Alapon

আসুন জেনে নেই, অলসতা দূর করার কয়েকটি সহজ উপায়...


আমার এক বন্ধু আছে, যে বিশেষ জ্ঞানী ও জানাশোনা মানুষ। তার জ্ঞানের বহর আর জানাশোনার মাত্রা দেখে আমরা একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন একসঙ্গে থাকার পর উপলব্ধি করলাম, তার সঙ্গে আমি থাকতে পারবো না। কারণ, সে মহা অলস! তার অলসতার মাত্রা এতোই ভয়াবহ যে, তা বিরক্তিকর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। যেমন, দুপুরে বুয়া আসেনি। সে চাইলেই ভাত রান্না করে একটা ডিম ভাজি করে খেয়ে ফেলতে পারতো। কিন্তু সে কিছুই করবে না। চুপচাপ শুয়ে থাকবে অথবা ফেসবুকে স্ক্রলিং করবে। আর বাজার খরচ করার কথা বললে সে বলতো, আজ বাজার না করলে হয় না! চল আজ আমরা রোজা রাখি। কাল বাজার করা যাবে।

আমার দৃষ্টিতে আলস্যপনা এক ধরণের ছোঁয়াছে রোগ। তার সাথে আর কিছুদিন বসবাস করলে হয়তো আমার ভিতরেও আলস্যপনা ভর করতো। এখন যেমন কাজের সিডিউল ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনে মধ্যরাতেও কাপড় কাচি, অলসতা ভর করলে এটা আর পারবো না। তাই এক মাসের মধ্যেই আমরা দুজন ঠিকানা বদলে ফেললাম।

অলসতা কেউই পছন্দ করে না। অলস ব্যক্তি যত জ্ঞানীই হোক না কেন, অলসতা তার সমস্ত ভালো গুনগুলো নষ্ট করে ফেলে। আজ আমরা আলোচনা করব, কীভাবে অলসতা দূর করা যায়। চলুন তাহলে শুরু করা যাক-

১. আমরা অনেকেই মনে করি, কেবল ইচ্ছাশক্তির অভাবেই আমাদের উপর অলসতা ভর করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এই ধারণাটি সঠিক নয়। কেবল ইচ্ছাশক্তি দিয়ে অলসতা দূর করা যাবে না, সেই সাথে কাজের খারাপ দিকটা চিন্তা করা বাদ দিতে হবে। আমরা সাধারণ কোনো কাজ শুরুর আগে সেই কাজের খারাপ ও কষ্টকর দিকটা চিন্তা করি। এই কাজটা করলে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হবে। এমন চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। তাহলে সহজে অলসতা ভর করবে না। সেই সাথে ফেলে রাখা কাজে আপনার জন্য ইতিবাচক কোন বিষয়টি অপেক্ষা করছে সেটা চিন্তা করতে হবে। তাহলে অলসতা পালিয়ে গিয়ে সেখানে কাজের প্রতি আগ্রহের জন্ম নিবে।

২. অলসতা বা খামখেয়ালি করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। মনে করুন, আজ আপনার অফিসের অফ ডে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, আপনার একগাদা ময়লা কাপড় জমে আছে। সেগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু পরোক্ষণেই ভাবলেন, সেগুলো আর একটু পরেও করা যাবে। তার আগে ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক করে দেখি। এই নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে আপনার সময়গুলো কোন দিয়ে যে ফুরুত করে কেটে যাবে, বুঝতেই পারবেন না। এটাও অলসতা। তাই পরে করব, বা একটু পরে করছি- এমন চিন্তা মাথায় স্থায়ী হতে দেওয়া যাবে না। পরোক্ষণেই করে ফেলতে হবে। তাহলে অলসতা ভর করতে পারবে না।

৩. আমরা অনেক সময় নিজেরাই নিজের উপর প্রেশার ক্রিয়েট করি। কাজের প্রেশার চাপাই। যেমন ধরুন, আগামীকাল সকালে আপনার একটা জরুরী মিটিং আছে। তাই মিটিংয়ের প্রস্তুতি স্বরূপ আজ রাতেই ফাইল রেডি করে রাখুন। কাপড় স্ত্রী করার প্রয়োজন থাকলে সেটিও করে ফেলুন। কিন্তু সেগুলো যদি পরে করার চিন্তা করে বসে থাকেন, তাহলে আপনার মাথায় প্রেশার ক্রিয়েট হবে। ফলে কাজে অনীহা সৃষ্টি হবে।

৪. আমরা অনেকেই ভাবি, আগামী মাস অথবা আগামী নতুন বছর থেকে আমি অনেক গোছালো জীবন যাপন করবো। নিজেকে গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখবো, সাথে নিজের বাসাটাও পরিপাটি করব। কিন্তু আপনি জানেন কি, আপনার সেই আগামী মাস বা নতুন বছরটি কখনোই আসবে না। আপনি বরাবরের মতই অলস থাকবেন। তাই কোনো কাজ আগামী মাস বা নতুন বছরের জন্য অপেক্ষা না করে, তাৎক্ষনিক বাস্তবায়ন করুন। সিদ্ধান্ত নিন, আমি আজ এই মুহুর্ত থেকেই গোছালো জীবন যাপন করবো। আমি এখন থেকেই একজন গোফালো ও পরিপাটি মানুষ।

উপরের পরামর্শগুলো যদি মাথায় রেখে কাজ করেন, আশা করছি আপনাদের আশেপাশে আলস্যতা ভর করতে পারবে না। কিন্তু শরীরকে যদি একটু সুযোগ দেন, তাহলে আপনার পুরো দিনটাকে আলস্যতায় ভরিয়ে দিবে। আর আলস্যতা মানুষের ভালো গুনগুলো নষ্ট করে ফেলে। আপনি নিশ্চয়ই নিজের ভালো গুনগুলো নষ্ট করতে চাইবেন না। তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন...

পঠিত : ৪১৮ বার

মন্তব্য: ০