Alapon

আজ নারীর সম্ভ্রমের চেয়ে কথিত ক্যারিয়ারের মূল্য অনেক চড়া...



সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি নেতিবাচক বিষয় বেশ ভাইরাল হয়েছে। যশোরে এক গাঁয়ে হলুদ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে লেডি বাইকার কনের পরপুরুষের সঙ্গে অসামাজিক বাইক মার্চ, চট্টগ্রামে গ্রেফতার হওয়া নেংটা বাবলু আর সাকিব আল হাসানের শিশু কন্যার ছবিতে অশোভন মন্তব্য। প্রতিটি বিষয়ই নাড়া দিয়েছে মানুষের চৈতন্যে , দেখা গিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

অপ্রত্যাশিত হলেও বাস্তবতা হচ্ছে লেডি বাইকার ফারহানার বিতর্কিত কাজটি তার নিজ ও শশুর বাড়ির মানুষেরা ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছে, বাইকারের পক্ষে সাফাই গাইতেও দেখা গেছে তার শশুড়কে। বাবলু নগ্ন হয়ে হুমকি দেয়ার কাজটিও করেছে তার মা, বড় ভাবীসহ বহু মানুষের সম্মুখেই, ক্রিকেটার সাকিবের শিশু কন্যার সূর্যমুখী ক্ষেতে তোলা ছবিটিতে পাট ক্ষেতে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য গুলোও পাবলিকলি রিয়েল আইডি থেকেই করা হয়েছে আর যারা করেছে তারা কেউ প্রথাগতভাবে শিক্ষাবঞ্চিত নয়, তারা সকলেই কলেজ-ভার্সিটি বা মাদ্রাসার স্টুডেন্ট।

তবে এই ঘটনাগুলো আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও দেশের বিদ্যমান সামাজিক বাস্তবতায় অস্বাভাবিক মনে হয়নি। বরং বেশ স্বাভাবিক মনে হয়েছে। বর্তমানে খবরের পাতা খুললেই দেখতে হয় পাতায় পাতায় ধর্ষণের সংবাদ। পরকিয়া, পরকিয়ার জেরে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন, স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন, মায়ের হাতে সন্তান খুন, আর সন্তানের হাতে মা খুন এখন অনেকটা স্বাভাবিক নিউজ। যা আমাদের প্রত্যহই দেখতে হচ্ছে, এবরশন পরবর্তী ডাস্টবিন হয়ে কুকুরের মুখে নবজাতকের লাশও এখন চোখ মেললেই নজরে আসে। জিনা ব্যভিচার হয়ে গেছে এখন খুব স্বাভাবিক ব্যাপারে, শত মাইল দূরে অনিরাপদ স্থানে যুবতী কন্যাকে সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য রেখে আসতেও এখন বাবা মায়ের অসুবিধা হয় না, আজ নারীর সম্ভ্রমের চেয়ে কথিত ক্যারিয়ারের মূল্য অনেক চড়া এই সমাজে। বাস্তবতা হচ্ছে বিয়ে করার চেয়ে জিনা করা অধিক সহজ গেছে। অপ্রিয় হলেও বলতে হচ্ছে বর্তমানে আমাদের সমাজ এক অসভ্য, অনৈতিক কামুক সমাজে পরিণত হয়েছে।

আমাদের সমাজ বাস্তবতা আজ থেকে ৪০ বছর আগেও এতোটা জঘন্য ছিলো না, ইভেন মাত্র ২০ বছর আগেও বর্তমানে চেয়ে আমাদের নৈতিক মান ঢের ভালো ছিলো। দিন যতই গড়াচ্ছে আমাদের নৈতিক স্খলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তা কাকতালীয় ভাবে ঘটছে না, বরং পরিকল্পিতভাবেই আমাদের সমাজ ও মূল্যবোধ ধ্বংস করা হচ্ছে।

বর্তমানে মানুষের চিন্তার জগত প্রধাণত নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষাব্যবস্থা ও মিডিয়া। আর এ দু'যায়গাতেই কমন যে কাজটি করা হচ্ছে তা হলো, আমাদের লজ্জা ধ্বংস করে দেয়া তথা নির্লজ্জ বানানো, পর্দা করা এখানে প্রথা আর বেপর্দা ও ফ্রি মিক্সিং হচ্ছে প্রগতি। আমরা সকলেই জানি লজ্জা না থাকলে মানুষ যে কোন কাজ করতে পারে, লজ্জাহীন মানুষ হয়ে যায় পশুর চেয়েও জঘন্য। কোন পাপ করতেই তখন আর নির্লজ্জকে কুন্ঠিত হতে হয় না।

বর্তমানে প্রতি মাসে অন্তত কয়েকশত নাটক রিলিজ হচ্ছে আর তা দেখলে মনে হবে বর্তমানে মানুষের খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই, কেবল প্রেম করা ছাড়া। ফ্রি মিক্সিং, বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতা ছড়িয়ে দিতে এই নাটক সিনেমার জুড়ি মেলা ভার। নারীকে সম্মানের স্থান থেকে নামিয়ে মিডিয়া ও পুঁজির অন্যতম পণ্যে পরিণত করা হয়েছে আর আমরাও তা বিনাবাক্যে মেনে নিয়েছি। আর নারীকে একশ্রেণীর পুরুষদের খেলনায় পরিণত করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে আমাদের শো কল্ড নারীবাদীরা।

সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা ও মিডিয়ার (নাটক, সিনেমা প্রভৃতি) মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের নৈতিক যে অধঃপতন ঘটানো হয়েছে ও হচ্ছে তা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো নাজুক হবে বলার অপেক্ষা রাখে না। আজকের লেডি বাইকার ফারহানা, নেংটা বাবলু বা কুরুচিপূর্ণ কমেন্টকারীরা সবাই কেবল এই নষ্ট সমাজের প্রতিচ্ছবি বা আউট পুট, কেউ মূল চালিকাশক্তি নয়। তাদের খারাপ কাজের সমালোচনা হওয়া প্রয়োজন তবে তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন যেই প্রডাকশন হাউজ থেকে এই ফারহানা-বাবলুরা তৈরি হচ্ছে তার সংশোধন। ইসলামহীন তথা নৈতিক মানদণ্ডহীন এই দানবীয় সংস্কৃতির গতিরোধ করা না গেলে আমাদের দিন থেকে দিন আরো চরম মূল্য দিতে হবে। আরো ছড়িয়ে পড়বে এই অনৈতিকতার বিষবাষ্প। ধ্বংস হবে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সংহতি। আর এই বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণের একটিই উপায়, তা হলো ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বকে ইসলামের আলোকে ঢেলে সাজানো, তা করতে ব্যর্থ হলে পৃথিবী হবে বসবাসের অনুপযোগী। আর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো ক্ষণজীবন ও মহাজীবনে।

- Monir

পঠিত : ৪৬৬ বার

মন্তব্য: ০