Alapon

তবে কি একেই বলে, রাষ্ট্রীয় মদদে মানুষের জীবন নিয়ে বাণিজ্য...?


কবি গর্ব করে বলেছিলেন, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবো নাকো তুমি...’! আবার সেই কবিই দেশের মানুষকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি...’।

কবির কলমে এমন বাক্য পড়ে তখন অনেকেরই হয়ত পিলে চমকে গিয়েছিল। কিন্তু আজ মানুষ বোঝে কবি সাধে আর এই কথা বলে যাননি। যথার্থ কারণ আছে বৈকি। সেই কারণগুলো বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের সামনে ‍দৃশ্যমান হয়। এই যেমন করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু কারণ আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হল, মরণঘাতি করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির কতিপয় শ্রেষ্ঠ সন্তানের মিথ্যা রিপোর্ট বানিজ্য।

নিশ্চয়ই এতোক্ষণে বুঝতে পারছেন, আমি কার কথা বলতে চাচ্ছি। আসলে যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি, সেখানে একক কোনো ব্যক্তি নিয়ে আলোচনা করলে সেটা ইনসাফপূর্ণ হবে না। তাই সামগ্রিকভাবেই আলোচনা করতে চাই।

চলতি মাসের শুরুতে পুলিশের কাছে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে, জেকেজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাস টেস্ট করানো বাবদ তার কাছে ৮০০০ টাকা দাবি করে। জেকেজি প্রতিষ্ঠান বলে, এটা টেস্টের নির্ধারিত ফি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ জেকেজির অফিসে হানা দেয়। সেখানে গিয়ে তারা পায় আরিফ চৌধুরীকে। প্রথমে আরিফ চৌধুরী সবকিছু অস্বীকার করে এবং বলে, তার প্রতিষ্ঠানের সাবেক দুজন কর্মচারী তাদের নাম ব্যবহার করে এই অনৈতিক কর্ম ঘটিয়েছে। এরপর পুলিশ জেকেজির অফিস তল্লাশি করে চমকে যাওয়ার মত তথ্য পায়।

তখনও চমকের আরও অনেক কিছু বাকি। এরপর আরিফ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর একের পর এক চমক বের হতে থাকে। প্রথমে চমক হিসেবে প্রকাশ পায় রিজেন্ট হাসপাতালের নাম। রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে ডা. সাবরিনার নাম। তারপর শাহেদের নাম। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরও কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তাও নাকি এই ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছেন বলে, সংবাদ পাড়ায় এমন একটি খবর শোনা যাচ্ছে।

র‌্যাব সেই রিজেন্ট হাসপাতালে অনুসন্ধান চালায় এবং সেখানে ভয়াবহ তথ্য পায়। নামে হাসপাতাল হলেও রিজেন্ট আদৌ কোনো মনুষ্য সেবা প্রদান করার মত অবস্থায় নেই। সেটাকে যাস্ট একটা চিকিৎসার ভাগাড় বললেও অতুক্তি হবে না। আর রিজেন্ট হাসপাতাল থেকেই করোনা ভাইরাসের মিথ্যা রিপোর্ট ইস্যু করা হয়।

তারপর অনেক জল ঘোলা করার পর গতকাল ডা. সাবরিনাকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড সাহেদ এখনো ধরা চোয়ার বাইরে। অথচ সেই সাহেদ নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কল দিয়েছিলেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি তাকে বলেছেন, ‘সাহেদ আত্মসমর্পন করেন, না হলে পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করবে।’

অথচ এই সাহেদ যে একজন প্রতারক, তার প্রতারনাসহ আরও কয়েকজনের নাম ২০১২ সালে ততকালীণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ সালে তার নামে প্রতারণার মামলা হয়। অন্যদিকে সাহেদ আবার ঋণখেলাপিও। রিজেন্ট হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে সে দুটি ব্যাংক থেকে কয়েক কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। কিন্তু সেই ঋণ পরিশোধের কোনো নাম নেই। পরে ব্যাংক তাকে ঋণ পরিশোধ করতে চাপ দিলে সে সরকারের উপর মহলের কাছে নালিশ করে। পরে ব্যাংক বাধ্য হয়ে তার জামানতকৃত ব্যাংক চেক ক্যাশ করতে জমা দেয়। কিন্তু সেই চেকও ডিসঅনার হয়। পরে ব্যাংক তার নামে জালিয়াতির মামলা করে। কিন্তু তারপরও কোনো এক অদৃশ্য ছায়ার কারণে সাহেদ ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।

আর এই অদৃশ্য ছাঁয়াটা কে?

নিশ্চয়ই সরকার দলীয় কেউ! আর সেই সরকার দলীয় ব্যক্তিটা কে, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী নন তো?

তা না হলে যেখানে এতো প্রসিডিউর মেনে চলার পরও গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে করোনা ভাইরাস টেস্ট করার অনুমতি দেওয়া হল না, সেখানে রিজেন্ট হাসপাতালের কোনো ব্যবস্থাপনা না থাকা স্বত্ত্বেও তাদের অনুমতি প্রদান করা হল। তার মানে কী দাঁড়ালো, সাহেদের উপর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মহা আর্শীবাদ রয়েছে। সেই আর্শীবাদের দরুনই হয়তো সাহেদকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। হতে পারে সাহেদ কোনো সরকার দলীয় নেতার আশ্রয়েই আছেন, যার দরুন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারছে না।

সাহেদদের মত কালপ্রিটদের লালন-পালন করছে সরকার। আবার সেই সরকারই কিনা বলছে, আমরা এদের নির্মূল করছি আবার আমাদেরই দূর্নামের ভাগিদার হতে হচ্ছে! সরকারের এমন ঔদাসিন্য মন্তব্য শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। আর কত?

অথচ সরকার চাইলেই অন্তত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আরও সতর্ক হতে পারতো। কিন্তু সরকার এখনো তার সাগরেদদের উদরপূর্তিতে সহায়তা করতেই ব্যস্ত। অথচ এক রিজেন্ট হাসপাতালের দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ হয়তো গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যেই ইতালি বাংলাদেশি প্রবাসীদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সাথে বিমান চলাচলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দেশের এবং দেশের মানুষের এতোবড় একটা ক্ষতি হয়ে গেল অথচ এই মহিলার কোনো বিকার নাই! তিনি এখনো গ্রামের কুটনি বুড়িদের মত ঝগড়ার মুডে আছেন। পাপ নাকি বাপকে ছাড়ে না! মরণ আপনাকে ছাড়বে তো?

পঠিত : ৩৫২ বার

মন্তব্য: ০