Alapon

'দুঃখিত আওয়ামীলীগ আপনাদের এই নাটকটি পুরোপুরি ফ্লপ '


বিশিষ্ট লেখক, কবি, দার্শনিক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার আজ সকাল থেকেই গুম হয়ে ছিলেন। আওয়ামীলীগের বিশিষ্ট নাট্যকার শেখ হাসিনার এই নাটকটি আজ পুরোপুরিভাবে ফ্লপ খেয়েছে। তো আসুন সম্পুর্ন নাটকটি এক নজরে দেখে নিই।


- ভোর ৫টা, ফরহাদ মজহারকে উনার এক পরিচিতজন মোবাইলে কল দিয়ে উনার বাসার নিচে নামতে বলেন, উনি তড়িৎগতিতে লুঙ্গী এবং গেঞ্জি পরেই নিচে নেমে আসেন বন্ধুর ডাকে।


- সকাল ১০ টা, উনার স্ত্রীরর মোবাইলে কল আসে উনার নাম্বার থেকে " আমাকে ওরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে, আমাকে মেরে ফেলবে " বলেই লাইনটি কেটে দেন ফরহাদ মজহার।


- সকাল ১০ টা বেজে অল্প কিছুক্ষন, আবারো কল আসে স্ত্রীর নাম্বারে, এবার অপহরনের কথা বলে ৩৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপন চেয়েই আবারো লাইন কেটে দেওয়া হয়।


- সকাল ১১ টা নাগাদ পরিবারে ফিরে না আসার কারনে উনার পরিবার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অপহরনের বিষয়টি জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কম কিসে,ঢাল তলোয়ার নিয়ে নেমে পরেন অভিযানে।


- দুপুর দুইটা, উনার মোবাইল ট্র‍্যাক করে খুলনায় ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় উনার অবস্থান জানা যায়।


- সারাদিন আর কোন খোজ নেই, শুরু হয় মিডিয়ার একচ্ছত্র সংবাদ প্রচার " খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা ফরহাদ মজহারকে "।


- রাত ৮টা, খুলনায় অবস্থিত গ্রিল হাউস রেস্টুরেন্টে ক্লান্ত অবস্থায় একাই ডাল,ভাত ও সবজী দিয়ে ডিনার সাড়েন এই লেখক বললেন রেস্টুরেন্ট মালিক ।


- রাত ১১ টা, ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি গাড়ি থেকে যশোরের নোয়াপাড়ায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি থামিয়ে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করেন র‍্যাব সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফল এক অভিযান।


" হাউ কিউট জাতি উই আর " 
আমাদেরকে গিলাইলেন আর আমরা গোগ্রাসে গিলে নিলাম, উফ কতইনা কিউট হামারা র‍্যাব ও মিডিয়া।


উনি একা রেস্টুরেন্টে গেলেন রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে, রেস্টুরেন্টে খাইলেন পেট ভরে, অথচ আমরা কত্ত কিউট জাতি একজনের চোখেও পরলোনা সারা বাংলাদেশে উনার গুমের নিউজ ছড়িয়ে পরার পরও।


রেস্টুরেন্টে খেয়ে দেয়ে আবার একাকিই তিনি হানিফের কাউন্টারে গিয়ে টিকেট কেটে ঢাকার গাড়িতে চড়ে যশোরের নোয়াপাড়া পর্যন্ত চলে এলেন। অথচ আমরা এতটাই গুলুগুলু জাতি যে রাস্তায় হাজারো মানুষ, বাসের ড্রাইভার ও হেলপার সহ বাসের এত এত যাত্রী থাকার পরও কারো নজরেই সেটা পরলো না। উফ আমরা কত্ত গুলুগুলু।


