Alapon

আল্লাহর দ্বীনের পথে দান করার ফজিলত...


আল্লাহ তায়ালা বলেন - "যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।" (২:২৬১)

এখন এই যোগ্যতা অর্জন করতে হলে আপনাকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। আল্লাহ এই আয়াতে বলছেন হ্যাঁ, আমি তোমার দানকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে তোমাকে পুরস্কৃত করবো। কিন্তু তুমি আবার এই পুরস্কারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ো না। এখন, কোন জিনিস তোমার দানকে পুরস্কারের অনুপযুক্ত করে দিবে? তা হলো -

আল্লাহ তায়ালা বলেন - الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ - "যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।" (২:২৬২)

দান করার পরে যদি দুইটা অপরাধ - ১. ( مَنًّا) মান্নান ২. أَذًى (আঝান)

মান্নান এর অর্থ - অনুগ্রহ, অনুগ্রহকে পুনরায় গণনা করা। এর দ্বারা আসলে নির্দিষ্ট কিছু মনোভাবকে নির্দেশ করে। একটি সহজ উদাহরণ দেই। ধরুন, আপনার পরিবারের কোনো সদস্যের সাহায্য দরকার। অথবা ধরুন, আপনার সাহায্যের দরকার। এখন, আপনার চাচাতো-খালাতো ভাই বা চাচা-খালু কেউ একজন আপনাকে সাহায্য করলো।

এই টাকা দেওয়ার পর হঠাৎ করেই তারা আপনার সাথে ভিন্নভাবে আচরণ করা শুরু করলো। মনে হয় যেন টাকাটা দিয়ে তারা আপনাকে কিনে ফেলেছে। তারা এখন আপনাকে নিচু করে কথা বলে, সামান্য কিছুতেই অপমান করে বসে। আরো একটা ব্যাপার হল, তারা এখন সবকিছুতেই আপনার সাহায্য চায়। "তুমি কি আমার গাড়ির টায়ারটা পাল্টে দিতে পারবে? তুমি কি এটা করতে পারবে? ওটা করতে পারবে?"

এখন, আপনার মনের অবস্থা হলো, আপনি যেহেতু তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন..."আমি তো এখন না করতে পারি না। যদিও আমার শরীর ভালো যাচ্ছে না, অন্যান্য সমস্যা আছে। কারণ এতে হয়তো তারা বলে বসবে - ওহ! যখন টাকার দরকার ছিল তখন আমাদের দরকার ছিল। এখন, আমাদের সামান্য টায়ারটাও পাল্টে দিতে পারবে না!" আপনি ভাবছেন - "আমি এই ধরণের কোনো খোঁটা শুনতে চাই না। তাই, তারা যদি কোনো সাহায্য চায় আমার শরীর ভালো না থাকলেও আমি সাহায্য করি এবং করতেই থাকি। কারণ, আমি খোঁটা শুনতে চাই না।"

যদি তারা বুঝতে শুরু করে যে আমি আর তাদের কথা শুনছি না, তখনি তারা বলে বসে - "কিছু মানুষকে সাহায্য করলেও দেখেছো, তারা কিভাবে আচরণ করে।" তারা এমন ভাব ধরে যেন আপনি একজন প্রতারক। এভাবে তারা বার বার তাদের অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

আল্লাহ এখানে বলছেন যদি তুমি তোমার দানকে নষ্ট করতে না চাও তাহলে মানুষকে খোঁটা দিও না। মান্নান দ্বারা পাল্টা অনুগ্রহ আশা করাও বুঝায়। মানুষকে সাহায্য করার পর তাদের কাছ থেকে পাল্টা অনুগ্রহ আশা করবেন না। মসজিদের প্রেক্ষাপটে 'মান্নান' দ্বারা বুঝানো হতে পারে - কেউ হয়তো বিশাল অংকের একটা চেক মসজিদে দান করলো। এখন সেই লোক আস্তে করে বললো - "আমার মনে হয় এই ইমামকে ছাঁটাই করে নতুন একজন নিয়োগ করা দরকার। পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক দেওয়ার পর এটা জাস্ট আমার বিনীত মতামত।" না, এটা আপনার বিনীত অভিমত নয়। আপনি এখন এই চেকের মাধ্যেম কামনা করছেন আপনার মতামতকে যেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আপনি এটা অন্যদের উপর আরোপ করছেন।

এটা করতে পারবেন না। হয় আপনি এই টাকা আল্লাহকে দিয়েছেন অথবা প্রভাব-প্রতিপত্তির জন্য দিয়েছেন। আপনি বাছাই করুন। আপনার পক্ষে উভয়টা পাওয়া সম্ভব না। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন - إن الله طيب لا يقبل إلا طيباً - "আল্লাহ পবিত্র আর আল্লাহ পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না।" আপনি যদি এটা আল্লাহকে দিয়ে থাকেন তার মানে এটা ইতোমধ্যে ডিপোজিট হয়ে গিয়েছে। এর থেকে কোনো দুনিয়াবী উপকার আশা করতে পারেন না।

আর যদি পার্থিব উপকার কামনা করেন যেমন, স্বীকৃতি, প্রশংসা, প্রভাব, অনুগ্রহ, মানুষকে নিজ অনুগ্রহের কথা মনে করিয়ে দেওয়া, তাদেরকে ছোট করা তাহলে কংগ্রাচুলেশন! আপনি শুধু এই পুরস্কারই পাবেন। যখন আল্লাহর কাছে ফেরত যাবেন তখন এই দানের কিছুই পাবেন না।

[ অনুবাদকের সংযোজন: সাহাবীরা এই ব্যাপারটা খুব ভালো বুঝেছিলেন। আয়েশা (রা) যখন দান করতেন তখন কয়েনের মধ্যে সুগন্ধি মাখিয়ে নিতেন। এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলতেন - দানের টাকা সবার আগে আল্লাহর কাছে পৌঁছে, অভাবীর হাত স্পর্শ করার পূর্বে।]

-- নোমান আলী খান

পঠিত : ৬৭৭ বার

মন্তব্য: ০