Alapon

বাঙালীরা ক্রিস্টোফার নোলানের এত ভক্ত কেন...?


আমার এই প্রশ্নের সম্ভাব্য বহু ব্যাখ্যা দাঁড় করানো সম্ভব। যদি আপনার কাছেও জানতে চাওয়া হয় তাহলে আপনিও অনেকগুলো থিওরি চোখের পলক পড়ার আগেই ভেবে ফেলতে পারবেন। এখন নোলানের ভক্তকুল সারাবিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। সম্প্রতি নোলানের ১১তম সিনেমা মুক্তি পেয়েছে 'Tenet'। কিন্তু কপাল খারাপ বলে আজ আমরা মুভিটা দেখতে পারছি। হলে গিয়ে দেখার পরিকল্পনা আমার মতো হয়তো অনেকেরই ছিলো, যা করোনার জন্য জলে ভেস্তে গেছে।

তবে আমরা, মানে বাংলাদেশীরা এই পরিচালকের কাজে কেন এতবেশি আকৃষ্ট? আগেই বলেছি, পয়েন্ট করে বলতে গেলে ১০০ টা কারণ বের করা যাবে। কিন্তু আমার মতে একটি বড় কারণ হচ্ছে, নোলানের সিনেমায় Intimate Scene বা অন্তরঙ্গ দৃশ্যের স্বল্পতা। হ্যাঁ, তার মুভিগুলো দেখলে খেয়াল করবেন যে, অধিকাংশ সব মুভিতেই তেমন Nudity বা নগ্নতা নেই বললেই চলে। বেশি হলে হয়তো দুই-একটা চুম্বন দৃশ্য থাকে, যেটা কখন এসে যে কখন চলে যাবে তার হদিস পাওয়া মুশকিল। মূলত কাহিনীর উপর নোলান এতটাই ফোকাস করেন যে, এসব অন্তরঙ্গ দৃশ্য দেয়ার প্রয়োজনীয়তা তিনি কখনোই মনে করেননি। বিষয়টা এজন্যই তোলা, কারণ প্রথমত নোলান একজন হলিউড পরিচালক এবং হলিউড মুভি মানেই কিছু ব্যক্তিগত দৃশ্য থাকবেই। যেখানে অন্য পরিচালকেরা মসলা হিসেবে এমন দৃশ্য ব্যবহার করছেন, সেদিকে ক্রিস নোলান কিভাবে জিরো গ্রেভিটিতে ফাইট করা যায়, কিভাবে অন্যগ্রহে গিয়ে ফাইট করা যায় বা গল্পের প্রয়োজনে কিভাবে সত্যিকার প্লেন ধ্বংস করা যায় ইত্যাদি চিন্তা করে থাকেন।

এখন আসি, এই অন্তরঙ্গতার সাথে বাঙালির সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে। আপনি যতই স্বাধীনতা বা মুক্তচিন্তার কথা বলুন না কেন, প্রতিটা দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। আমরা বিদেশীদের নগ্নতা দেখলেও নিজের দেশে এমন কোনো কনটেন্টকে সাপোর্ট করবো না যেখানে পশ্চিমাবিশ্বের মতো করে নগ্নতাকে তুলে ধরা হবে। সহজ কারণ, এসব আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না। সিনেমা তো ইরানের মতো মুসলিম দেশও তৈরি করে। তবে তারা নিজেদের সম্মানের জায়গাটা আক্ষুণ রেখেই কাজ করে।

ভালোবাসা দেখাতে হলে যে ইনটিমেট দৃশ্য দেখিয়েই বোঝাতে হবে, তা নয়। দুটি মানুষের আলাপচারিতা ও অনুভূতি বুঝিয়েও ভালোবাসার প্রদর্শন সম্ভব। মদ্দাকথা, যার দেশে যেমন। হলিউডে এমন দৃশ্য দেখানো ওদের অনুযায়ী খুব স্বাভাবিক, তবে আমাদের কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। অস্বস্তি হয় তখন, যখন আমরা এমন অন্তরঙ্গ মুহূর্ত আমাদের পরিবারের সাথে দেখি। যতই জ্ঞান দিন না কেন, এটাই বাস্তব। আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এমন কিছুর জন্য কখনোই প্রস্তুত নয়। এটাই আমাদের সংস্কৃতি, যেটা আমরা আমাদের দৈনিক জীবনে মেনে চলি। এসব কথা কারণ ছিলো, নোলানের মুভি। যেখানে আমরা কোনোপ্রকার এমন ব্যক্তিগত দৃশ্য নাই বরাবর দেখতে পাই। সেই হিসেবে , আমাদের সবারই কমবেশি ক্রিস নোলানের সিনেমাগুলো ভালো লাগে। কারণ, আমরা তার মুভিগুলো সহজেই সবার সঙ্গে বসে নির্দ্বিধায় দেখতে পারি, কাহিনী বুঝি আর না বুঝি। বলতে গেলে লোকটা, সার্বজনীন সিনেমা বানিয়ে থাকেন। যেটা সব মানসিকতার মানুষ বিনাভাবনায় দেখতে পারে।

সাধারণত, আমরা একটা মুভির পরিচয় দেই কোনো অভিনেতা বা অভিনেত্রী আছে, সেটা দেখে। যেমন, টাইটানিক দেখে নাই এমন বাঙালি কম, তবে এরই সাথে সিনেমার পরিচালকের নাম কি তা বলতে পারা মানুষের সংখ্যাও কমই। কিন্তু, নোলানের বেলায় এই থিওরি খাটে না। তার মুভিতে যেই থাকুক, আসল কথা এটা নোলানের মুভি। অর্থাৎ, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সবাই ক্রিস নোলানকে চিনে থাকি। তার অসাধারণ সিনেমা বানানোর দক্ষতা আমাদের সবাইকেই মুগ্ধ করে। কারণ, এই অসাধারণ মুভিগুলোতে এমন সব ছোটখাটো ব্যাপারগুলোও চিন্তা করা হয় যে, যা ভাবতে গেলে আপনিও বরার্ট প্যাটিনশনের মতো নোলানকে বলবেন "Genius"!

পঠিত : ৯৭১ বার

মন্তব্য: ০