Alapon

আমাদের গল্পটা!

মাসজিদে ছেলে দু’টির সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয়। তাদের দেখে আমি মুচকি হাসি দেই আর তার প্রতিউত্তরে লজ্জামাখা হাসি দেয়। এই হাসি বিনিময় পর্ব প্রায় দু’মাস ধরে চলল। একবার ইচ্ছে হল, ওদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলি পরিচিত হই। কিন্তু সব ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিতে নেই।


মাসজিদের ভিতরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তাদের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তারা দু’জন সহদর ভাই। একজন ক্লাস থ্রীতে পড়ে আর অপরজন ক্লাস সিক্সে পড়ে। বড়টাকে দেখলে নিজের চেহারার সাথে মিল খুঁজে পাই। বড়জন, অতিশয় বোকা মার্কা এবং শান্ত চেহারার অধিকারী। আর ছোটজনের চোখ মুখ দেখলে মনে হয় বুদ্ধি উছলিয়ে পড়ছে।



শুক্রবার মাসজিদে একটু বেশিই ভীড় থাকে। আর এসি আবৃত স্থানে বসতে তো মোটামুটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। তো, সেই দুইসহদর আর আমি পাশাপাশি বসে আছি। নামায শুরুর পূর্বে মাঝারি বয়সের এক লোক এসে বড়ভাইটার হাত টেনে ধরল। বলল, ‘ছোট মানুষ বাহিরে নামায পড়। ভিতরে নামায পড়ার দরকার নাই।’ 
নিজে প্রতিবাদ করবার প্রস্তূতি নিচ্ছি এমন সময় ছোটজন বলল, ‘ও আমার বড় ভাই। ওর হাত ছাইড়্যা দেন। ভিতরে বসবার শখ তো আযানের সাথে সাথে মাসজিদে আইসেন নাই ক্যা? পরে আসছেন বাহিরে নামায পড়েন। আমার ভাই এইখানেই নামায পড়বে’।


আমি মুগ্ধ হয়ে ছোটটার দিকে তাকিয়ে আছি। আর বড়জন বোকা ভ্যাবলার ন্যায় হা করে তাকিয়ে আছে। এরপর আমরা একসঙ্গেই নামায পড়ি। মাসজিদে বসেই তাদের সাথে পরিচয় পর্ব মোটামুটি সমাপ্ত করলাম।


নামায শেষে দুইভাইকে আইসক্রিমের কোন খাওয়াতে নিয়ে গেলাম। সেখানেও বড়জন নীরব এবং নির্বিকার আর ছোটজন অবিরত আমার সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছে। আইসক্রিম নেবার পর ছোটজন বলল, ‘আংকেল, আপনিও একটা নিন। সবাই একসঙ্গে খাই।’
আমারও ইচ্ছে করতেছিল একসঙ্গে খাই। কিন্তু ঐ যে বললাম, ‘সব ইচ্ছেকে সবসময় গুরুত্ব দিতে নেই।’
কারণ এই সময়টা একান্তই তাদের। আমার জীবনেও এই সময়গুলো প্রায়ই আসে। তাই হয়তো খুব ভালোই বুঝতে পারি।


প্রায়ই এশার নামায শেষে আমি আর বড় ভাইয়া আইসক্রিম নিয়ে বসে পড়ি। হরলিক্স ফ্লেবারের আইসক্রিম নিয়ে আমরা জীবনের ফ্লাশ ব্যাকে পৌঁছে যাই। শৈশবে পৌঁছে যাই। আর এইসময় আমাদের ছোটটা জামিম থাকলে কি করত সেসব কল্পনা করে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ি! এই সময়টা একান্তই আমাদের। এখানে আর কারো প্রবেশাধিকার নেই।


আমাদের তিনভাই এর অত্যাচারের মাত্রাটা মাঝে মাঝে সীমা অতিক্রম করে যায়। তখন, আম্মা মোটামুটি আয়োজন করে আমাদের বিচার করেন। তারপর বড়ভাইয়াকে কতক কথা শুনিয়ে বলেন, ‘এই তুই না ওদের বড় ভাই। এইটা বড় ভাই এর নমুনা’! আমরা তিনজনই হেসে উঠি। তারপর বলি আমরা শুধু ভাই না তো সাথে বন্ধুও!


আমরা তিন ভাই-বন্ধু বহুদিন পর আবারো একত্রিত হতে যাচ্ছি। জমা পড়ে আছে কত পাগলামো। সেই পাগলামোগুলো আমরা কোথা থেকে শুরু করব জানি না! শুধু এইটা জানি আমরা কেউই শান্ত থাকার মানুষ নাহ! আমরা পাগলামো করে বেড়ানোর মানুষ...


আমি জানি সব সহদর ভাই-ই এমন কমন নয়। কিন্তু তাদের সকলের মাঝে ভালোবাসাটা কমন। তাদের সকলের মাঝে রয়েছে এক অকৃত্রিম ভালোবাস। বেঁচে থাকুক অকৃত্রিম ভালোবাসা। বেঁচে থাকুক পাগল সহদর ভাইদের ভালোবাসা...


পঠিত : ৭৩৬ বার

মন্তব্য: ০