Alapon

নিজের সম্পর্কে শেখ মুজিবের মূল্যায়ন



মনে করুন শেখ মুজিব জীবিত আছেন। একজন সাংবাদিক হিসেবে তার কাছে যদি প্রশ্ন করা হয়, শেখ সাহেব আপনি নাকি ছাত্রজীবনে গুণ্ডা ছিলেন? এই ব্যপারে কী বলবেন?
এর উত্তরে শেখ সা'ব কী বলতেন জানিনা। তবে সম্ভাবনা প্রচুর যে, তিনি ঐ সাংবাদিক পিটিয়ে বুঝিয়ে দিতেন তিনি কতটা গুন্ডা!

আমাদের কাল্পনিক সাক্ষাৎকারের জবাব কিন্তু শেখ সাহেব দিয়ে গেছেন। আসুন দেখি তিনি এই সংক্রান্ত ব্যপারে কী বলেন! তিনি এর প্রেক্ষিতে ৪ টি ঘটনা ও একটি উক্তি করে গেছেন আমাদের জন্য।

০১
"... আমি কিছু সংখ্যক ছাত্র নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। খবর যখন রটে গেল লীগ মন্ত্রিত্ব নাই , তখন দেখি টুপি ও পাগড়ী পরা মাড়োয়ারিরা বাজি পোড়াতে শুরু করেছে এবং হৈচৈ করতে আরম্ভ করেছে। সহ্য করতে না পেরে , আরো অনেক কর্মী ছিল, মাড়োয়ারিদের খুব মারপিট করলাম, ওরা ভাগতে শুরু করলো। জনাব মোহাম্মাদ আলী বাইরে এসে আমাকে ধরে ফেললেন এবং সকলকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন॥" - (অসমাপ্ত আত্মজীবনী / পৃ: ৩৩)

০২
"... কাউন্সিল সভা যখন শুরু হল, মওলানা আকরম খাঁ সাহেব কিছু সময় বক্তৃতা করলেন। তারপরই আবুল হাশিম সাহেব সেক্রেটারি হিসেবে বক্তৃতা দিতে উঠলেন। কিছু সময় বক্তৃতা দেওয়ার পরই নাজিমুদ্দিন সাহেবের দলের কয়েকজন তার বক্তৃতার সময় গোলমাল করতে আরম্ভ করলেন। আমরাও তার প্রতিবাদ করলাম, সাথে সাথে গন্ডগোল শুরু হয়ে গেল। সমস্ত যুবক সদস্যই ছিল শহীদ সাহেবের দলে, আমাদের সাথে টিকবে কেমন করে! নাজিমুদ্দিন সাহেবকে কেউ কিছু বললো না। তবে তার দলের সকলেরই কিছু কিছু মারপিট কপালে জুটেছিল।

আমি ও আমার বন্ধু আজিজ সাহেব দেখলাম, শাহ আজিজুর রহমান সাহেব ছাত্রলীগের ফাইল নিয়ে নাজিমুদ্দিন সাহেবের পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ও আজিজ পরামর্শ করছি শাহ সাহেবের কাছ থেকে এই খাতাগুলি কেড়ে নিতে হবে, আমাদের ছাত্রলীগের কাজে সাহায্য হবে। নাজিমুদ্দিন সাহেব যখন চলে যাচ্ছিলেন, শাহ সাহেবও রওয়ানা করলেন, আজিজ তাঁকে ধরে ফেলল। আমি খাতাগুলি কেড়ে নিয়ে বললাম, কথা বলবেন না, চলে যাবেন॥" - (অসমাপ্ত আত্মজীবনী / পৃ: ৪৪)

০৩
"... শহীদ সাহেব আসছেন, তাকে সংবর্ধনা দিব, যদি কেউ পারে যেন মোকাবেলা করে। আমি রাতে লোক পাঠিয়ে দিলাম। যেদিন দুপুরে শহীদ সাহেব আসবেন সেদিন সকালে কয়েক হাজার লোক সড়কি, বল্লম, দেশী অস্ত্র নিয়ে হাযির হল। সালাম সাহেবের লোকজনও এসেছিল। তিনি বাঁধা দেবার চেষ্টা করেন নাই। তবে, শহীদ সাহেব, হাশিম সাহেব ও লাল মিয়া সাহেবের বক্তৃতা হয়ে গেলে সালাম সাহেব যখন বক্তৃতা করতে উঠলেন তখন 'সালাম সাহেব জিন্দাবাদ' দিলেই আমাদের লোকেরা 'মূর্দাবাদ' দিয়ে উঠল। দুই পক্ষে গোলমাল শুরু হল।

