Alapon

মিথ্যা আত্মসম্মানবোধ এবং মুসলিম জাতির অসহায় অবস্থা...


১.
কিছুদিন আগের ঘটনা। এক পরিচিত ভাই ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল দিলেন। কল দিয়ে বললেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন। তাকে যদি একটা কাজ সংগ্রহ করে দিতে পারতাম, তাহলে তার জন্য এহসান হয়।’

আমি সেই ভাইকে বললাম, ‘ভাই, এই মুহুর্তে তো সবাই ক্রাইসিসে আছে। এমনকি কারোর ব্যবসাই ঠিকমত চলছে না। তাই নতুন করে কোথাও লোক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে মনে হয় না। আপনি একটা কাজ করতে পারেন, যদি আপনার একটা বাই-সাইকেল থাকে তবে অস্থায়ীভাবে আপনার একটা আয়ের উৎস হতে পারে। আমাদের বইয়ের দোকানে প্রতিদিনই বেশ কিছু পার্সেল জমা হয়। যেগুলো ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ডেলিভারি দিতে হয়। ডেলিভারি বাবদ প্রতি পার্সেলে আমরা ৫০-৮০ টাকা দিয়ে থাকি। আপনি এই কাজটা করতে পারেন। আপনার বাই-সাইকেল না থাকলে আমি ম্যানেজ করে দিবো।’

আমার প্রস্তাবনা শুনে সেই ভাই বললেন, ‘ভাই, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করে এখন ডেলিভারি ম্যানের কাজ করবো! আপনার প্রস্তাবনাটা আমি ভেবে পরে জানাবো।’

২.
কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে একটা ঘটনা জানতে পারলাম। ঘটনাটি অনেকটা এমন।

আমেরিকার একজন কালো টিন এজার মেয়ে, কফি শপে চাকরি খুঁজছিল। সে প্রতিদিনই চাকরি খুঁজতে বের হয়। কিন্তু তার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে কেউই তাকে কাজ দিচ্ছিল না। কিন্তু সে নিরাশ না হয়ে কাজ খুঁজতে লাগল। এভাবে খুঁজতে খুঁজতে সৌভাগ্যবশত একদিন কাজ পেয়েও গেল। কিন্তু শপ মালিক বলল, ‘শোনো মেয়ে, শপে কিন্তু ঠিক সময়মত আসতে হবে। কখনো দেরি করা যাবে না। দেরি করলে সেদিনই তোমার চাকরি শেষ।

তারপর সেই মেয়ে চাকরিতে জয়েন করে। কাজে নতুন হওয়ায় তাকে বেশ কষ্ট করতে হচ্ছিল। একদিন কাজ করতে করতে বেখেয়াল বশত সে কিছু কফি এক কাস্টমারের গায়ে ফেলে দেয়। তারপর সেই কাস্টমার কালো মেয়েটিকে প্রচন্ড বকাঝকা করে। তারপর সে মালিকের কাছে অনেকবার ‘সরি’ বলে সেবারের মত চাকরি বাঁচায়।

এভাবে দিন যাচ্ছিল। এরই মাঝে কফি শপের অন্যান্য স্টাফদের সাথে সেই মেয়ের বন্ধুত্ব হয়। একদিন সেই স্টাফদের মধ্যে একজনের জন্মদিন ছিল এবং সে সবাইকে তার বাড়িতে দাওয়াত করে। সেই কালো টিএন এজার মেয়েটিও তার জন্মদিন পার্টিতে অংশ গ্রহণ করে। কিন্তু তাকে যখন কেক খেতে দেওয়া হল, তখন দেখা গেল সে কেকটা তেমন খাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেন, অনিচ্ছা স্বত্বেও খুব জোর করে খাচ্ছে। তখন তার অপর একজন বন্ধু জিজ্ঞেস করে, কী হল? তোমার কি কেকটা খেতে ভালো লাগছে না?
তখন সে বলে, ‘না, তেমন কিছু নয়। আসলে আমার পেটে ক্ষুধা নেই। তাই হয়ত খেতে পারছি না।

এভাবেই বেশ কিছুদিন কেটে যায়। এর মাঝে সেই কফি শপের এক স্টাফ লক্ষ্য করে সেই কালো টিন এজার মেয়েটি যখন কাজ শেষে কফি শফ থেকে বেরিয়ে যায়, তখন ৬ জন কালো দির্ঘাদেহি ব্যক্তি তাকে ঘিরে ধরে একটা দামি গাড়িতে করে নিয়ে যায়। ব্যাপারটা আস্তে আস্তে অন্যান্য স্টাফরাও খেয়াল করে।

এর মাঝে একদিন কফি শপে এক কাস্টমার আগমন করে। সে ওই কালো টিন এজার মেয়েটিকে খাবার অর্ডার করে। সেই মেয়েটি যখন খাবার পরিবেশন করছিল, তখন সেই লোকটি তাকে জিজ্ঞেশ করলো, তোমাকে খুব চেনা চেনা লাগছে! কোথায় দেখেছি বলত?
এরপর কিছুক্ষণ ভাবার পর সেই লোক লাফ দিয়ে উঠে বলে, ও মাই গড! তুমি তো আমাদের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মেয়ে।

৩.
পরে এই ঘটনা নিয়ে বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেলকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে রাজকীয় জীবনে অভ্যস্থ করতে চাই না। আমরা চাই, যে যেন সাধারণ জীবন-যাপন করে। আর নিজে উপার্জন করা নিঃসন্দেহে গৌরবের বিষয়। আমরা চাই, সে যেন এই গৌরব থেকে কখনো বঞ্জিত না হয়। তাই তাকে আমরা কাজ করতে উৎসাহ জুগিয়েছিলাম এবং সে একটা কাজও জুটে নিয়েছিল। সে আপাতত সফল!

৪.
আল্লাহর রাসূলের একটি বিখ্যাত হাদীস রয়েছে। আল্লাহর রাসূল বলেন, ‘একজন ব্যক্তি নিজে পরিশ্রম করে যা উপার্জন করে তার চেয়ে উত্তম আর কিছু হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ‘ যদি আল্লাহ কাউকে জীবিক উপার্জন করার মত সুযোগ দেন, তাহলে সে যেন হাত পা গুটিয়ে বসে না থাকে। বরং যতক্ষণ পর্যন্ত সক্ষমতা আছে, সে যেন পরিশ্রম করে যায়।’

আজ দেখতে পাচ্ছি, বিধর্মীরাই আল্লাহর রাসূলের হাদীসের উপর আমল করছে এবং নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। আর আমরা মুসলিমরা লোকের কথার ভয়ে কিংবা মিথ্যে আত্মসম্মান বোধের তাড়নায় কাজ কর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি। ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম নয়, এমন প্রত্যেকটি কাজই সম্মানের। তাই ইসলাম বলছে. কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা যাবে না। হালাল যে কোনো কাজের সুযোগ পেলে তা লুফে নিতে হবে। কারণ, নিজের উপার্জিত রিজিকের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার দুনিয়ায় আর একটিও নেই। আর মন্ত্রে দিক্ষিত হয়ে বিধর্মীরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিন দিন উন্নত থেকে উন্নতর জীবন-যাপন করছে। আর আমরা মুসলিমরা মিথ্যে আত্ম মর্যাদার কথা ভেবে দিন দিন গরীব থেকে গরীব হয়ে যাচ্ছি।

পঠিত : ৪০৯ বার

মন্তব্য: ০