Alapon

সেই ব্যক্তি বড় চোর, যে নামাজ চুরি করে...


অনেক দিন আগের কথা। আমার পরিচিত একজনের মেয়ের বিয়ের কথা হচ্ছিল। মেয়ের বাবার মুখে সব শুনে মনে হল, এই বিয়েটা হবে না!

প্রথম কারণ, পাত্র তখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত না। আর এটা নিয়ে মেয়ের বাবার প্রথম আপত্তি।

দ্বিতীয় কারণ, পাত্রের বাবা বেঁচে নেই। অনেক আগেই মারা গেছে। যার কারণে ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা পাত্রকেই করতে হয়। ফলে, অনেক দ্বায়-দায়িত্ব। সেখানে বিয়ে দিলে তার মেয়েকেও এসব দায়িত্ব পালন করতে হবে। দ্বায়-দায়িত্ব মানেই ঝামেলা! যার কারণে তিনি ঝামেলার মাঝে মেয়েকে ফেলতে চান না।

তৃতীয় কারণ, পাত্রের মাথায় টাক এবং উচ্চতায় খানিকটা খর্ব। পাত্রের উচ্চতা ছিল সম্ভবত ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। আর তার মেয়ের উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। মেয়ের বাবা বলছিল, দুজন একসাথে বের হলে মেয়েকেই লম্বা দেখা যাবে। মানুষ হাসাহাসি করবে। আমাকে নিয়েও হাসবে। আমি হাসির পাত্র হতে পারব না। অতএব এই প্রস্তাব বাতিল!

এরপর বহুদিন সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিছুদিন আগে তার সাথে দেখা হল। কথায় কথায় বললেন, আমার মেয়ের বিয়ের খবর পাইছো?
মাথা নাড়িয়ে বললাম, না!

তখন তিনি মৃদু হেসে বললেন, ওই চাকরি নাই টাকওয়ালা ছেলের সাথেই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি! ভদ্রলোকের কথা শুনে আমি ভীষণ অবাক হলাম এবং পুরো ঘটনা শুনতে চাইলাম।
তিনি বললেন, ‘ছেলের বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসার পর সব শুনে আমার তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু মেয়ের মা আর আমার ভাইদের চাপাচাপিতে ছেলের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেই এবং একদিন তাদের বাড়িতে যাই। তাদের বাড়িতে যেদিন গেলাম, সেদিন যোহর ওয়াক্তে ছেলের বাড়ির পাশের মসজিদে নামাজ পড়লাম। সুন্নাত নামাজ শেষে আমার ছেলে একটা গাটুম-গুটুম ছেলেকে দেখিয়ে বলল, ওই যে নামাজ পড়ছে, ওই ছেলেটাই পাত্র! তখন সে সুন্নত নামাজ পড়ছিল। আমি ওর নামাজ পড়া দেখছিলাম। তারপর ফরজ নামাজ শেষে সুন্নাত না পড়ে আমি ওর নামাজ পড়া দেখছিলাম। বিশ্বাস করো, আমি এমন প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে নামাজ পড়তে খুব কম মানুষকেই দেখেছি। সে ধীরে সুস্থে এতো মনোযোগের সাথে নামাজ পড়ছিল যে, দেখলেই শান্তি লাগে!

ওর নামাজ পড়ার দৃশ্য দেখার পর থেকেই আমার মন নরম হতে শুরু করে। তারপর ছেলে এবং ছেলের পরিবারের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেই, মেয়ের যদি বিয়ে দেই তবে এই ছেলের সাথেই বিয়ে দিবো। কারণ, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় চোর যে নামাজ চুরি করে। আর যে নামাজের হক ঠিকঠাক আদায় করে, সে মানুষের হকও উত্তমভাবে আদায় করতে পারবে। তারপর এই ছেলের হাতেই আমার মেয়েকে তুলে দেই। আলহামদুলিল্লাহ।

আমিরুল মুমিনিন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেছিলেন, ‘নামাজ যেকোনো মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল। যে ব্যক্তি নিয়মিত নামাজ কায়েম করলো, সে যেন তার ধর্মকে হেফাজত করলো। আর যে নামাজ কায়েমের ব্যাপারে গাফেলতি করল, সে স্বভাবতই কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতেও গাফেলতি করবে।’
আল্লাহপাক আমাদের উত্তম বুঝ দান করুন। আমিন।

পঠিত : ৫২৭ বার

মন্তব্য: ০