Alapon

আরও যেসব সময়ে হজ্জ পালন বন্ধ ছিল...


হজ্জ। ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে একটি। আর এই হজ্জ পালন করার জন্য সারাবিশ্বে মুসলিম পবিত্র মক্কা ভূমিতে একত্রিত হয়। আমাদের বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাজী হজ্জ পালন করার জন্য মক্কায় গমন করেন। এ বছরও প্রায় ৫ লাখ হ্জ্জ যাত্রী হজ্জে যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সারাবিশ্বে যে করোনা ভাইরাস মহামারি চলছে, তার প্রভাব হ্জ্জ পালনের ক্ষেত্রেও পড়েছে। সৌদি আরব সরকার এবার বাহিরের কোনো দেশের হাজীকে হজ্জ পালন করার অনুমতি দিচ্ছে না। কেবল যারা সৌদি আরবে অবস্থান করছে, তারাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে হজ্জ পালন করতে পারবে। এছাড়া আর কোনো দেশের মুসলিম এবার হ্জ্জ পালন করতে পারবে না।

তবে কি এটাই ইতিহাসে প্রথমবার যেবার, হজ্জের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে? এবার হজ্জ পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি, নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হচ্ছে ইতিহাস ঘেটে পাওয়া যায়, এর আগে বেশ কয়েকবার নানাবিধ কারণে হজ্জ বন্ধ বা বাতিল করা হয়েছিল। কোনোবার হ্জ্জ বন্ধ ছিল প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে। আর কোনোবার বন্ধ ছিল মানবসৃষ্ট দূর্যোগ যুদ্ধের কারণে। এছাড়াও কিছু উগ্রবাদি শিয়া গ্রুপের জন্য হজ্জ পালন বাধাগ্রস্থ হয়েছিল। চলুন তাহলে ইতিহাসের পাতা থেকে জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন বছর কোন কোন কারণে হজ্জ বন্ধ ছিল।

ইতিহাস অনুসারে হজ্জ প্রথম বন্ধ থাকে ৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে। তখন আব্বাসীয়দের শাসন চলছিল। আর সে সময় ইসমাঈল বিন ইউসুফ মক্কায় আক্রমন করে। যার কারণে সেবার হজ্জ পালন বাধাগ্রস্থ হয় এবং সেবারই প্রথমবার যেবার কোনো মুসলিম হজ্জ পালন করতে পারেনি।

ইতিহাস বলছে হজ্জ দ্বিতীয়বার বন্ধ থাকে ৯৩০ সালে। কারণ, সেই বছর শিয়াদের কট্টরবাদি গ্রুপ কারামাতিয়া মক্কায় আক্রমণ করে প্রায় ৩০ হাজার হাজীকে হত্যা করে। বহু হাজীকে হত্যা করে তারা জমজম কূপে নিক্ষেপ করে। এমনকি হামলা শেষে ফিরে যাওয়ার সময় পবিত্র পাথর হাজরে আসওয়াদ নিয়ে যায়। পরবর্তিতে এই পাথর ৯৪০ সালে উদ্ধার করার সম্ভব হয়। ইতিহাস অনুসারে যতোদিন পবিত্র পাথর হাজরে আসওয়াদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ততোদিন হজ্জ অনুষ্ঠিত হয়নি। অর্থাৎ ৯৩০ সাল থেকে ৯৪০ সাল পর্যন্ত এই ১০ বছর হজ্জ বন্ধ ছিল।

মহামারীর কারণে প্রথমবার হজ্জ বন্ধ থাকে ৯৬৮ সালে। সেবছর মক্কায় একটি অজানা রোগ ছড়িয়ে পড়ে, আর তাতে বহু মানুষ মারা যায়। এমনকি উটও মারা যায়। তবে সেই উটগুলো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা না গেলেও পানির অভাবে মারা যায়। আর যত্রতত্র মরা উট পড়ে থাকায় মক্কার পরিবেশ মারাত্মক বিষাক্ত ও দূষিত হয়ে পড়ে। যার কারণে সেসবছর হজ্জ পালন বন্ধ ছিল।

ইতিহাস বলছে এরপর ১৮১৪ সালে মহামারী প্লেগের কারণে হজ্জের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সেবছর প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে আরবের হেজাজ প্রদেশেই ৮ হাজার মানুষ মারা যায়। যার কারণে কতৃপক্ষ সে বছর হজ্জ বাতিল করতে বাধ্য হয়। এছাড়াও ১৮৩৭ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত প্লেগ রোগসহ বিভিন্ন মহামারীর কারণে উক্ত সময়ের মাঝে ৭ বার হজ্জ পালন বন্ধ রাখা হয়েছিল।

তবে উপরের সময়গুলোতে হজ্জ পালন পুরোপুরিভাবে বন্ধ থাকলেও ২০২০ সালে কিন্তু হজ্জ পালন পুরোপুরি বন্ধ থাকছে না। সীমিত আকারে হজ্জ পালন করা হবে। অর্থাৎ বহিঃবিশ্বের কেউ হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন করতে পারবে না। তবে বহিঃবিশ্বের কেউ যদি আগে থেকেই মক্কায় অবস্থান করে তবে তিনি বা তারা হজ্জ পালন করতে পারবেন।

সবশেষে নিজের একটা অনুভূতি প্রকাশ করে শেষ করছি। উপরোক্ত তথ্যগুলো আমরা হরহামেশাই ইন্টারনেট ঘেটে পড়ি। আগে যখন পড়তাম যে অমুক বছর অমুক কারণে হজ্জ পালন বন্ধ ছিল, তখন ওই সময়ের মানুষের অনুভূতি কেমন হয়েছিল তা জানতে খুবই আগ্রহ বোধ করতাম। কিন্তু আজ যখন মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে পুরোপুরি হজ্জ পালন বন্ধ না হলেও বৈশ্বিকভাবে পালন করা যাচ্ছে না, তখন কেমন একটা অনুভূমি কাজ করছে! আর মনে মনে ভাবছি, এই করোনা ভাইরাস আমাদের আরও কতকিছুর সাক্ষি করবে তা একমাত্র আল্লাহপাকই ভালো জানেন।

পঠিত : ৪৭৩ বার

মন্তব্য: ০