Alapon

আয়া সোফিয়া মসজিদ এবং কিছু কথা...


বাঙালি জাতিকে অতীতে বহুবার লিখেছি। এই জাতি বড় অদ্ভুদ জাতি। যদিও আজকের ব্লগের বিষয় বাঙালি জাতি নয়। কিন্তু মূল আলোচনায় প্রবেশ করার আগে বাঙালি জাতিকে নিয়ে দুটি কথা না বললেই নয়।

বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের নিজস্বতা বলতে তেমন কিছুই নেই; এমনকি ইতিহাসও নেই। তাই আমরা সর্বদা অন্য জাতির বিষয় নিয়ে হাউকাউ এ মেতে থাকি এবং অযাচিত মন্তব্য করি। যেমন এখন আয়া সোফিয়া নিয়ে বাঙালি জাতি অযাচিত মন্তব্য করতে ব্যস্ত রয়েছে।

বাঙালি জাতি বরাবরই হিনমন্য জাতি। অর্থাৎ লোকে কী বলবে সর্বদা এই ভয়ে ভীত! তাই ইস্তাম্বুল শহরের প্রাণ আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর থেকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তর করার বিষয়টি নিয়ে তারা পশ্চিমা জুজুর ভয়ে ভীত। এমনকি পশ্চিমাদের ভয়ে ভীত হয়ে তারা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকেই দুষছে। কেউ কেউ তো বলছে, এরদোয়ান এর মাধ্যমে পুরো ইসলামকেই আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন। যদিও আয়া সোফিয়া নিয়ে তুর্কি জাতির মধ্যে তেমন একটা ভেদাভেদ দেখা যাচ্ছে না। বরঞ্জ অধিকাংশ সাধারণ মানুষ আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের সংবাদ শুনে তাকবির ধ্বনি দিতে দিতে রাজপথে নেমে এসেছেন। কিন্তু বাঙালি আছে মহাচিন্তায়! কারণ, বাঙালি এখনো সাদা চামড়াওয়ালাদের দাসত্ব করে যাচ্ছে। চিন্তাগত দাসত্ব করে যাচ্ছে। যার কারণে তাদের সাদা চামড়াওয়ালা প্রভুরা আয়া সোফিয়াকে মসজিদের রূপান্তরের বিষয়টাকে কীভাবে দেখবে, এই চিন্তায় তাদের ঘুম হারাম!

প্রথম আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়নি; বরং মসজিদ থেকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছিল। সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ যখন কন্সটান্টিপোল বিজয় করেন, তখনকার নিয়মানুসারে বিজিত শহরের মালিক সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যায়। ফলে যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারবে। কিন্তু তারপরও সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ প্রচলিত নিয়মের তোয়াক্কা না করে আয়া সোফিয়াসহ বেশ কয়েকটি গির্জা বিশাল অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করে নেন। এই অর্থটাও কিন্তু রাষ্ট্রিয় কোষাগারের অর্থ নয়, সুলতানের ব্যক্তিগত অর্থ। অর্থাৎ এই থেকে বোঝা যাচ্ছে, আয়া সোফিয়া ছিল সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহের ক্রয় করা ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ফলে আয়া সোফিয়ার ব্যাপারে সুলতানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে- এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু এক্ষেত্রেও সুলতান নিজের উদারতার পরিচয় দিলেন। তিনি বিজ্ঞ আলিমদের পরামর্শ গ্রহণ করলেন এবং আলিমদের পরামর্শনুসারেই আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করেন। তারপর থেকে আয়া সোফিয়াতে নিয়মিতই নামাজ আদায় হয়ে আসছিল।

আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করার প্রায় ৫০০ বছর পর এক ডিগ্রী জারির মাধ্যমে এটাকে মসজিদ থেকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। আজ প্রায় ১০০ বছর পর আদালতের রায়ের মাধ্যমে আয়ো সোফিয়ায় পুনরায় আজান হয়েছে। আগামী ২৪ জুলাই পবিত্র জুমাবারে জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে পুনরায় নামাজ শুরু হবে।

এই কাজটাকে সমর্থন করতে গিয়ে কেউ কেউ কর্ডোভার যুক্তি দেখাচ্ছেন। মুসলিমদের থেকে খ্রিষ্টানরা যখন স্পেন দখল করে নিলো অর্থাৎ চুক্তির মাধ্যমে অধিকার করে নিলো, তখন চুক্তিতে উল্লেখ ছিল মসজিদগুলো মসজিদই থাকবে এবং মানুষ স্বাধীনভাব ধর্ম পালন করতে পারবে। কিন্তু পরবর্তিতে দেখা গেছে সেই মসজিদগুলোকে চার্চ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এটা জুলুম।

এখন যদি বলা হয়, খ্রিষ্টানরা কর্ডোভায় এমনটা করেছে তাই আমরা ইস্তাম্বুলে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরিত করলাম। তার মানে আমরা একটা জুলুমের বিপরীতে আর একটা জুলুম করলাম। কিন্তু আয়া সোফিয়ার বিষয়টি তেমন নয়। বরং স্পেনের উদাহরণ টানাটাই এখানে অযৌক্তিক। আয়া সোফিয়াকে সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ কিনে নিয়ে মসজিদে রূপান্তরিত করেছিলেন।

আর এক গ্রুপ আছে, যারা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সব কাজেই দূরভিসন্ধি এবং গভীর রাজনীতি খুঁজে পান। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। এ কথা সত্য আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করার দিকটা যতোটা না ধর্মীয় তারচেয়ে ঢের বেশি রাজনৈতিক। এটা অবশ্যই একটি রাজনৈতিক টার্ন। যারা কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা বলে, তারা আয়া সোফিয়াকে নিয়ে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত ভাবছে। আর যারা দির্ঘমেয়াদি ও সূদুরপ্রসারী রাজনীতি নিয়ে ভাবে তারা আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের বিষয়টাকে উসমানী সালতানাত ফিরিয়ে নিয়ে আসার রাজনীতি হিসেবে দেখছে। দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করুন বিজয় দেখতে পাবেন। দৃষ্টিভঙ্গি সংকির্ণ করলে দিনশেষে পরাজয়ের গ্লানি ছাড়া আপনাদের জন্য আর কিছুই অপেক্ষা করছে না।

পঠিত : ৪৫৪ বার

মন্তব্য: ০