Alapon

যুবকদের জন্য দ্রুত বিবাহ করাই কি একমাত্র সমাধান...?


আমার খুব কাছের এক ছোট ভাই ‘আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন’ নিয়ে খুবই আগ্রহী। অর্থাৎ সেও দ্রুত বিয়ে করতে চায়। দ্রুত বিয়ে করতে চাওয়াটা খারাপ কিছু নয়; বরঞ্চ ভালোই।
তো তাকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কি বিয়ের মানে বোঝ?
সে পাল্টা প্রশ্ন করল, আপনার প্রশ্নটা ঠিক বুঝলাম না। বুঝিয়ে বলেন।
তখন বললাম, বিয়ে বলতে আদৌত কী বুঝায়? বিয়ে মানে কি কেবলেই দুটি ছেলে-মেয়ের মাঝে সম্পর্ক? বিয়ের পর বাংলা সিনেমার মত অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করছে- তোমার কাছে ব্যাপারটা কি এমন?

তুমি যদি এমন কিছু ভেবে থাকো, অথবা এ ব্যাপারে কিছুই না ভাবো তাহলে কিছু কথা বলি, মন দিয়ে শোন। বিয়ে মানে কেবল দুটি ছেলে-মেয়ের মাঝে সম্পর্ক নয়। একটা বিয়ে মানে দুটি পরিবারের সম্পর্ক। হ্যা, দুটি পরিবারের নতুন করে আত্মিয়তা তৈরি হয়। আর এই আত্মিয়তার উপলক্ষ্য তুমি আর তোমার নববিবাহিতা স্ত্রী। ফলে, এই আত্মিয়তার সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে, এই তোমাদের দুজনকেই। এটাই দায়িত্বশীলতা।

তখন তাকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কি এই দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছো?
তুমি কি তোমার নিজের ছোট ভাইয়ের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখো? তোমার বাবা-মায়ের খেয়াল রাখো? তোমার বড় বোনদের শ্বশুরবাড়ির আত্মিয়দের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখো? তোমার দাদা বাড়ির লোকজনদের খবরাখবর রাখো? চাচা-চাচিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখো? তোমার মামা-মামিদের খবর নাও?

উপরের সবগুলো প্রশ্নের উত্তর যদি হয় ‘না’, তবে তুমি এখনো দায়িত্বশীল হতো পারোনি। যার ফলে ধরে নেওয়াই যায়, এখন বিয়ে করলে তুমি আচমকাই দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারবে না। তুমি তোমার শ্বশুর বাড়ির আত্মিয়দের সাথে দায়িত্বশীল সম্পর্ক রাখতে পারবে না। এমনকি তুমি নিজের স্ত্রীর ক্ষেত্রেও ততোটা দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারবে না। কারণ, তুমি কখনো দায়িত্ব সম্পর্কে ভাবোইনি!

এবার নিজে থেকেই প্রশ্ন করলাম, কেন ভাবোনি জানো?
আমাদের পারিপার্শ্বিকতার জন্য।

খেয়াল করে দেখ, যখন তুমি এস.এস.সি পাশ করলে তখন নিশ্চয়ই অনেক বড় হয়ে গেছো। এর মাঝে হয়তো একদিন তোমার আব্বা বলল, যাও তো বাজার খরচ করে নিয়ে আসো! তখনই তোমার আম্মা বলল, না না! ওর বাজারে যাওয়ার দরকার নেই। ও কি বাজার খরচ কোনোদিন করেছে নাকি পারবে? ও বাজার খরচ করতে পারবে না।
আমাদের জীবনে এরকম বহু ঘটনা আছে, যেগুলোতে আমাদের বাবা মায়েদের মন্তব্য ছিল- ও পারবে না। এই ‘পারবে না’ ছোট্ট বাক্যটি শুনতে শুনতে আমাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, আমরা যেকোনো দায়িত্ব নিতে ভয় পাই। ছোট্ট ওই বাক্যটাই আমাদের বহুদিন পর্যন্ত শারীরিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে শিশু বানিয়ে রাখে। ফলত ২০ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরও আমরা নিজেকে বড় বা দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ ভাবতে পারি না। এমনকি আমরা নিজেরাও বিশ্বাস করি, অমুক কাজটা আব্বার সাহায্য ছাড়া আমি করতে পারব না। আর এই মানসিকতার কারণেই স্বাভাবিকভাবে আমাদের ভিতরে দায়িত্ব চেতনা অনেকটা দেরিতে কাজ করে।

এতো গেল একটা কারণ! দ্রুত বিয়ে করতে চাওয়ার সবচেয়ে প্রধান কারণ হল, শারীরিক সম্পর্ক! আমরা যারা বিয়ে করিনি তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে বিরাট কৌতূহল কাজ করে। আর কাজ করাটাই স্বাভাবিক। অল্প বয়সে বিয়ে করতে চাওয়ার প্রধান কারণ থাকে ঈমান বাঁচানো। অর্থাৎ হালাল উপায়ে যৌন চাহিদা পূরণ করার মধ্য দিয়ে ‍নিজের ঈমান বাঁচানো।

প্রথমত বলে নেওয়া ভালো, শারীরিক সম্পর্ক বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেজর অংশ হলেও ছোট্ট একটি অংশ। এখানে শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও আরও অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো দায়িত্বশীলতার সাথে সমন্বয় করতে হয়।

দ্বিতীয়ত, অধিকাংশরাই ঈমান বাঁচানোর প্রয়োজনে বিবাহ করলেও, বিয়ের পরপরই সেই ঈমানের উপর ভয়ংকরভাবে আঘাত হানেন। কীভাবে?
এমন অনেককেই দেখেছি যারা বিয়ের পর বন্ধুদের কাছে বাসর ঘরের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খু বর্ণনা করে, সবাই মিলে হাশি তামাশা করেছে। এছাড়াও কোনদিন বউয়ের সাথে কী করেছে না করেছে এসব কিছু সে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে বিয়ের আমানতেরই খেয়ানত করে ফেলে। আর আল্লাহ এই কাজটাকে জঘণ্য পাপাচার বলে উল্লেখ করেছেন। অতএব যে পাপ থেকে বাঁচার জন্য বিবাহ করলেন, আবার সেই পাপেই জড়িয়ে পড়ছেন। স্ত্রী সাথে একান্তু মুহুর্তের গল্প বলে জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছেন।

অতএব শুধু বিয়ে করতে চাইলেই বা বিয়ে করলেই হবে না। বিয়ের প্রকৃত মর্মার্থ বুঝতে হবে। তবেই আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন স্বার্থক হবে বলে আমার বিশ্বাস।

পঠিত : ৭৯৬ বার

মন্তব্য: ০