Alapon

দুঃখ-কষ্ট ছাড়া কখনোই সুখের অনুভূতি অনুভব করতে পারবেন না...


একবার এক প্রফেসর গবেষণার জন্য অ্যামাজন জঙ্গল থেকে একটি টিকটিকি নিয়ে আসেন। টিকটিকিটাকে জীবন্ত অবস্থায় ল্যাবে রাখা হয়। প্রথম দুদিন খাবার দিলে সেটা স্বাভাবিকভাবে খাবার খেল। কিন্তু তৃতীয়দিন থেকে সেটা আবার খাচ্ছিল না।

প্রফেসর সাহেব বিরাট চিন্তায় পড়ে গেলেন! তিনি টিকটিকিটাকে বিভিন্ন ধরণের খাবার দিলেন কিন্তু সেটি কিছুই খেল না। অবস্থা এমন হল যেন, টিকটিকিটা না খেয়েই মারা যাবে।

একদিন ল্যাবে কাজ করার সময় প্রফেসর সাহেব তার আধা খাওয়া স্যান্ডউইচটা টেবিলের উপর রেখে দৈনিক পত্রিকা নিয়ে বসলেন। পত্রিকা পড়া শেষ হলে তিনি পত্রিকাটি টেবিলের দিকে ছুড়ে মারলেন। আর পত্রিকাটি গিয়ে পড়ল আধা খাওয়া স্যান্ডুউইচটার উপর। আর ওমনি সেই আধামরা টিকটিকিটা ঝাপিয়ে পড়ে পত্রিকাটি কেটে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলল, তারপর স্যান্ডুইচটা খেয়ে ফেলল।

এর দ্বারা বোঝা গেল, টিকটিকিটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে খবর সংগ্রহ করতে আগ্রহি। আর চ্যালেঞ্জবিহিণ খাবার খেতে সে মোটেও আগ্রহি নয়। এতে যদি তার মৃত্যুও হয়, তারপরও সে মুখে তুলে দেওয়া খাবার খাবে না। এতো আরামের জীবন তার পছন্দ না।

আর একটি ঘটনা বলি। ঘটনাটি সম্ভবত ইউরোপের কোনো একটি দেশে ঘটে। ঘটনাটি অ্যালেক্স নামক এক ছেলের।

সেই দিন ছিল অ্যালেক্সের ১৮ তম জন্মদিন। অ্যালেক্সের ১৮ তম জন্মদিনে তার বাবা তাকে একটি উড়োজাহাজ উপহার দেয়। আর উড়োজাহাজ উপহার পেয়ে সে ভীষণ আনন্দিত হয়।

এর পরের দিন অ্যালেক্সের ঘরে গিয়ে দেখা গেল, সে আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা করার আগে সে একটি চিঠি লিখে যায়। সেই চিঠিতে অ্যালেক্স লিখেছিল- আমার জীবনের প্রায় স্বপ্নই পূরণ হয়েছে, তবে একটি ছাড়া। আমি চেয়েছিলাম, আমার একটি উড়োজাহাজ থাকবে। আর সেই স্বপ্নটাও গতকাল বাবা পূরণ করেছে। আমরা সব স্বপ্নই যখন পূরণ হয়ে গেল, তাই আমি আর বেঁচে থাকার কোনো উপলক্ষ্য বা অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। আর এ কারণেই আমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিলাম।

এই ঘটনার মর্মার্থ দাড়াল, চ্যালেঞ্জবিহিণ জীবনে কোনো আনন্দ নেই। চ্যালেঞ্জবিহিন জীবনে বেঁচে থাকারও কোনো আনন্দ নেই।

অনেকেই মনে করে, স্ট্রাগলময় জীবন একটি অভিশপ্ত জীবন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, যেদিন থেকে আপনার জীবন থেকে স্ট্রাগল হারিয়ে যাবে, অতৃপ্তির কষ্ট বিলিন হয়ে যাবে, না পাওয়ার হাহাকার উধাও হয়ে যাবে, সেদিন থেকে আপনি বেঁচে থাকার সমস্ত আশা ও আকাঙ্খা হারিয়ে ফেলবেন। তাই বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন কিছু অতৃপ্তি এবং না পাওয়ার বেদনা। মানুষ কেবল সুখের জন্যই বেঁচে থাকে না, কখনো কখনো দুঃখের জন্যও বেঁচে থাকে। কারণ, দুঃখ-কষ্ট ছাড়া আপনি কখনোই সুখের অনুভূতি অনুভব করতে পারবেন না।

পঠিত : ৪৫৪ বার

মন্তব্য: ০