Alapon

আয়া সোফিয়ার ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিন...



ছবি: আয়া সোফিয়াতে আক্রমণ করতে যাচ্ছে ক্রুসেডার বাহিনী।
৮ এপ্রিল ১২০৪,

বেশিরভাগ মুসলিমরা মনে করে ক্রুসেড শুধুমাত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে হয়েছিলো। এটা একটা ভুল ধারনা। ক্যাথলিক খৃষ্টানদের পরিচালিত ক্রুসেড শুধু মুসলমান না, ইস্টার্ন অর্থোডক্স খৃষ্টানদের বিরুদ্ধেও হয়েছিলো। ১২০৪ সালের ৮ এপ্রিল পোপ তৃতীয় ইনোসেন্টের নির্দেশে ক্রুসেডাররা কন্সন্টাস্টিনোপল আক্রমণ করে। এটাকে চতুর্থ ক্রুসেড বলা হয়। তারা কন্সন্টাস্টিনোপলে অনেকটা জেরুজালেমের মতই হত্যাযজ্ঞ চালায়। কমপক্ষে ৪০০,০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়, মেয়েদের ধর্ষন করে, শহরের অর্থোডক্স চার্চগুলো আক্রমণ করে।

আয়া সোফিয়া ছিল ইস্টার্ন অর্থোডক্স খৃষ্টানদের মূল কেন্দ্র। ক্রুসেডারদের হামলার অন্যতম মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল আয়া সোফিয়া। হামলা করে ক্রুসেডাররা আয়া সোফিয়াতে হত্যাযজ্ঞ এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। আয়া সোফিয়ার মূলবান সামগ্রী লুট করে। ( বিঃদ্রঃ ইস্টার্ন অর্থোডক্সদের সাথে ক্যাথলিক মৌলিক পার্থক্য অনেক। এমনকি দুই দলের ট্রিনিটির ধারনাও এক না।)

২৯ মে ১৪৫৩,

এই দিন ২১ বছর বয়েসি সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ কন্সন্টাস্টিনোপলে জয় করেন। সকালবেলা এই কিশোর সুলতান বলেন, আজ শহর নয়; আমি আমার হৃদয় জয় করতে যাচ্ছি। তাই বিজয়ের পরে হয়নি কোন লুটপাট, ধ্বংসযজ্ঞ বা নারীদের অপমানের মচ্ছব। সুলতান মুহাম্মদের আগমনে শহরটিও যেন প্রাণ ফিরে পায়। সুলতান মুহাম্মদ আয়া সোফিয়াতে যান, আয়া সোফিয়ার ভেতরে প্রেসবেটরসরা ভয়ে তটস্থ ছিল (ইস্টার্ন অর্থোডক্স খৃষ্টিয়ানিটিতে ধর্মগুরুদের প্রেসবেটর বলা হয়। ক্যাথলিক খৃষ্টিয়ানিটিতে বলা হয় ফাদার)। তিনি আয়া সোফিয়ার গায়ে সামান্যতম হাত দেন নাই। আয়া সোফিয়ার ধর্মগুরুদের ভয় কাটাতে সুলতান সহকর্মীদের আজানের আদেশ দিলেন। তারপর সেখানে নামাজ আদায় করলেন। আয়া সোফিয়ার প্রেসবেটররা এমন শত্রু দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তবে অবাক হওয়া আরো বাকী৷ সুলতান মুহাম্মদ ধর্মগুরুদের অভয় দিলেন কোন গির্জাকে অসম্মান করা হবে না, হত্যাযজ্ঞের তো প্রশ্নই আসে না।

রেনেসাঁস পূর্ব ইউরোপে চার্চ শুধুমাত্র উপসনালয় ছিল না। চার্চের রাজনৈতিক ক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রে রাজার চেয়েও বেশি ছিল। কন্সন্টাস্টিনোপলের মূল রাজনৈতিক কেন্দ্রও ছিল আয়া সোফিয়া। কোন রাজ্য জয় করে বিরোধী পক্ষ রাজার প্রসাদ, মূল দরবার কেন্দ্র দখল করেন, এটাই হয়ে আসছে ইতিহাসে। তো কন্সন্টাস্টিনোপল বিজয়ী সুলতান মূল রাজনৈতিক কেন্দ্র আয়া সোফিয়া দখল করবেন এটাই স্বাভাবিক ছিল তবে তিনি তা করেননি। সুলতান মুহাম্মদ ধর্মগুরুদের সম্মানর্থে, আয়া সোফিয়া দখল না করে বিপুল অর্থ দিয়ে কিনে নেন। এটা ইতিহাসে একটা অভিনব ঘটনা।


ছবি: আয়া সোফিয়া ক্রয় এবং ওয়াকফ করার দলিল।
নিজ অর্থে কেনা আয়া সোফিয়াকে সুলতান মুহাম্মদ মসজিদে রুপান্তর করে ওয়াকফ করে দেন। ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত আয়া সোফিয়া মসজিদ ছিল। এরপর মোস্তফা কামাল ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওয়াকফ সম্পত্তিকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করেন। ২০২০ সালে এসে তুরস্কের আদালত সকল দলিল দেখে এই আয়া সোফিয়াকে পুনরায় ওয়াকফের ওসিয়ত অনুসারে মসজিদ বানানোর নির্দেশ দেয়।

- সালমান শামিল

পঠিত : ৭২৮ বার

মন্তব্য: ০