শেষ পর্যন্ত সালাম সাহেবের লোকেরা চলে গেল। আমাদের লোকেরা তাদের পিছে ধাওয়া করল। শহীদ সাহেব মিটিং ছেড়ে দুই পক্ষের ভিতর ঢুকে পড়লেন। তখন দুই পক্ষের হাতেই ঢাল, তলোয়ার রয়েছে। কতজন খুন হবে ঠিক নাই। শহীদ সাহেব এইভাবে খালি হাতে দাঙ্গাকারী দুই দলের মধ্যে চলে আসতে পারেন দেখে সকলে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল॥" - (অসমাপ্ত আত্মজীবনী / পৃ: ৪৬)

০৪
"... একদিন নুরুদ্দিন, নুরুল আলম ও কাজী ইদ্রিস সাহেব আমাকে ডেকে পাঠালেন বেঙ্গল রেস্টুরেন্টে, আমার বাসার কাছে। জিজ্ঞাসা করলাম, 'ব্যাপার কি?' ওরা আমাকে বলল, 'সর্বনাশ হয়ে গেছে, আবুল হাশিম সাহেব প্রেস বিক্রি করে ফেলতে চান, আমরা চাঁদা তুলে প্রেস করেছি, মুখ দেখাব কি করে?' আমি বললাম, 'আমি কি করব?' সকলে বলল, 'তোমাকে বাঁধা দিতে হবে।' বললাম, 'আমি কেন বাঁধা দেব? আমি পাকিস্তানে চলে যাব আর কবে দেখা হবে ঠিক নাই। আমার প্রয়োজন কি? তোমরা হাশিম সাহেবের খলিফা, আমার নাম তো পূর্বেই কাটা গেছে, আর কেন?' সকলে বলল, 'তুমি বললেই আর ভয়েতে বিক্রি করবে না।' বললাম, 'ঠিক আছে আমি অনুরোধ করতে পারি।'

পরের দিন মিল্লাত প্রেসে গিয়ে হাশিম সাথে দেখা করি। পাশের ঘরে আমার সহকর্মীরা চুপ করে আছে, শুনবে আমাদের কথা। আমি খুব শান্তভাবে তাকে বললাম, 'প্রেসটা নাকি বিক্রি করবেন?' বললেন, 'উপায় কি? প্রত্যেক মাসেই লোকসান যাচ্ছে, কি করি? আর চালাবে কে?' আমি বললাম, 'খন্দকার নুরুল আলম তো ম্যানেজার হয়ে এতকাল চালাল। খরচ কমিয়ে ফেলল। প্রেসটা বিক্রি করে দিলে কর্মচারীদের থাকবে কি? আর আমরা মুখ দেখাতে পারব না। সমস্ত বাংলাদেশ থেকে চাঁদা তুলেছি, লোকে আমাদের গালি দিবে।'

হাশিম সাহেব হঠাৎ রাগ করে ফেললেন এবং বললেন, 'আমাকে বেচতেই হবে, কারণ দেনা শোধ করবে কে?' আমি বললাম, 'কয়েকমাস পূর্বে যে প্রেসটা বিক্রি হল তাতে দেনা শোধ হয় নাই?' তিন ভীষণ রেগে গেলেন, আমারও রাগ হল। উঠে আসার সময় বলে এলাম, 'প্রেস বিক্রি করতে গেলে আমি বাঁধা দেব, দেখি কে আসে এই মিল্লাত প্রেসে?' হাশিম সাহেব খুব দু:খ পেলেন আমার কথায়।

পরের দিন ঐ বন্ধুরা আবার আমার কাছে এসে বলল, 'হাশিম সাহেব খানা খান না। শুধু বলেন, মুজিব আমাকে অপমান করল। তুই আবার দেখা কর, আর বলে দে, যা ভাল বোঝেন করেন।' আমি বললাম, 'তোমরা খেলা পেয়েছ?" - (অসমাপ্ত আত্মজীবনী / পৃ: ৭৯)

০৫
"... শামসুল হক সাহেব ও আমি দুইজনই একগুঁয়ে ছিলাম। দরকার হলে সমানে হাতও চালাতে পারতাম আর এটা আমার ছোটকাল থেকে বদ অভ্যাস ছিল॥" - (অসমাপ্ত আত্মজীবনী / পৃ: ৯৫)

পঠিত : ৪৭৭ বার

মন্তব্য: ০