Alapon

লেবাননের ঘুষ, দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বিস্ফোরণের জন্যে দায়ী?



ধূলিসাৎ হয়ে গেছে বৈরুতের অর্ধেক। লেবাননে প্রায় ৯০ পার্সেন্ট মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে, প্রচন্ড ঋণের বোঝা মাথায়, তার উপরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হলো এই বিস্ফোরণে।

এই জুনের শেষ ভাগ থেকে ইরানের প্রায় দশটি মিসাইল, বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়াম কেন্দ্রে রহস্যজনক বিস্ফোরন ও অগ্নিকান্ড ঘটেছে। কে,কারা কিভাবে করলো কেউ জানে না। ইসরাইল বলেছে, আমরা করিনি। গতকালের বৈরুত বিস্ফোরণের পরপরই ইসরাইল আবার বলেছে, তারা কোনভাবেই জড়িত নয় এই ঘটনায়।

কিন্তু প্রায় সব এসপায়নেজ এবং ধ্বংসাত্বক ঘটনাতে সবাই ইসরাইলকেই সন্দেহ করে। কিন্তু আল জাজিরার অনুসন্ধিৎসু রিপোর্টে লেবাননে ঘুষ, দুর্নীতি আর আমলাতান্ত্রিক আলসেমী জনিত কারণগুলিকে এই বিস্ফোরনের জন্যে দায়ী বলে রিপোর্ট করা হয়েছে।

রিপোর্টে জানা গেছে, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজ মলডোভার পতাকা বহন করে জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিক যাচ্ছিল। ২৭৫০ টন এমোনিয়াম নাইট্রেট দিয়ে ভর্তি ছিলো জাহাজটির পেট। ফ্লিটমোন ওয়েবসাইট থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তারা আরো জানিয়েছে, যাত্রাপথে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্যে জাহাজটি বৈরুত বন্দরে নোঙ্গর করতে বাধ্য হয়।

মেরামত হয়ে গেলে লেবানিজ কর্মকর্তারা সেটিকে ফের যাত্রা শুরু করতে বাধা দেয় এবং লেবানিজ আমলাদের অতিরিক্ত ঘুষ দাবী করার কারণে জাহাজটি মালিক ও ক্রু উভয়ের কাছেই পরিত্যক্ত হয়। তখন জাহাজটির বিপজ্জনক কেমিক্যাল বৈরুত বন্দরের ১২ নম্বর হ্যাঙ্গারের একটি ভবনে নামিয়ে রাখা হয়। ২০১৪ সালের ২৭ জুন 'দ্রুত বিচারক’ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এই কার্গো সমস্যার সমাধান চেয়ে চিঠি পাঠান তৎকালীন লেবানিজ কাস্টমসের পরিচালক শফিক মেরহি।

পরের তিন বছরে আরও পাঁচবার চিঠি পাঠিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা; ২০১৪ সালের ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের ৬ মে, ২০১৬ সালের ২০ মে, ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর এবং ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর।

২০১৬ সালের একটি চিঠিতে বলা হয়, বিচারকরা এ পর্যন্ত কোনও সাড়া দেননি। চিঠিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তিনটি সাজেশন দিয়েছিলো।

১) বাজেয়াপ্ত এমোনিয়াম নাইট্রেট রপ্তানি করা।
২) লেবানিজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা।
৩) লেবাননের বেসরকারি কোনো কোম্পানীর কাছে বিক্রি করা।
কোনও জবাব আসেনি।

এই ঘটনাগুলির একবছর পর ২০১৭ সনে নতুন লেবানিজ কাস্টমস পরিচালক বাদ্রি দাহির ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে আবারও একটি চিঠিতে গুদাম ও কর্মীদের বিপদের কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু এরপরেও প্রায় তিন বছর বিপজ্জনক এমোনিয়াম নাইট্রেট বৈরুত বন্দরের ওই হ্যাঙ্গারেই রাখা ছিল।

এখন গত ছয় বছরে সেখানে কোনো বিস্ফোরণ ঘটেনি গতকাল কেন ঘটলো? হিজবুল্লার ইসরাইলের অভ্যন্তরে আক্রমনের পরে ইসরাইলের কোন জঙ্গী দল বা গেরিলারা প্রতিশোধমূলক লেবাননের স্যাবটাজ বা ইরানের ধ্বংসাত্বক অপারেশনগুলি করলো কিনা তা জানার উপায় নেই।

আপাততঃ নিজেদের গাফিলতি যা লেবানন সরকার খুঁজে বের করেছে তা নিম্নরূপ; এবং পৃথিবীর তাবৎ প্রধানমন্ত্রীদের মতো লেবাননের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, দোষী কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।

কি দোষ ?

কয়েক দশক ধরেই বৈরুত বন্দরে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ চুরির অভিযোগ রয়েছে। সেখানে অনিয়ম এতটাই বেশি যে স্থানীয়রা বন্দরে যাবো বুঝাতে "মন্তেকা আলীবাবা" যাচ্ছি বলে। মধ্যপ্রাচ্যে ভদ্র চেহারার চোরদের "আলিবাবা" বলা হয় স্ল্যাং ভাষায় আর মন্তেকা মানে এলাকা।

এই আলিবাবা বন্দরে আমদানি মূল্যে দুর্নীতির কারণে শত শত কোটি ডলার রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যায় না। অভিযোগ আছে, ঘুষ দিয়ে শুল্ক কর এড়ানো যায় এবং দুর্নীতি এখানে একরকম নিয়মতান্ত্রিক হয়ে গেছে।

বিগত দশক ধরে যারা লেবাননের শাসকগোষ্ঠী তাদের দুর্নীতি আর অপরাধের ফল এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ। পৃথিবীর সব দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে যা হয়, লেবাননেও এখন তাই হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যেই একটি ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে, আগামী পাঁচদিনের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন।

লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেছেন, এটি জাতীয় বিপর্যয় এবং প্রতিজ্ঞা করেছেন, দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই মূল্য চুকাতে হবে। প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এমোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবস্থাপনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে দোষীদের কঠোর শাস্তির ওয়াদা করেছেন।

ঠিক এই রকম একটি দেশ কোথায় যেন দেখেছি!

- Ariful

পঠিত : ৪০৮ বার

মন্তব্য: ০