Alapon

অফিসের কাজে ফাঁকি দেওয়া মানে নিজেকেই ফাঁকি দেওয়া!


দিন কয়েক আগে কয়েকজন বন্ধুর সাথে দেখা হল। বন্ধুদের মধ্যে দুজন আবার অতি সম্প্রতি নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে। তাদেরই একজন বলল, এই চাকরিতে বিরাট সুখে আছি।

প্রশ্ন করলাম, কেমন সুখ?

সে বলল, এখানে নিজের ইচ্ছামত কাজ করা যায়। মনে করো, একটা এসাইনমেন্ট দিছে, এটা নিজের ইচ্ছেমত শেষ করতে পারব। নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বেধে দেয় না। তাই যেদিন ইচ্ছা হয় সেদিন কাজ করি, আর যেদিন ইচ্ছা করে না সেদিন কাজ করি না।

তখন প্রশ্ন করলাম, কাজ না করলে সময় কাটাও কীভাবে?
সে বলল, মিয়া! সময় কাটনোর উপদানের অভাব আছে নাকি! এই চাকরিতে জয়েন করছি মাত্র দু মাস। এই দু মাসে অফিসে বসে ২০১৯ সালে বক্স অফিসে ঝড় তোলা হলিউডের মুভিগুলো খতম দিছি! একবার মুভিতে মনোযোগ দিলে সময় কোনদিক দিয়ে বয়ে যায়, খেয়ালই থাকে না।

তখন বললাম, ও আচ্ছা! তাহলে অফিস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখো। সে মুখ হাসি হাসি করে বলল, হু! এই সুযোগে অদেখা সিনেমাগুলো দেখে নিচ্ছি!

তাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আচ্ছা, তোমাদের কী ছোটবেলার কথা মনে আছে? ছোট বেলায় আম্মা যখন পড়তে বসাতেন, তখন এ অজুহাতে সে অজুহাতে পড়াশোনায় ফাঁকি দিতাম। তখন মনে হতো, আম্মাকে ফাঁকি দিচ্ছি।

এরপর যখন প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হলাম, তখনও পড়ায় ফাঁকি দিতাম। তখন মনে হতো, স্যার বা ম্যাডামকে ফাঁকি দিচ্ছি। কিন্তু চিন্তা করে দেখতো আসলে আমরা স্যার বা ম্যাডাম অথবা আম্মাকে ফাঁকি দিয়েছি, নাকি নিজেকেই ফাঁকি দিয়েছি?

আজ যখন অফিসের কাজে ফাঁকি দিয়ে ভাবতেছো, বসকে ফাঁকি দিচ্ছো, তুমি মূলত নিজেকেই ফাঁকি দিচ্ছো। অফিসের কাজে ফাঁকি দিয়ে তুমি নিজের প্রোডাক্টিভিটি নষ্ট করতেছো। তুমি এভাবে নিজের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করতেছো। আর এগুলো অফিসের বা বসের ক্ষতি নয়, তোমারই ক্ষতি।

তুমি এভাবে ফাঁকিবাজি করতে থাকলে, নিজের পেশাদারিত্বের ব্যাপারে কখনোই আত্মবিশ্বাসী হতে পারবে না। আর আত্মবিশ্বাসী হতে না পারলে ক্যারিয়ারেও উন্নতি করতে পারবে না। আর ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে না পারলে, এর ভুক্তভোগি তোমাকেই হতে হবে। অতএব অফিসে ফাঁকিবাজি করা মানে আল্টিমেল্টলি নিজের সাথেই ফাঁকিবাজি করা।

অন্যদিকে ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে অফিসের কাজে ফাঁকি দেওয়াটা চরম গুনাহর কাজ।

আল্লাহর রাসূল বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (বুখারী ও তিরিমিজি)

আমরা যখন কোথাও চাকরিতে জয়েন করি, তখন তাদের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। এই নির্দিষ্ট সময় দানের বিপরীতে তারা আমাদের পেমেন্ট করে থাকে। কিন্তু সেই নির্দিষ্ট সময় কাজ না করে ফাঁকিবাজি করে আমি মূলত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। অর্থাৎ আমানতের খেয়ানত করেছি। আর আমরা সকলেই জানি মুনাফিকের তিনটি লক্ষণের মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হল, আমানতের খেয়ানত করে।

মুনাফিকদের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহর রাসূল বলেছেন, ‘যদিও তারা (মুনাফিক) নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেকে মুসলমান মনে করে করে।’ আনাস রা. বলেন, এমন খুব কম সময়ই হয়েছে যে, নবী সা. ভাষণ দিয়েছেন অথচ এ কথা বলেননি, ‘যার মধ্যে আমানতদারিতা নেই তার ইমান নেই। আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় নিয়মানুবর্তিতা নেই, তার ধর্ম নেই। (মুসনাদে আহমদ)

রাসূল সা. আরও বলেছেন, ‘আমরা যখন কাউকে দায়িত্ব প্রদান করি, সে যদি এক টুকরো সুতা বা তার চেয়েও কোনো ক্ষুদ্র জিনিস খেয়ানত করে, তবে সে কেয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় নিয়ে উত্থিত হবে। (বুখারী)

আর মহান আল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা তোমাদের চুক্তিগুলো পূর্ণ করো। (সূরা মায়িদা- ০১)

অফিসের কাজে ফাঁকি দেওয়াকে আপাত দৃষ্টিতে অতি সাধারণ বিষয় মনে হলেও, এটি মোটেও কোনো সাধারণ বিষয় নয়। ফাঁকিবাজি করে যেমন ক্যারিয়ারে উন্নতি করা সম্ভব হবে না, একইসাথে পরকালে আল্লাহর আজাব থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে না। তাহলে দিনশেষে দেখা যাচ্ছে, অফিসের কাজে ফাঁকি দেওয়া মানে নিজেকেই ফাঁকি দেওয়া।

পঠিত : ৯২৩ বার

মন্তব্য: ০