Alapon

মেজর রাশেদ সিনহার হত্যা এবং কয়েকটি প্রশ্ন...


করোনা ইস্যু, সাহেদ ইস্যু ছাপিয়ে এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর রাশেদ সিনহা ইস্যু। জানি কিছুদিন পর এই ইস্যু পুরনো হয়ে যাবে, আর অন্যান সব ইস্যুর মত এই ইস্যুটাও আমরা ভুলে যাবো। মনে রাখবে শুধু ভুক্তভোগির পরিবার। তাই ইস্যুটা পুরনো হয়ে ভুলে যাওয়ার আগেই কিছু কথা বলে রাখা প্রয়োজন মনে করছি।

ডিজিএফআই এর রিপোর্টনুসারে, মেজর সিনহা গাড়িতে বের হওয়ার সাথে সাথেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এমনকি তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও দুই রাউন্ড গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

হত্যাকান্ডের পরপরই বরাবরের মত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকালকের আইজিপি ও সেনাপ্রধানের বক্তব্যে এই ঘটনাকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাদের এই বক্তব্য বলে দেয়, মেজর সিনহা হত্যার তদন্ত রিপোর্ট কখনোই জমা হবে না। আর হলেও প্রকৃত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ পাবে না। ঠিক যেমন প্রখ্যাত সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যার পর সেই হত্যার রিপোর্ট আজ অবধি প্রকাশিত হয়নি।

আমার কেন যেন মনে হয়, মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের সাথে সাগর-রুনি হত্যার কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে। আর যোগসূত্র না থাকলেও, সাগর-রুনিকে যারা হত্যা করেছে ওই একই দল হয়তো মেজর সিনহাকে হত্যা করিয়েছে।

আপনাদের মনে থাকার কথা, সাগর-রুনিকে হত্যা করার পর কিন্তু তাদের দুটি মোবাইল আর দুটি ল্যাপটপই খোয়া গেছে। সেই ল্যাপটপ দুটি আজ অবধি র‌্যাব বা পুলিশ কেউই উদ্ধার করতে পারেনি। সাগর সরোয়ারের ল্যাপটপে কী ছিল?
যতোটুকু জানা যায়, তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন। বইটির নাম ছিল ‘কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি।’ সেই ল্যাপটপে এই বইয়ের পরবর্তি সংস্করণের পান্ডুলিপি ছিল বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের মারফত জানা যায়। খুব সম্ভবত সাগর সরোয়ারের সেই বইয়ে পার্ব‍ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে এমন কিছু বিষয় প্রকাশ পাচ্ছিল যা স্বার্থান্বেষী মহল প্রকাশ করতে চায়নি। তাই সাগর-রুনিকে হত্যা করে ল্যাপটপ দুৃটি গায়েব করে দিয়েছে।

অন্যদিকে মেজর সিনহা স্ট্যাম্পফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও মিডিয়া বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি বিশেষ ডকুমেন্টরী ফিল্ম বানাচ্ছিলেন। ঘটনার সময় মেজর সিনহার সাথে সেই তিনজনের একজন ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের টিমের অপর দুজনকে কটেজ থেকে গ্রেফতার করে। এবং তাদের সাথে থাকা ক্যামেরা এবং ভিডিও ক্যাসেট পুলিশ জব্দ করে। তারপর পুলিশকে খুনের চেষ্টা মামলায় সেই তিনজন শিক্ষার্থীকে আসামী করে। কিন্তু তিনজনের মধ্যে একজনের হটলিংক থাকার কারণে সে ছাড়া পেলেও বাকি দুজনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আর ভিডিও ক্যামেরাসহ সব ডকুমেন্ট গায়েব করে ফেলা হয়েছে।

এখানে কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। সেই ভিডিও ডকুমেন্টরী আসলে কী নিয়ে বানানো হচ্ছিল? মেজর সিনহা গোপনীয়তার সাথে এই ডকুমেন্টরী বানানোর কাজ করছিলেন কেন? আর তাকে হত্যার পরপরই ভিডিও ডুকেমন্টগুলো গায়েব করা হলো কেন?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা গেলে হয়তো সাগর-রুনির হত্যার পিছনে কোন মহল কাজ করছে, সেই উত্তরটাও জানা যেত! কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর আদৌও মিলবে বলে মনে হয় না।

পঠিত : ৪৫৫ বার

মন্তব্য: ০