Alapon

ইসলামের বিজয়ে অন্তরায় সমূহ...


ভারতে আসার আগে ইংল্যান্ড:

সপ্তদশ শতকের শুরুতে ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক হালত কেমন ছিল, তা সম্পর্কে বৃটিশ ঐতিহাসিক James Mill বলেছেন:
‘ইংরেজদের দেশ সরকারের ব্যর্থতা আর গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল। এতটাই যে, বাণিজ্য প্রসার ও সুরক্ষা জন্য পুঁজিই ছিল না তাদের। ওলন্দাজদের সাথে চলতো এক অসম প্রতিযোগিতা’। [1]

ইংরেজ আসার আগে ভারত:

সম্রাট আওরঙ্গজেব (রহ.) এর সময়ে ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে চীনকে পিছনে ফেলে ভারতবর্ষ পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতিতে (World’s Largest Economy) পরিণত হয়, যার মূল্যমান ছিল প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার। এর জিডিপি ছিল সে সময়ের সমগ্র বিশ্বের ৪ ভাগের ১ ভাগ। [2]

ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের কারণ:

William Digby নামের এক ব্রিটিশ ঐতিহাসিক-কাম-রাজনীতিবিদ লিখেছেন:
‘পলাশির যুদ্ধের পর বাঙলার সম্পদ স্রোতের মত এসে জমা হতে থাকে লন্ডনে। ১৭৬০ সালের আগে যেখানে শিল্পকারখানার নাম-গন্ধও ছিল না, সেখানে হাজার হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে (শিল্পবিপ্লব)।’ [3]

লর্ড মেকলে লিখেছেন:
‘ইংল্যান্ডে সম্পদ আসত সমুদ্রপথে। ওয়াট ও অন্যান্যদের আবিষ্কৃত যন্ত্রগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ইংল্যান্ডের যেটুকু কমতি ছিল, ইন্ডিয়া সেটুকু সরবরাহ করেছে। ইংল্যান্ডের পুঁজি বহুগুণে বাড়িয়েছে ভারতীয় সম্পদের প্রবেশ।...শিল্পবিপ্লব, যার উপর ভিত্তি করে ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র ইন্ডিয়ার সম্পদের কারণে। যা লোন ছিল না, এমনিতেই নিয়ে নেয়া হয়েছিল। তা নাহলে স্টীম ইনজিন ও যন্ত্রশিল্প পড়েই থাকত ইংল্যান্ডের। ইংল্যান্ডের উন্নতি মানে ভারতের লোকসান— এমনই লোকসান, যা ভারতে শিল্পকে ফাঁকা করে দিয়েছিল, কৃষিকে স্থবির করে দিয়েছিল। যেকোনো দেশ যদি এইভাবে পাচার করা হয়, সে ধনী-সম্পদশালী হলেও নিঃস্ব হয়ে যাবে।’ [4]

কথিত সভ্যতার ঝাণ্ডাবাহী ইংল্যাণ্ডের অসভ্যতা:

Sir William Digby লিখেছেন:
১৯০০ পর্যন্ত ভারত থেকে আইনগতভাবেই (আইন বানিয়ে) আমরা নিয়েছি ৬,০৮০ মিলিয়ন পাউন্ড (৬০৮০,০০০,০০০ পাউন্ড)। [5]

বৃটিশদের সব যুদ্ধের খরচের দায়ও চাপতো ইন্ডিয়ার উপর। ১৭৯২ সালে ৭ মিলিয়ন পাউণ্ড। ১৮৩৫ সালে ৪৪ মিলিয়ন, ১৮৫০ সালে ৫৫ মিলিয়ন। ১৮৬০ সালে ১০০ মিলিয়ন। ১৯১৩ সালে ৩০০ মিলিয়ন পাউণ্ড মিটিয়েছে বছরে ৫ পাউণ্ড উপার্জন করা মানুষগুলো। [6]

Mr. A. J. Wilson মার্চ ১৮৮৪ এর Fortnightly Review ম্যাগাজিনে লিখেন:
ভারতীয়দের বছরে মাথাপিছু আয়ই সর্বোচ্চ ৫ পাউন্ড। সেখানে প্রতিবছর আমরা কোনো না কোনো ভাবে ৩ কোটি পাউন্ড নিয়ে যাচ্ছি। মানে ৬০ লাখ গৃহকর্তার আয়। অর্থাৎ (প্রতি পরিবারে পোষ্য ৫ জন করে ধরলে) ৩ কোটি লোকের ‘টিকে থাকার খরচ’ (sustenance) নিয়ে যাচ্ছি। মোটের উপর ইন্ডিয়ার টোটাল সম্পদের ১০ ভাগের ১ ভাগ করে আমরা প্রতি বছরে নিচ্ছি।

কী হয়েছিল ভারতে:

১৮৬০-১৯১০ পর্যন্ত ৫০ বছরে ৩ কোটি ভারতীয় মরেছে জাস্ট ‘না খেয়ে’, বলেছেন লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা জেমস কেয়ার হার্ডি।
না খেয়ে মরা মানে তো আবার আপনারা বোঝেন না। তারা তো আবার আপনাদের মধ্য আয়ের দেশ বলে দিয়েছে।
১৮০১ থেকে ১৯০০ পর্যন্ত ১০০ বছরে ৩১ টা মন্বন্তরে মরেছে ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ — ‘না খেয়ে’। [7] অর্থনীতিতে ১ম দেশটির।

কোনো জ্ঞান-বিজ্ঞান, সমতা-স্বাধীনতা, নারীমুক্তি করে পাশ্চাত্য আজকের অবস্থানে আসেনি। উপনিবেশ আমল-ই তাদের বস্তুগত উন্নতির একমাত্র রহস্য। সামরিক অভিযান ও স্বশাসন ছাড়া কেবল জ্ঞান-বিজ্ঞান করে কোনো জাতি উন্নত হয়নি। এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের ফ্যান্টাসি থেকে উত্তরণ না হলে ইসলামের বিজয় অসম্ভব।

- ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০
পরিশিষ্ট ১

ℹ "I hate Indians. They are a beastly people with a beastly religion. The famine was their own fault for breeding like rabbits."
- Winston Churchill

✔ রেফারেন্স:
[1] James Mill এর বরাতে Unhappy India, Lala Lajpat Rai, 1928 : p. 322
[2] The World Economy, Angus Maddison, OECD Publishing (2003), p. 261
[3] Prosperous’ British India, Sir William Digby, 1901
[4] Unhappy India, Lala Lajpat Rai, 1928
[5] ‘Prosperous’ British India, Sir William Digby, 1901
[6] India in the Victorian Age, Mr. R. C. Dutta
[7] ‘Prosperous’ British India, Sir William Digby, 1901

পঠিত : ৪৩৭ বার

মন্তব্য: ০