Alapon

আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী এবং কিছু কথা।

অনেক দিন আগে বৃন্দাবন দাসের একটি নাটক দেখেছিলাম। নাটকটির নাম ছিল ‘সার্ভিস হোল্ডার’। নাটকটিতে বৃন্দাবন দাস এবং চঞ্চল চৌধুরী সহদর ভাই এর ভূমিকায় অভিনয় করেন। বৃন্দাবন দাস গ্রামে কৃষি কাজ করে ছোটভাই চঞ্চল চৌধুরীকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন। যার কারণে তিনি এখন সরকারী চাকরী করেন।


চঞ্চল একদিন তার বউকে নিয়ে গ্রামে তার ভাই এর বাড়িতে বেড়াতে এলো। চঞ্চল চৌধুরী কথায় কথায় ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করত। আর সেইসব শব্দশুনে তার অক্ষর জ্ঞানহীন ভাই মনে করত, তার ছোটভাই বিরাট জ্ঞানের কথা বলতেছে। প্রচন্ড গরমে অতীষ্ঠ হয়ে চঞ্চল যখন বলত ‘শিট’ গ্রামে এত্তো গরম ‘ডিসগাসটিং’! তখন বৃন্দাবন দাস অবাক হয়ে তাকিয়ে শুনত। আর ভাবত ‘আল্লাহ জানে এটা না কত্তো জ্ঞানের কথা’।


একটা সময় আমাদের অবস্থাটাও ছিল এই বৃন্দাবন দাসের মত। শাহবাগীরা তাদের লেখার মাঝখানে মাঝখানে এমন কিছু ইংরেজি শব্দ লিখত যা দেখে আমরা ভাবতাম ‘ওরে সর্বনাশ! এই মাল না জানি কত্তো শিক্ষিত আর কত্তো জ্ঞানী’! দিন পাল্টে গেছে। এখন আর লেখার ভিতরে ইংরেজি ওয়ার্ড দেখে কেউ অবাক হয় না। অনেকটা বাধ্য হয়ে আর কিছুটা নিজ গরজে বাঙালী এখন ইংরেজি ভাষাটির উপর মোটামুটি দক্ষ! তাই লেখার ভিতরে ‘ইংরেজি ওয়ার্ড ব্যবহারকারী’ তথাকথিত শাহবাগীদের আর কেউ জ্ঞানী বলে না। কারণ, এই কামটা এখন আমরা নিজেরাই তাদের চেয়ে ভালো পারি।


কিন্তু এর অবস্থান পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে অপ্রচলিত ইংরেজি ওয়ার্ড ব্যবহার করে এক শ্রেণীর মানুষ জ্ঞানী ভাব ধরতো। আর আজ কিছু মানুষ লেখার ভিতরে অপ্রচলিত ‘আরবী শব্দ’ ব্যবহার করে বিরাট জ্ঞানীর ভাবধরে বসে আছেন। আমরা বাঙাল মুসলিমরা আরবী দেখলেই একটু ভয় পাই। ‘ও আল্লাহ! এত্তো কঠিন ভাষা।’
কোনরকম বানান করে কুরআন পড়তে পারলেও আরবী ভাষা থেকে একটি শব্দেরও আলাদা অর্থ করবার সামর্থ আমাদের নেই। কারণ, আরবী ভাষার সঙ্গে আমরা অপরিচিত।
এই সুযোগে আমাদের আশেকে ইলমটাইপের জ্ঞানীরা নিজেদের জ্ঞান জাহির করতে ব্যস্ত।


অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের একটি কথা আমার মনে পড়ে। তাঁর শিষ্য আহমদ ছফা তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, ‘স্যার আপনি বই লিখেন নি কেন?’
স্যার বলেছিলেন, ‘দূর্ভাগ্যটা আমারই! আমি যদি বই লিখি দুই দিন পরে ঐ চায়ের দোকানদারও আমার বই এর ভুল ধরবার চেষ্টা করবে। আমার বই এর সমালোচনা করবে। বাঙালী আর কিছু পারুক না পারুক কিছু জানুক আর নাই জানুক, কিন্তু কাউকে নিয়েই সমালোচনা করতে ছাড় দেয় না। আর দিনশেষে বাঙালী সেই মানুষটিকে তার নিজের জায়গায় নামিয়ে নিয়ে আসে।’


আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভি সাহেবের জ্ঞান নিয়ে যখন বাঙালী যুবক প্রশ্ন তুলে তখন আব্দুর রাজ্জাক স্যারের কথাগুলোকে ১০০ তে ১০০% সঠিক মনে হয়। জনৈক মনীষী বলেছিলেন, ‘বাঙালীর আগমনটাই হয়েছে নিঁচু জাত থেকে। তাই এই নিঁচু জাতের মানুষগুলো সবাইকে নিচের দিকেই নামিয়ে আনতে চায়।’


আর হ্যা! সেই নিঁচু জাতের মধ্যে আমি নিজেও একজন। আমরা কেউই জ্ঞানী লোককেদের সম্মান দিতে জানি না। আর ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘যে জাতি জ্ঞানীকে সম্মান দিতে জানে না। সে জাতির মাঝে জ্ঞানীরা জন্মলাভ করে না।’


তবে তাতে মনে হয় না, বাঙালের খুব একটা আপত্তি আছে! কারণ, তারা ফাটাকেষ্ট মার্কা মন্ত্রী আর সেলফি পাগল নেতা ও তাহাজ্জুদি নেত্রী এবং স্বামীর গুনগানে ব্যস্ত নেত্রীকে নিয়েই সন্তুষ্ট। আর তাই তো বলতে হয়, ‘সারাবিশ্বের বিষ্ময় তুমি আমার বাঙাল জাতি।’

পঠিত : ১২৭৮ বার

মন্তব্য: ০