Alapon

কৃতজ্ঞ মানুষই সুখী মানুষ।

টাকা ভর্তি ড্রয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। পুরো ড্রয়ার জুড়ে টাকা। এরপর আরো একটি ড্রয়ার ওপেন করা হল। সেই ড্রয়ারও টাকায় ভরা। শুধু টাকা আর টাকা। আমি বিষ্ময়ভরা চোখ নিয়ে লোকটার দিকে তাকালাম। তিনি বললেন, ‘এতো খুবই সামান্য টাকা। ব্যাংকে এর চেয়ে আরো কয়েকগুন টাকা জমিয়ে রেখেছি। কিন্তু টাকাই কি সব!’


লোকটার দুই ছেলে। ‘লোক’ বলছি কারণ তাঁর সাথে আমার কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। কিন্তু আত্নার সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের খাতিরে আমি তাঁকে চাচা বলে ডাকতাম। তাঁর প্রায় শতবিঘা জমি আর বিরাট একটি ব্যবসা থাকলেও মনে শান্তি নেই। তাঁর দুই ছেলেই ভয়ানক রোগে আক্রান্ত।



দু’জনের চিকিৎসার জন্য তিনি কিছু নগট টাকা সবসময় আলমিরার ড্রয়ারে রেখে দেন। আর জমির চাষাবাদ এবং ব্যবসা থেকে আগত আরো কয়েকলাখ টাকা তিনি প্রতিনিয়ত ব্যাংকে জমা করে রাখছেন।


মাসজিদে যোহরের নামায শেষে একদিন তাঁকে বললাম, ‘চাচা, আপনি কি হতাশ? আপনার ভিতরে কি কখনো হতাশা কাজ করে না?’
তিনি হাসলেন। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন, ‘হয়তো এটাতেই কোন কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহতে বলেই দিয়েছেন ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই’। সেই পরীক্ষা দিচ্ছি। এখন পরীক্ষা দিতে এসে যদি হতাশ হয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকি তবে পাশ করব কিভাবে?’


রবার্ট ডেভিলা। আপনারা অনেকেই তাঁর নাম শুনে থাকবেন। যার কিনা ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত প্যারালাইজড। কিন্তু তাঁর বয়স মাত্র ৩০ কি ৩১ বছর। নার্সিং হোমের বিছানায় শুয়েই তিনি ঈমান আনলেন। এরপর প্রাকটিসিং মুসলিম হবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন।


উস্তাদ নুমান আলী খান তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনার ভিতরে কি কখনো হতাশা কাজ করে?’
জবাবে রবার্ট বলেছিলেন, ‘না! কখনোই না। হয়তো আমার এই অবস্থার কারণেই আমি দ্বীন ই্সলামের দেখা পেয়েছি। আর এজন্য আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কৃতজ্ঞ। আলহামদুলিল্লাহ।


কোন পিতার যদি হতাশ হবার অধিকার থাকতো তবে উপরেল্লেখিত হতভাগ্য পিতারই হয়তো রয়েছে। যিনি কিনা ড্রয়ার ভর্তি টাকা নিয়ে তাঁর দুই ছেলের ধীরে ধীরে নিঃশ্বেস হয়ে যাওয়া দেখছেন। হতাশ হবার অধিকার যদি কোন যুবকের থাকতো তবে হয়তো রবার্ট ডেভিলাকেই সেই অধিকারটি দেওয়া হত। কিন্তু সেই রবার্ট ডেভিলাও হতাশ নন। বরঞ্জ প্রতি মুহুর্তে তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে যাচ্ছেন।


এই দুইটি মানুষের চেয়ে আল্লাহপাক আমাদেরকে শতগুনে ভালো রেখেছেন। কিন্তু তারপরও সামান্য পরিমানে ক্ষতি দেখলেই আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। সিজিপিএ আশানরূপ না হলেই আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। নিজের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে আত্নহত্যার কথা ভাবি। আমরা সত্যিই বড়ই অকৃতজ্ঞ!


আমরা শুধুই উপরের দিকে তাকাতে পছন্দ করি। কিন্তু আমাদের নিচেও কিছু মানুষ আছে সেই কথা আমরা প্রায় ভুলেই যাই। তাই ভাল থাকতে চাইলে উপরের দিকে তাকাবেন না। আপনার নিচের মানুষের দিকে তাকান দেখবেন আপনার মন নিজে থেকেই বলছে, ‘ওহ আল্লাহ! আপনি আমাদের কতই না ভাল রেখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।’


পঠিত : ১১৬০ বার

মন্তব্য: ০