অবশেষে সারাদিন সারারাত অনেক অভিযান, খোঁজাখুঁজি, ট্র‍্যাকিংয়ের পর উনি যখন নিজেই বাসার দিকে রওয়ানা দিলেন ঠিক তখন সুপারম্যানের মতো উড়ে এসে যশোরের নোয়াপাড়ায় বাস থেকে আমাদের র‍্যাবের কিউট গুলুগুলু ভাইয়েরা উনাকে উদ্ধার করলো। 
এই ছিলো আজকের সারাদিনে নাটকের প্রথম অংশ।


ধন্যবাদ জানাই, এই কিউট গুলুগুলু র‍্যাব ভাইয়াদের, পাশে থাকলে উনাদের সাথে সেলফি তুলেই ছাড়তাম। গুলুগুলু কিউট র‍্যাব ভাইয়াদের প্রতি অনুরোধ ইলিয়াস আলি সহ গুম হওয়া বাকি নেতা কর্মীদেরকেও উদ্ধার করে দেখিয়ে দিন আপনাদের বুকের লোম কতটা বড় ও প্রসারিত।


কত সুন্দর স্ক্রিপ্ট এই নাটকটির, সত্যি বলতে বাংলা ছবির টপক্লাসেস পরিচালকদেরও হার মানায়। অন্তত এই স্ক্রিপ্টির জন্যে শ্রেষ্ঠ নাটক ক্যাটাগরিতে প্রধানমন্ত্রী একটা নোবেল আশা করতেই পারেন, এটা উনি ডিজার্ব করেন।


নাটকের দ্বিতীয় পর্ব দিয়েই এবারের নাটকটি শেষ করছেন নাট্যকার, আর নতুন আরেকটি স্ক্রিপ্ট নিয়ে নাটকের শেষ পর্বটি হল- 
" উনি গত রাতে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে আজকে সকালে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে খুলনা চলে এসেছিলেন "। উদ্ধারের পর পরই এই অংশটি সংযোজন করেন নাট্যকার।


সবচেয়ে মজার বিষয় হল, সারাদিনের নাটকে নিখোঁজ হওয়ার হেডলাইন দিয়ে থাকলেও নাটকের শেষ অংশের সংযোজন অনুযায়ী নাট্যকারের সহযাত্রী মিডিয়াগুলি আগামীকাল তাদের পত্রিকার হেডলাইন দিবে - 
" স্ত্রীর সাথে অভিমান করে ঘর ছাড়া বিশিষ্ট কবি ও লেখক ফরহাদ মজহার"।


অথচ একবার ছবিটির দিকে তাকিয়ে দেখুন, মনে হয় যেন সাক্ষাত মৃত্যুর হাত থেকে নতুন জীবন নিয়ে ফিরছেন ৭০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ লেখক। উনাকে নিয়ে এতটা মিথ্যাচার ও নাটক আল্লাহও সহ্য করবে না।


বাস্তবে বলতে গেলে আওয়ামীলীগের এই নাটকটি পুরোপুরিভাবে ফ্লপ মেরেছে। ফরহাদ মজহারকে গুম করে শেষ করে দিতে না পারায় এই নাটকটি ফ্লপ মেরেছে। অনলাইন এক্টিভিষ্টদের অতি প্রচারে বাধ্য হয়েই এই নাটকের পরিচালক নাট্যকার আপা ফরহাদ মজহারকে ফেরত দিয়ে নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটাতে বাধ্য হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই অনলাইন এক্টিভিষ্টদের এই সাহসী ভূমিকার জন্যে। আবারো প্রমানিত হল, দশের লাঠি একের বোঝা। আমরা অনলাইনে লাঠি ধরেছি আর সেটা নাট্যকার আপুর জন্যে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।


"দুঃখিত আওয়ামীলীগ, আপনাদের এবারের নাটকটি ফ্লপ মেরেছে, আমরা 'হাউ কিউট জাতিরা ধরে ফেলেছি এটা চুরি করা স্ক্রিপ্ট "।



 


 

পঠিত : ২৯৫২২ বার

মন্তব্য: ০