রা. এর মর্যাদা একই অবস্থানে, এটাও ঝামেলা টিকে থাকার একটা বড় কারন।

গত ১৩শ বছরে শিয়াদের মধ্যে সুন্নীদের নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা হয়নি এবং সুন্নীরাও শিয়াদের বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করেনি।

শিয়াদের আলোচনা মোটামুটি, আহলে বাইয়াতের উপর অত্যাচার এবং কারবালার ঘটনা বলা, উপসংহার সুন্নীরা সব ইয়াজিদের গোলাম। আর সুন্নীদের আলোচনা সীমাবদ্ধ, শিয়া কর্তৃক সাহাবিদের গালাগাল এবং ইমামাতের কাহিনী বলে, খুচরা হুজুরদের উপসংহার শিয়ারা কাফের।

আমাদের সুন্নীদের আত্নসমালোচনা করা জরুরী। এখন পর্যন্ত ফাতেমা রা., আলী রা. সহ আহলে বাইয়াত সম্পর্কে যতটুকু আলোচনা করা উচিত ছিল আমাদের মধ্যে তা একদমই নেই। হাসান রা., হোসাইন রা. কে নিয়ে কেউ কিছু বললেই তাকে শিয়া বলে গালাগাল করা হয়। এমনকি আমাদের অন্যতম প্রধান ইমাম, ইমাম আশ শাফেয়ী র. কে শিয়া বলে জেলে বন্দী করা হয়েছিলো আহলে বাইয়াতকে নিয়ে কবিতা লেখার জন্য। এমনকি অনেক বিখ্যাত আলেম এখন পর্যন্ত, ইয়াজিদকে ডিফেন্ড করে, তার অপরাধকে ছোট করে দেখানোর চেস্টা করে। যদিও আমাদের চার ইমাম, কোন খলিফা বা অক্ষরবাদী সউদি পর্যন্ত শিয়াদের কাফের বলে ফতোয়া দিয়ে হজ্জ্বে নিষিদ্ধ করেনি তবুও শিয়াদের কাফের বলে বলা হয়।

আর কিছুদিন আগে এক শিয়া ভাইয়ের সাথে আলোচনায় বলেছিলাম,

আলী রা. আবু বকর রা. কে রিদ্দার যুদ্ধে যাবার পথে আটকান, হিজরি সাল প্রণয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। তিন খলিফার সময়ে আলী রা. ছিলেন একজন মন্ত্রীর মর্যাদায়। উমর রা. এর সাথে আলী রা. ছোট মেয়ের বিয়ে দেন।

আলী রেজা বাকের র. ছিলেন ইমামুল আজমের শিক্ষক। জাফর আস সাদিক র. ছিলেন আমাদের চার ইমামেরই অন্যতম প্রধান শিক্ষক, বিশেষ করে আবু হানিফা র. এবং ইমাম মালিকের উপর উনার প্রভাব অনেক। জাফর আস সাদিক র. এর পুত্রবধূ নাফিসা বিনতে হাসান ছিলেন ইমাম আশ শাফেয়ী র. অন্যতম প্রধান উস্তাদ। ইমাম শাফেয়ী মারা যাবার পরে উনার লাশ নাফিসা বিনতে হাসান র. বাড়ির সামনে রেখে আসা হয় যেন তিনি একা জানাজা পরতে পারেন।

ইমাম আহমাদ বলেছিলেন ইয়াজিদকে কোন মুসলমান ভাল বলতে পারে না। ইয়াজিদের নামের শেষে কেউ র. বললে ওমর বিন আব্দুল আজিজ র. তাকে ২০ টা বেত্রাঘাত করতেন। হানাফীদের সবচেয়ে বড় মুফাসসির মাহমুদ আলুসি বলেছেন, ইয়াজিদ একজন খবিস, একজন ফাসেক এবং সে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর রিসালাতে বিশ্বাস করতো না।

মুসলিমদের নাম ধরে অন্যকে লানত করার অনুমতি নেই তবে ইমাম আও জাওযি, ইমাম সুয়তি, ইমাম হাজর আসকালানি মতামত দিয়েছেন, ইয়াজিদ এই নিয়মের মধ্যে পরবে না, তাকে নাম ধরেই লানত দেওয়া যাবে। এভাবে আমি অনেক বলতে পারি। আমাদের দেশে যত হাসান, হোসেন, আলী, ফাতিমা আছে পুরো শিয়া বিশ্বে তার দশ ভাগের এক ভাগও নেই (নাম বোঝাচ্ছি)। এরপরেও আপনারা মনে করেন আমরা আহলে বাইয়াতকে ভালবাসি না। কেন!?

সত্য স্বীকার করতে হবে। সত্য হলো এই আলোচনা করে কোন লাভ নেই। গত ১৩শ বছর আমরা অনেক আলোচনা করেছি, সমাধান হয়নি, হবেও না। এর সমাধান শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিই করতে পারবেন, তিনি হলেন ইমাম মাহদি। যখন ইমাম মাহদি আসবেন, তখন আবু বকর রা. বৈধ খলিফা ছিলেন না, শিয়াদের এই ধারনা বাতিল হয়ে যাবে এবং এই শিয়া-সুন্নী ভাগ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আমরা এক হয়ে যাবো। তাই আমাদের দুই দলেরই উচিত, পার্থক্য আছে এটা মেনে নিয়ে ইমাম মাহদির জন্য অপেক্ষা করা।

বর্তমানে সউদি আরব আর ইরানের যে কিলাকিলি এর সাথে ধর্মতত্ত্বের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলামি বিপ্লবের আগেও ইরান শিয়া প্রধান ছিল। তখন ইরান ছিল সউদির খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমেরিকার নিয়ন্ত্রণের বাইরে৷ তারা রাশিয়ার মিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা এবং সউদির একচ্ছত্র মোড়লগিরিতে রাশিয়া এবং ইরান ভাগ বসাচ্ছে, তাই এই ঠেলাঠেলি। এটা মোটেও শিয়া-সুন্নির যুদ্ধ না।

- Samil

পঠিত : ৭০৭ বার

মন্তব্য: ০