Alapon

যেসব ক্ষুদ্র আমলের ফলে বেহশতে নির্মিত হয় ইমারত...


মাঝেমাঝে হতাশা আমাদের ঘিরে রাখে। মন বসে না কোনো কাজে। বারবার ব্যর্থ হয়ে পড়ি চেষ্টা করার পরেও৷ আমাদের প্রিয় নবীজিকেও (ﷺ) সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক কঠিন অবস্থার। তিনি যখন অনুভব করতেন কোনো কঠিন মুহুর্ত, তখন দাঁড়িয়ে যেতেন প্রভুর সামনে। দু'হাত তুলে প্রভুর কাছে মিনতি করতেন। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামজের পাশাপাশি তিনি অতিরিক্ত কিছু নামাজ আদায় করতেন।

তাঁর প্রিয় একটা সুন্নাহ আমরা এখন ভুলে বসেছি। সেটা হচ্ছে চাশতের নামাজ। এ নামাজের সময় হচ্ছে সূর্যদয়ের পর থেকে শুরু করে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত। এ নামাজের ব্যাপারে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। (তা হল) ১. প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করা। ২. সালাতুয-যোহা (চাশত এর সালাত আদায় করা)। ৩. বিত্‌র (সালাত) আদায় করে শয়ন করা। (১)

‘আয়িশা (রাঃ)-কে একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘যুহা’ বা চাশ্‌তের সলাত কয় রাক‘আত আদায় করতেন? জবাবে ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি ‘যুহা’ বা চাশতের সলাত সাধারণতঃ চার রাক‘আত আদায় করতেন এবং অনেক সময় ইচ্ছামত আরো বেশী আদায় করতেন। (২)

সামর্থ্যের কারণে আমাদের অনকের সুযোগ হয় না আল্লাহর ঘর যিয়ারতের। আপনার অর্থ নেই, কী হয়েছে! অযু করে দাঁড়িয়ে যান জায়নামাজে দিনের প্রথম প্রহরে। শুরু করুন আপনার দিন অফিস বা ক্লাসে যাওয়ার পূর্বে দু'রাকাত নামাজ দিয়ে।

প্রিয় রসূলুল্লাহ (ﷺ) কী বলেছেন জানেন! তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি ফারয সালাতের জন্য উযু করে নিজ ঘর থেকে বের হবে, সে একজন ইহরামধারী হাজ্জীর সমান সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি চাশতের সলাত আদায় করার জন্য বের হবে, সে একজন ‘উমরাহকারীর সমান সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত সলাত আদায়ের পর থেকে আরেক ওয়াক্ত সলাত আদায়ের মধ্যবর্তী সময়ে কোন বাজে কথা বা কাজ করবে না, তাকে ইল্লিয়্যুন-এ লিপিবদ্ধ করা হবে( অর্থাৎ তাঁর মর্যাদা সুউচ্চ হবে)।

চাশতের সালাতের মর্যাদা বর্ণনা দিতে গিয়ে
রহমতের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, আদম সন্তানের শরীরের প্রতিটি অস্থি প্রতিদিন নিজের উপর সদাক্বাহ ওয়াজিব করে। কারোর সাক্ষাতে তাকে সালাম দেয়া একটি সদাক্বাহ। সৎ কাজের আদেশ একটি সদাক্বাহ, অন্যায় হতে নিষেধ করা একটি সদাক্বাহ। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা একটি সদাক্বাহ। পরিবার-পরিজনের দায়-দায়িত্ব বহন করা একটি সদাক্বাহ। আর চাশতের দু’ রাক’আত সলাত এসব কিছুর পরিপূরক হতে পারে। (৬)

সুবহানাল্লাহ! চলুন না আজই শুরু করি ছোট্ট এ আমলটি।

এ নামাজের দরুন যদি আল্লাহ আমাকে ক্ষমার ঘোষণা দেন তাহলে এতো বড় নেয়ামত আর কী হতে পারে! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি চাশতের দু’ রাকআত সলাতের হেফাজত করলো, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হলো, তা সমুদ্রের ফেনারাশির ন্যায় অধিক হলেও। (৫)

পৃথিবীতে সৌন্দর্যমণ্ডিত একটা আবাসন কে না চায়! আর আল্লাহ যদি আমাকে জান্নাতে এমন একটা আবাসন উপহার দেন ক্ষুদ্র একটা আমলের বিনিময়ে! হ্যাঁ, তিনি তাঁর প্রিয় হাবিবকে তাই জানিয়েছেন। প্রিয় নবীজি (সঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি বার রাকআত চাশতের সালাত পড়লো, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি স্বর্ণের ইমারত নির্মাণ করেন।" (৬)

এ নামাজের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) বলতেন, আমার মা-বাবাকে জিন্দা করে পাঠানো হলেও আমি চাশতের এই আট রাক’আতকে ছাড়ব না। (৭)

মানবদেহে হাড় রয়েছে ৩৬০ টি। যে কোনো একটি হাড় ব্যথিত হলে পুরো শরীর ব্যথা করে। এ হাড়গুলো আল্লাহর অশেষ এক নেয়ামত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের প্রত্যেক (হাড়ের) জোড়ের পক্ষ থেকে প্রাত্যহিক (প্রদেয়) সাদকাহ রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর (আল্লাহু আকবার বলা) সাদকাহ এবং ভাল কাজের আদেশ প্রদান ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ। এ সব কাজের পরিবর্তে চাশতের দু’রাক্আত নামাযই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে।’’ (৮)

অন্য এক হাদিসে এসেছে, মানুষের শরীরে তিনশত ষাটটি জোড়া আছে। প্রত্যেক লোকের উচিত প্রত্যেকটি জোড়ার জন্যে সদাক্বাহ্ করা। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কার সাধ্য আছে এ কাজ করতে? তিনি বললেন, মাসজিদে পড়ে থাকা থুথু মুছে ফেলাও একটি সদাক্বাহ্। পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়াও একটি সদাক্বাহ্। তিনশত ষাট জোড়ার সদাক্বাহ্ দেবার মতো কোন জিনিস না পেলে ‘যুহার (চাশত) দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করে নেয়া তোমার জন্য যথেষ্ট। (৯)

এ নামাজের মধ্যে যেমন ইচ্ছা আপনি দোয়া করতে পারেন। তবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন চাশতের নামায পড়তেন তখন নিম্নোক্ত দোয়া করতেন,

«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ»

“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তওবা কবুল করো। নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী, দয়াময়”। এ দোয়া তিনি শতবার পড়তেন বলে রাবী বর্ণনা করেছেন। (১০)

চলুন না এ সুন্নাহকে পুনরায় জীবিত করি আমরা। সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে মরণব্যাধি করোনা রোগে। এমন ক্রান্তিকাল সময়ে আল্লাহর অশেষ দয়া বা রহমত প্রত্যেকের প্রয়োজন। নিজে আমল করি সুন্দর এ সুন্নাহটি ও অপরকে এ আমল করতে উৎসাহিত করি৷

তথ্যসূত্র:

১. সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১১৭৮
২. সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৫৪৮
৩. সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৫৮
৪. সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১২৮৫
৫. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৮২
৬. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৮০
৭. মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ৩৪৭
৮. মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১২০
৯. মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৩১৫
১০. মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৬২৩

- হামিদ হোসাইন মাহদী

পঠিত : ৬২৫ বার

মন্তব্য: ০