Alapon

মু’মিনের প্রকৃত গুনাগুন।

মাঝে মাঝে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে লজ্জা পাই। কখনো কখনো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেও লজ্জা পাই। অনেকসময় মনে হয়, আল্লাহর কাছে আর সাহায্য চাইবো না। কিচ্ছু চাইবো না। কারণ, আমি হয়তো সেই যোগ্যতাটাই হারিয়ে ফেলেছি। বারংবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার পরক্ষণেই পাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছি।


এমন অনুভূতি প্রায়ই কাজ করে। আমার এক বন্ধু ছিল, যে প্রচন্ড পরিমাণে নেশা করত। নেশা জাতীয় এমন কোন দ্রব্য নেই যা সে খায় নি। একদিন একটি গোলাপী রং এর ট্যাবলেট নিয়ে এসে বলল, ‘দেখি তোমার কেমন জ্ঞান! এইটা কি ট্যাবলেট বল তো দেখি?’
আমি ভাবলাম নেশা করতে করতে হয়তো সে দুর্বল হয়ে গেছে। সেই সেন্স থেকে বললাম, ‘কি আর হবে! ভিটামিন ট্যাবলেট হয়তো।’



আমার উত্তরে তার ছিল অট্টহাসি। ‘মিয়া এইটা ইয়াবা। বাবা ট্যাবলেট।’


সেই বন্ধুটিকে আল্লাহ এবং আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত স্মরণ করানোর ফলে একদিন সে জুম্মার নামাযে উপস্থিত হল। এরপর সে আসরের সালাতেও সামিল হল। এরপর মাগরিব এবং এশা। এভাবে একসময় নিয়মিত হতে লাগল।


একদিন সে বাচ্চাদের মত কাঁদতে লাগল। সেকি কান্না। সে কান্না দেখে নিজেই ভড়কে গিয়ে ছিলাম। কাঁদতে কাঁদতে সে বলছিল, ‘আমি আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যেন নেশা থেকে দূরে থাকতে পারি। কিন্তু নামায শেষ করেই আবার গাঁজা খাওয়ার জন্য বাইক ছুটাচ্ছি। এশার সালাতেই বললাম, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর নেশা-পানি করব না। অথচ মাসজিদ থেকে বের হয়েই পুরনো এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল। ফেনসিডিলের অফার করতেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথাটি ভুলে গেলাম। ডাইল খেয়ে আমি নেশায় বুদ হয়ে গেলাম। এটা কি ধোঁকাবাজি নয়।’


এসব ভেবেই সে বলল, ‘আমি আর মাসজিদে যাবো না। সালাত পড়ব না। যতোই খারাপ হই আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে এক কথা বলি আর মাসজিদ থেকে বেরিয়েই হারাম কাজ করি। এর চেয়ে সালাত না পড়াই ভাল।’


কখনো কখনো এহেন চিন্তা আমাকেও গ্রাস করে ফেলে।


তখন আমি তাকাই ফুটপাতের দোকানদার গুলোর দিকে। সারাদিন তারা ধুলোবালির মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ব্যবসা করে। সন্ধ্যায় যখন ঘরে ফিরে তখন সাবান দিয়ে গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েই ঘরে প্রবেশ করে। সে তো আর বলে না, ‘আগামীকালও তো একই কাজ করতে যাবো। পরিষ্কার হবার কি দরকার। অযথা সাবান ক্ষয় আর সময় নষ্ট।’ নাহ এই কথা সে কোনদিনই বলবে না।


তেমনি মু’মিনেরও এমন কথা বলা উচিত নয়, প্রতিদিনই তো পাপ করছি। তাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো না কিংবা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবো না। পাপ করবে এবং আবারো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে এটাইতো প্রকৃত মু’মিনের জীবন। আর সেই ক্ষমা চাওয়ার উত্তম মাস চলছে। তার চে’ও উত্তম রজনী লাইলাতুল কদরের রাত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাই এইরাতকে কাজে লাগিয়ে যে নিজেকে পরিষ্কার করে নিতে পারবে, সেই তো উত্তম। সেই তো প্রকৃত সফল মানুষ।


পঠিত : ৬৬০ বার

মন্তব্য: ০